মানুষের রোগ ও নিরাময়
মোঃ আছাদুজ্জামান মাসুম
ডি.এইচ.এম.এস.বি.এইচ.বি., ঢাকা।
০১১৯৫৩১৮০৪৬, ০১৭১৯২২০৬৪০
মানুষের রোগ ও নিরাময় সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে একথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আমাদের মানতেই হবে। আল্লাহ্তায়ালা রোগ দিয়েছেন পাশাপাশি সমস্ত রোগের নিরাময়ের ব্যাবস্থাও দিয়েছেন। তবে রোগ নিরাময়ের চাইতে রোগ প্রতিরোধ এর ব্যবস্থা করাই উত্তম (ঢ়ৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব). আমরা প্রথমত যদি পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ি এবং নামাজের আগে যদি ৫ বার মেসওয়াক করি তবে দেখবেন আশা করি আপনার শরীর, মন ও দাঁত এর উপর সুস্থতার প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করবেন প্রচুর পরিমাণে, দেখবেন শরীর ও মন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মুহুর্তেই।
রাস্তাঘাটে যখন আমরা চলাফেরা করি তখন ধূলাবালির প্রভাব এড়াতে আমরা নাকে মাস্ক জাতীয় কিছু একটা ব্যবহার করতে পারি, দেখবেন নিঃশ্বাসটাও বুক ভরে নিতে ইচ্ছে করবে। দালান যেমন ইটের পর ইট সাজিয়ে তৈরী তেমনি মানুষের শরীরটাও এক একটি কোষ দিয়ে তৈরী। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রত্যেকটি কোষের জন্য চাই বিশুদ্ধ অক্সিজেন, যা বিশুদ্ধ বাতাস থেকেই পাওয়া সম্ভব।
যে সব খাবার খেলে আপনার অস্বস্তিবোধ হয় সে সব খাবার বর্জন করবেন। মাঝে মাঝে শরীরটাকে বিষমুক্ত করতে রোজা রাখতে পারেন এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তনও আনতে পারেন যেমন তরল জাতীয় খাবার স্যুপ, পায়েস, দই, ভালমানের সেমাই ইত্যদি খাবেন।
ঝাল, মসলা, তেল, চর্বি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন। ঘরে তৈরী করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন, বাহিরের খাবার এড়িয়ে চলবেন। বেশী করে ক্যামিক্যাল মুক্ত টাটকা ছোট মাছ, শাকসব্জি, ফলমুল খাবেন। আসলে আল্লাহর বিধান লংঘন করি বলেই আমরা আজ খাবারে ভেজাল এবং পয়জন মিশাচ্ছি যার প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছে। তাই আমরা সবাই সবাইকে যেভাবে পারি সঠিক বিবেকটাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করি সৎ পরামর্শ ও বুদ্ধি দিয়ে।
সত্যি কথা বলা-মিথ্যা কথা পরিহার করা, খাবারে ভেজাল না দেয়া, অন্যের অনিষ্ট না করা, এসব চর্চা করতে হবে। কারণ এগুলোর সবগুলোই রোগের অন্তর্ভূক্ত।
হোমিওপ্যাথিতে একটা কথা আছে রোগ নয় রোগীর সেবা কর (ঞৎবধঃ ঃযব ঢ়ধঃরবহঃ হড়ঃ ঃযব ফরংবধংব). আসলে দেহ ও মন সবমিলিয়েই আমরা পুরো মানুষটা। রোগ হচ্ছে দেহ ও মনের সকল সমস্যার সমষ্টিগত রূপ। রোগ নামের যে কোন সমস্যা সম্পূর্ণ মানুষটাকেই আক্রান্ত করে।
আমাদের মনের মধ্যে যে জটিল ও কুটিল সমস্যা হচ্ছে যা প্যাথলজিতে ধরা পড়বে না, সেটাও রোগ। কাজেই রোগের নাম ধরে যে চিকিৎসা বর্তমান সমাজে প্রচলিত সেটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কারণ আমরা জ্ঞানানুসন্ধান থেকে দূরে সরে আছি। অথচ গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকের উচিত সমাজে সুস্থ থাকার জন্য জ্ঞান চর্চা করা এবং এর প্রচার প্রসার করা। অথচ আমরা অর্থ ও ক্ষমতার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি সারাবেলা, সারাদেশ জুড়ে।
হয়তো কেউ টাকার পাহাড় বানিয়েও অসুস্থ আবার একদল জীবিকা নির্বাহে অর্থ উপার্জনের জন্য অসুস্থ হয়ে আছি। অথচ এই শরীর ও মনটাকে যদি কলুষ মুক্ত রাখা যেত তাহলে আমরা সবাই সুস্থ, সুন্দর জীবন যাপন করতে পারতাম নির্দ্বিধায়। সমাজের খারাপ লোকদের কুপ্রভাব ভালদের উপরেও পড়ছে।
আমরা আজকে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, কিডনীর সমস্যা, ব্যাথা বেদনা, কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন রোগের নামে নানারকম সমস্যায় জর্জড়িত। আসলে এসব রোগের নামের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে সব লক্ষণ ফুটে উঠে যেমন- ঘণ ঘণ পানির পিপাসা, বারে বারে প্রসাব হওয়া, যৌন সমস্যা, বুকে ব্যাথা অনুভব হওয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কাজে কর্মে অস্বস্তি, কারো শুয়ে থাকলে সমস্যা, কারো হাঁটা চলা করলে সমস্যা এসবই হচ্ছে আসল রোগ।
রোগের নামধরে যে চিকিৎসা যেমন ধরুন দু’জনের জ্বর হয়েছে, বর্তমান প্রচলিত চিকিৎসায় হয়ত দু’জনের জন্য একই ঔষধ নির্বাচন হবে। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ঔষধে দু’জনের জন্য একই ঔষধ নির্বাচন হবেনা। কারণ হোমিওপ্যাথিতে রোগের অর্থ্যাৎ জ্বরের নাম ধরে চিকিৎসা হয়না। কারণ জ্বর হলে কারো পানির পিপাসা বেশী হতে পারে, কারো পানির পিপাসা কম থাকতে পারে। কারো শুয়ে থাকলে ভালো লাগে, কারো শুয়ে থাকলে খারাপ লাগে, কারো হাঁটা চলা করলে আরাম লাগে, কারো হাঁটা চলা করলে খারাপ লাগে।
কারো টক খেতে ইচ্ছে, কারো মিষ্টি খেতে ইচ্ছে, কারো ঝাল খেতে ইচ্ছে। জ্বর হয়েছে ঠিকই কিন্তু এসব বিভিন্ন সমস্যা বা লক্ষন এর উপর ভিত্তি করে এক একজনের ঔষধ এক এক রকম হবে।
অর্থ্যাৎ অন্যান্য চিকিৎসায় জ্বরের ঔষধ, ডায়রিয়ার ঔষধ, ডায়াবেটিস এর ঔষধ রোগের নাম ধরে ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ প্রয়োগ হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে রোগের নাম যাই হোক রোগীর শরীরে যত ধরনের সমস্যা হচ্ছে তার লক্ষণ সংগ্রহ করে রোগীলিপি তৈরী করতে হবে এবং তারপর একটামাত্র ঔষধ নির্বাচিত হবে এবং পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ চলবে পরবর্তী ঔষধ লাগবে কি লাগবে না। অর্থ্যাৎ সমস্যা একটা ভাল হলো তো আর একটা ভাল হলো না এরকম চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে নেই।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় একজন মানুষের ভিতরে তিল পরিমাণ সমস্যা থাকতে পারবেনা। অর্থ্যাৎ তিল বা সরিষা পরিমাণ হিংসা থাকলে যেমন আমরা ঈমানহারা কারণ ঐ তিল বা সরিষা পরিমাণ যে হিংসা, অহংকার হোমিওপ্যাথির ভাষায় ওটাও রোগ। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তিল বা সরিষা পরিমাণ হিংসাও ভাল করে দেয় আল্লাহর রহমতে।
যদি আল্লাহতায়ালার বিধান ও প্রকৃতির বিধান মেনে যদি কেউ ঔষধ ছাড়া ভালো থাকতে পারে সেটাই সর্বোত্তম পন্থা। আর যদি সবকিছু মানার পরেও কেউ রোগাগ্রস্থ হয় তার জন্য একমাত্র ঔষধই হচ্ছে হোমিওপ্যাথিক।
কারণ সব ধরনের সতর্ক পরীক্ষানিরীক্ষা ও যথাযথ অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকৃতির হোমিও বা সদৃশ নিয়মই একমাত্র আরোগ্য পদ্ধতি। এতদিন পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি এটা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।