তক
এক বছরের মেয়ে আপনের জন্য ঈদের জামা বানাতে ক’দিন আগে মার্কেটে গিয়ে কাপড় কিনে এনেছিলেন কণিকা। ছোট্ট জামায় ফুল তুলে দিতে কিনেছিলেন রঙিন সুতা। রোববার রাতে মায়ের বাসা থেকে নিয়ে আসেন সোনামুখী সুই। কিন্তু সন্দেহের কারণে রাতের আঁধারে ‘প্রাণপ্রিয়’ স্বামী গলাটিপে হত্যা করে মুছে দিয়েছে তার সব স্বপ্ন। কেড়ে নিয়েছে ছোট্ট সোনামণি আপনের মা ডাকার অধিকার।
কণিকার মা নাছিমা খাতুন জানান, ব্যবসা করার জন্য ক’দিন আগে তার কাছে ছয় লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছিল কণিকার স্বামী আলী হোসেন। ওই টাকা না দেয়ায় আলী হোসেন তার মেয়েকে ২
গলাটিপে হত্যা করেছে।
তবে কণিকার মামা আতিক জানান, আলী হোসেন দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়ে দুই মাস আগে দেশে ফিরে আসে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে স্ত্রীর সম্পর্কে নানা কথা শুনে সে কণিকাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ শুরু হয়।
এর জের ধরে আলী হোসেন তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করতে পারে।
খিলগাঁও থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন জানান, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে রোববার সকাল ৯টার দিকে ২১ পূর্ব গোড়ানের তালুকদার বাড়ির একটি তালাবদ্ধ কক্ষের দরজা ভেঙে কণিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার নাক-মুখে বালিশ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কণিকার বাবা আজগর আলী জানান, তিন বছর আগে আলী হোসেনের সঙ্গে কণিকার বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই সে সৌদিতে চলে যায়।
বছরদেড়েক আগে সেখান থেকে ফিরে এসে কয়েকদিন দেশে থেকে আবার বিদেশ চলে যায়। এক বছর আগে আপনের জন্ম হয়। স্বামী দেশে না থাকায় কণিকা তার শিশুসন্তানকে নিয়ে গোড়ান এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মাসদুয়েক আগে আলী হোসেন অনেকটা রিক্তহস্তে দেশে ফিরে আসে। এ অবস্থায় সেও শ্বশুরের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বসবাস শুরু করে।
চলতি মাসেই শ্বশুরবাড়ির কাছে দুই রুমের বাসাভাড়া নেয় আলী হোসেন।
প্রতিবেশীদের ভাষ্য, আর্থিক অনটন থাকলেও কণিকা-আলী হোসেনের দাম্পত্য সম্পর্ক ভালোই ছিল। তবে সম্প্রতি একটি দুষ্টচক্র কণিকা সম্পর্কে নানা কুৎসা রটানোর চেষ্টা করে। নানাজনের মুখে এসব কুৎসা শুনে আলী হোসেন স্ত্রীকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকদফা ঝগড়াও হয়।
গত শনিবারও এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে কণিকার মামা আতিক এসে মিটমাট করে দিয়ে যান।
কণিকার মা নাছিমা খাতুন জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মেয়ে আপনকে নিয়ে আলী হোসেন তাদের বাসায় আসে। সে বলে, ‘কণিকা ঘুমিয়ে আছে, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, আপনকে আপনাদের বাসায় রেখে গেলাম। কণিকা ঘুম থেকে উঠে ওকে নিয়ে যাবে। ’ এ সময় আলী হোসেন শাশুড়ির কাছ থেকে ৮০০ টাকা ধার নিয়ে যায়।
নাছিমার ভাষ্য, সকাল ১০টার পরও কণিকা বাসায় না আসায় তার সন্দেহ হয়। ছোট মেয়ে ইতিকে কণিকার বাসায় পাঠান। কিন্তু কিছু সময় পর ইতি ফিরে এসে জানায়, দরজায় তালা দেয়া, আপাকে অনেক ডাকাডাকি করেছি; কিন্তু সাড়া নেই। ইতির মুখে এ কথা শুনে তারা সবাই কণিকার বাসায় ছুটে যান। ঘরে জানালা দিয়ে দেখেন কণিকা মেঝেতে পড়ে আছে।
পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে।
[রসম। যঃঃঢ়://িি.িলধরলধরফরহ.পড়স/রসধমবং/ঁঢ়ষড়ধফবফথরসধমবং/৮৩০২০থংংটহঃরঃষবফ-১.লঢ়ম]
কণিকার ছোট বোন ইতি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, রোববার রাতে আপু তাদের বাসায় দুলাভাইকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। এ সময় দুই জনই ছিল হাসিখুশি। তারা ভুলেও কখনো ভাবেনি পাষ-টা এভাবে তার আপুর জীবন কেড়ে নেবে।
মৃত্যু কাকে বলে না বুঝলেও দীর্ঘ সময় মাকে পাশে না পেয়ে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে ছোট আপন। নানা-নানি ও খালাসহ নিকটাত্মীয়-স্বজনদের দিকে চেয়ে আছে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে। অবুঝ এ শিশুর কান্না থামানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে গোটা পরিবার।
এদিকে ঘটনার পর থেকে সন্দেহভাজন ঘাতক আলী হোসেন পলাতক। সকালের দিকে তার মোবাইল ফোন খোলা থাকলেও দুপুরের পর থেকে তা বন্ধ।
খিলগাঁও থানার সেকেন্ড অফিসার আসলাম জানান, আলী হোসেনকে ধরতে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ তার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।