আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাফরের একদিন

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

শুক্রবার সকাল । ঘুম থেকে বেলা করে উঠলো আজকে জাফর । গতকাল রাত ১ টার পর বাসায় এসেছিল অফিস এর কাজ শেষ করে । জাফর একলাই থাকে ২ রুম এর ফ্ল্যাট বাসায় । ৬ তলার বাসায় সে থাকে ৫ তলায় ।

তাই এই ফ্লোর এ সারাদিনই একটা সুন্দর বাতাস খেলা করে । যা জাফরকে আন্দোলিত করে । ঝুল বারান্দায় যেয়ে বসলে বাতাসটা আরো বেশি ভাল লাগে জাফর এর । এই ৬ তলার বাসায় যারা থাকেন তাদের বেশির ভাগ ফ্ল্যাট এর মালিকদের সাথে আর তাদের পরিবারের সাথে ভাল একটা সম্পর্ক আছে জাফরের । নম্র, ভদ্র, উদ্দমী হিসেবে জাফরের সুনাম আছে ।

তার উপর ভাল প্রতিষ্ঠানে সে চাকরি করে । সবাই তাই তাকে সম্মান করে । ছুটির দিন গুলোতে জাফর ফ্ল্যাট এর যে কোন পরিবারের বাসায় যায় আর সময় কাটায় আড্ডা মেরে । এটা প্রতি শুক্রবার সে করে । যেহেতু সে আর সপ্তাহের ৬ টা দিন সময় পায় না তাই এই দিনটা বেছে নেয় সবার সাথে আনন্দে কাটিয়ে দিতে সারাটা দিন ।

আজকে বেলা করে ঘুম ভেঙ্গেছে তাই সে আজকে কোথাও না যেয়ে ঘরেই থাকতে চাইল । বের হতে কেন জানি আজ মন চাইছে না তার । এসব ভাবতে ভাবতেই তার ফ্ল্যাট এ বেল বেজে উঠল । জাফর একটূ অবাকই হল । কারণ এই সময় কেউ আসার কথা না ।

দুপুরে ১ টা বাজে এখন । সবাই নামাজ পরতে গেলেও আজকে জাফর যেতে পারে নি । আগ পিছ ভাবতে ভাবতেই লুকিং গ্লাস এ দেখল কে এসেছে । দেখেই যেন আরো অবাক হয়ে গেল। দরজার ও পাশে ৩ তলার রোমানা দাঁড়ানো ।

কিন্তু এই সময় তার আসার কথা না । জাফর এমন ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে দিল । রোমানা জাফরকে দেখে একটা সুন্দর হাসি দিল । জাফরও কুশলাদি বিনিময় করল । আর ভিতরে আসতে বলল ।

রোমানা ভিতরে না এসেই কথা বলতে লাগল জাফর এর সাথে । রোমানার বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক আগে । তার সংসারে ২ টা বাচ্চা । ২ টাই ছেলে । যদিও রোমানা আর তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল একটা মেয়ে হোক ।

কিন্তু সেটা হয়নি । তাই রোমানার স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না । তাদের সংসার যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে । শুধু ২ টা বাচ্চার জন্য কেউ আলাদা হতে পারছে না । এদিকে লোকমুখে শোনা যায় রোমানার স্বামী পরকীয়াতে লিপ্ত ।

রোমানা সব বুঝেও না বুঝার ভান করে আছে । স্বামী ও বলে নাই রোমানাকে । ২ জনের মনে তাই এখন একটা যুদ্ধ চলছে অবিরত । এমন সব কথা ভাবতে ভাবতেই জাফর রোমানেকে ভিতরের টেনে এনে বসিয়ে দিল সোফায় । রোমানার থেকে জাফর ৫ বছর এর বড় ।

তাই জাফর তাকে তুমি করে ডাকে । লোকমুখে শোনা যায় রোমানাও নাকি ইদানিং নানারকম লোকদের সাথে মিশছে । তার স্বামী বাসায় না থাকলে এড়া আসে প্রায় সময় । এটা জাফর বিশ্বাস করে নাই । কারণ সে রোমানা কে ভাল মেয়ে হিসেবেই জানে ।

২ জনের মধ্যে কথা চলছে । আজকে রোমানেকে কেমন জানি মলিন লাগছে । এটার কারণ জাফর জিজ্ঞেস করতেই রোমানা তার সামনেই কেদে দিল । জাফর এই অবস্থায় কি করবে সেটা ভেবে পেল না । তারপর ও সে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকল ।

এক সময় কান্না থামলে হঠাৎ করেই রোমানা জাফরকে জড়িয়ে ধরল । এতে জাফর অবাক হয়ে গেল । সে কোন মতেই ছাড়াতে পারল না রোমানার থেকে । রোমানা ও ছাড়ছে না জাফরকে । ফ্ল্যাট এর দরজা বন্ধ না করেই তারা কথা বলছিল ।

তাই কেউ এসে পড়লে ঢুকে পরতে পারে সেই সময় । হঠাৎ করেই ফ্ল্যাট এ প্রবেশ করল জাফর এর প্রেমিকা । জাফর এর সাথে তার সম্পর্ক ৫ বছর এর । এটা সবাই জানে । এমন কি রোমানাও জানে ।

রুম এ ঢুকেই একটা বিশাল ধাক্কা খেল যেন কানিজ(জাফর এর প্রেমিকা)। সে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে উঠল । জাফর হতচকিয়ে গেল এই ঘটনায় । সে তাকিয়ে দেখে কানিজ এর সাথে তার মা আর বাবাও এসেছে । এক ঝটকায় সে নিজেকে আলাদা করে নিল রোমানার কাছ থেকে ।

রোমানাও আস্তে করে বের হয়ে গেল জাফর এর ফ্ল্যাট থেকে । এদিকে লজ্জায় জাফর কিছু বলতে পারছে না কানিজ আর তার পরিবারের সামনে । কানিজ জাফরকে লম্পট আর চরিএহীন বলে গালি দিল । কোন মতেই জাফর বুঝাতে পারছে না তাদের যে এতে তার কোন হাত নেই । কানিজ এর সামনে যেতেই জোড়ে একটা চড় জাফর এর গালে বসিয়ে দিল সে।

কানিজ এর মা আর বাবাও ২ এক কথা শুনিয়ে দিল জাফরকে । কানিজ বলল, সে আসলে না বলেই আসতে চেয়েছিল জাফর এর কাছে । বাবা আর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য । আর এসে তারা যা দেখল তাতে সবাই ক্ষুব্ধ আর অবাক হল । কানিজ তার বাবা আর মায়ের কাছে ছোট হয়ে গেল ।

৫ বছর এর সম্পর্ক আর কানিজ রাখবে না জাফর এর সাথে । এটা জাফরকে জানিয়ে দিল । জাফর এর কোন কথা না শুনেই সেখান থেকে বিদায় নিল তারা । জাফর যেন হতবিহবল হয়ে গেল । কোন কিছু বলার ভাষা সে খুজে পেল না ।

এমন সময় রোমানে রুমে ঢুকলো । সে জাফরকে দেখে হাসতে লাগল । এতে জাফর এর খুব অবাক লাগল । আর খুব মেজাজ খারাপ হল । জাফর জানতে চাইল কেন সে তার এই ক্ষতি করল ।

রোমানা যা বলল তাতে জাফর এর পায়ের নিচে মাটি নাই এমন মনে হল। এটা আসলে রোমানা ইচ্ছা করেই করেছে । কারণ সে নিচ থেকে দেখতে পেয়েছিল যে কানিজ আসছে । তাই সে জাফর এর ফ্ল্যাট এ জেয়ে এই নাটক করেছিল । যাতে তাদের সুন্দর সম্পর্ক টা ভেঙ্গে যায় ।

কারণ সে জাফরকে পছন্দ করে । জাফর হাটু গেড়ে বসে পরল । কোন শক্তি সে পাচ্ছে না কথা বলার । তার এই অবস্থা দেখে রোমানা কিছু না বলে শুধু হাসতে হাসতে চলে গেল ফ্ল্যাট থেকে । এইবার জাফর বুঝতে পারল কেন রোমানাকে সবাই খারাপ চোখ এ দেখে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.