আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যবচ্ছেদ

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
স্কালপেলে প্রজাপতির ডানার মতো নিজের ব্যবচ্ছেদ চলছিল। আদুরে হৃদপিণ্ড সারাতে গিয়ে টের পেলাম তার শরীরের ভিতরটা একেবারে শূণ্য। একটা যন্ত্রযানের টায়ারের মতো দৃঢ় অথচ মেলার বেলুনের মতোই কোমল। অপারেশনের লাইটে চিমটায় উঠে এসেছিল টায়ারের থলে, বাতাসের ছিদ্র। যেখানে আবেগে ফিনফিনে টিউব স্ফীত হয় আবার সঙ্কুচিত হয়।

ফুলে থাকা পাঁজরের বর্মে গাড়ি চলে দ্রুত। শত মাইল বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। বিশাল পর্বত চূড়ায় উঠে যায় প্রথম গিয়ারে। কত বছর আগে বিদ্যালয়ের বার্ষিকের ফলাফলের দিন দাঁড়িয়ে ছিলাম। শত শত নানান মডেলের গাড়ি আর ভেসপার মাঝে আমাকে তুলনা হচ্ছিলো।

হাওয়া কমে গিয়েছিল। দপ্তরী স্যাক্সোফোনে করুণ সুর বাজাচ্ছে । শিক্ষক কিরিচের মতো স্পোক খুলে ফলাফল বিঁধিয়ে দিয়েছে চাকায় চাকায় আর হুশ করে চুপসে গিয়েছিল আমার নরম বাতাসের থলি। অথচ শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে ভরে এনেছিলাম তাকে। বছর শেষে ছুটিতে মাতুলের বাসস্থানে রোদেলা দিন।

চা বাগানে ট্রাকটরে উঠেছি। ছায়া দিচ্ছে রেনট্রি। রোদ দিচ্ছে সূর্য। দৈত্যাকার চাকায় চালকের পাশে বসে পার হয়েছিলাম শমসের নগর টিগার্ডেন। সঙ্গে সঙ্গে বুকের সেই চামড়ার কক্ষটা বিশুদ্ধ বাতাসে টই টই করছিল।

সেই কেয়ারটেকারের মেয়েটি ছিল পাহাড়ী পথ। গাড়িটা তার বাড়ির সামনে ছুটে গিয়েছে কল্পনায়। চুপসানো পাঁজরে মোমবাতির সীলগালা করতে হয়েছে। সে সুরমারা এক একটা ভেন্টিলেশন মেশিন । সে সময় কি খুব সহজে সিলিন্ডার ভর্তি উড়ে আসতো? মিছিলে পাঁজর শক্ত হতো।

সামান্য তর্কে ফুসে উঠতো। অথচ কচ্ছপের বর্মের মতো সালফারের আস্তরণ ঝামাপাথরের সড়কে ফ্ল্যাট হয়ে যেত। পথচলতে দৃষ্টি বিনিময়ে পাংঞ্চার হয়েছে। ভলকানাইজড হয়েছে। সিলিকন গ্লুতে ক্রমাগত পট্টি দিয়ে দেয়া হয়েছে।

চিঠি অথবা অভিমানের ক্ষত সারিয়েছে সুস্মিত ব্যাণ্ডেজ। মাঝে মাঝে সারাই করতে হয়। অপারেশনের লাইটে ফুটে উঠেছে অজস্র স্ক্র্যাচ। বিবর্তণের স্ক্র্যাচ। উঁচু দালানে লিফটে উঠে হাঁপিয়ে যেতে হয়।

পরিবারের সুখে আবারও ফুলে উঠছে গাড়ির বর্তুল। মোসাহেব অধীনস্তরা স্তুতি ছুড়ে দিলে বুকের টায়ারের টিউব বাতাস ভরে যায়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে পিতার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই জানালে পুরো বাতাস বের হয়ে যায়। ভোরে বাতাসে জগিং করতে করতে ভরে নেয়া হয় পুর্ণ চাকার গোলক। এভাবে কত শতবার যে পূর্ণ হবে আর শূণ্য হবে এই চাকা কে জানে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।