বুধবারের সেনা অভিযানে কায়রোসহ বিভিন্ন শহরে মুরসি সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে অন্তত ৪২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপক প্রাণহানির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কায়রোয় বিক্ষোভ মিছিল ডেকেছে মুসলিম ব্রাদারহুড। ‘সেনা অভ্যুত্থান’ এর ইতি টানার অঙ্গীকার করেছে তারা। তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্রাদারহুড।
ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ এল-হাদ্দাদ তার টুইটার বার্তায় লেখেন, “আমরা সবসময়ই অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ থাকব।
অবিচল থাকব। সেনা অভ্যুত্থানের পতন না ঘটানো পর্যন্ত আমরা সামনে এগিয়ে যাব। ”
এক বিবৃতিতে ব্রাদারহুড বৃহস্পতিবার বিকালে আল-ইমাম মসজিদ থেকে পদযাত্রা শুরুর কর্মসূচি জানিয়েছে।
বুধবার ভয়াবহ সহিংসতার পর রাজধানীসহ অন্য ১০ টি প্রদেশে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা এবং সকাল-সন্ধ্যা কারফিউয়ে পরিস্থিতি আপাতত অনেকটাই শান্ত।
কিন্তু লাখ লাখ মুরসি সমর্থকের ক্ষোভের আগুন সেনাবাহিনী ছাইচাপা দিয়ে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ব্রাদারহুডের নতুন করে বিক্ষোভের ডাকে আরো একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার সেনাবাহিনী কায়রোয় দুটো বিক্ষোভ শিবির থেকে মুরসিপন্থিদেরকে উচ্ছেদ করে। সংঘর্ষ মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শহরে। সব মিলে নিহতের সংখ্যা বৃহস্পতিবার ৪২১ এবং আহত ৩ হাজার ৫শ’রও বেশি বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর মুসলিম ব্রাদারহুডের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি।
এরই মধ্যে নতুন এক খবরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, কায়রোর উত্তরপূর্বে একটি মসজিদে প্রায় ২৫০টি মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ খবর সত্য হলে নিহতের সংখ্যা ৪৬০ পেরোবে।
মিশরে ছয় সপ্তাহ আগে মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বুধবারের অভিযানে তৃতীয়দফায় গণহারে হত্যাযজ্ঞ চলেছে। ব্যাপক এ সেনা অভিযান অনেককেই হতবাক করেছে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাওয়ার লক্ষণও এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, তুরস্ক মিশরে সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের ওপর মিশর কর্তৃপক্ষের বলপ্রয়োগের ঘটনায় বান কি মুন মর্মাহত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন মিশরে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মিশরে ‘নিন্দনীয়’ এ ঘটনা দেশটিতে সম্প্রীতি গড়ে তোলার পথে সত্যিই এক বড় ধরনের ধাক্কা বলে অভিহিত করেন।
সহিংসতায় কোনো সমাধান আসবে না জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার রদবদল ও গণতন্ত্রের জন্য সব পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। ওদিকে, ফ্রান্স মিশরে অবিলম্বে দমনাভিযান বন্ধের আহ্বান জানায়।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান মিশরের সহিংসতাকে গণতন্ত্রে ফেরার পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন। জার্মানিও মিশর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছে।
তবে নিন্দার এ ঝড়ের মুখেও মিশরের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাজেম বেবলাওয়ি দমনাভিযানের সাফাই গেয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভ শিবির ভেঙে ফেলতে হয়েছে।
টিভিতে এক ভাষণে তিনি হতাহতের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জরুরি অবস্থা শিগগিরই তুলে নেয়া হবে বলে জানান।
মিশরের পুলিশ গত সোমবার ভোর থেকেই উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে সাময়িক পিছু হটে অভিযান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরই বুধবার দিনের প্রথমভাগে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।
মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতা ও নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মিশরজুড়ে পাঁচশ’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।