আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতিয়ার চরে চলছে এক নেতার শাসন!



চরে সবই হচ্ছে। মাঠ ভরা ধানের চাষ। জোয়ারের পানিতে ছোট নদী আর খালে মাছ ধরা। ভূমিহীন কৃষকের পরিবারে ফুটছে সুখের হাসি। এরপরও তাদের মনে শান্তি নেই।

আছে শুধু পরিশ্রমের ফসল ঘরে না তোলার আতংক। কারণ প্রায়ই তাদের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর ডাকাত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন হলেই তাদের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটতে থাকে। হাতিয়ার বিভিন্ন চরে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে দখল, ভাংচুর, লুটপাট আর লাশ গুমের অভিযোগের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে এলাকায় প্রায় দেড় লাখ একর জমির ধানের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ। এলাকায় নাসির বাহিনী ও মিয়া সিকদার-মুন্সীয়া চোরা বাহিনীর মধ্যে দখল ও পাল্টা দখলের খেলা।

চর নঙ্গলিয়া, নলেরচর, চর বাসার, কেরিং চর, জাহাজ্যার চরসহ প্রায় ১০টি চরের ভূমিহীন কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেছেন, সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর আশীর্বাদপুষ্ট ডাকাত বাহিনী চরে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও লাশগুমের রাজনীতি চালাচ্ছে। নাসির বাহিনীর বিপরীতে মিয়া সিকদার নামে একটি ডাকাত বাহিনীকে শক্তিশালী করে ঐ আওয়ামী লীগ নেতা চরে ক্ষমতা দখল করতে চায়। ভূমিহীন কৃষকদের এ অভিযোগের ব্যাপারে বুধবার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত দেড়মাস ধরে চরে কোন আওয়ামী লীগের কর্মী বা সমর্থকরা অবস্থান করছে না। আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। নাসির বাহিনীর হাতে ৭ জন নিখোঁজ হয়েছে।

নাসির বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক কারা নোয়াখালীর প্রশাসন তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে চরে অশান্তির জন্য কে দায়ী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চরের ভূমিহীন কৃষকরা শেখানো কথা বলছে। এ এলাকায় নাসির বাহিনী চরের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। চরে লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় সোমবার চর বাসারে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ভূমিহীন কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা চরের জমির ধানে চাঁদাবাজি ও লুটপাট বন্ধের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চান।

নলের চরের ইসলামপুর বাজারের ভূমিহীন কৃষক মিলন অভিযোগ করেন, তারা এতদিন শান্তিতে ছিল। বাসার মাঝি র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর নাসির কমান্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাসার মাঝির কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী। নাসির কমান্ডারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে না পেরে মোহাম্মদ আলী মিয়া সিকদারের গ্রুপকে দিয়ে চরে লুটপাট, ভাংচুর ও মানুষ খুনের রাজনীতি চালাচ্ছেন। এর জন্য তিনি রামগতি থেকে গিয়াস ডাকাত ও হাতিয়ার মাইজ্যা চরের মুন্সীয়া চোরা বাহিনীকে ভাড়া করে লেলিয়ে দিয়েছেন।

নলেরচরের দরবেশপুর বাজারের ভূমিহীন কৃষক নিজাম জানান, মিয়া সিকদার, মুন্সীয়া চোরা, গিয়াস ডাকাত-এসব বাহিনীর গডফাদার আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী। এবারে ধান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা চাঁদা উঠবে। এটার ভাগ বসাতেই মোহাম্মদ আলী ডাকাত বাহিনী দিয়ে চরে হামলা চালিয়েছে। এদিকে নোয়াখালীর স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর নঙ্গলিয়া, বয়ার চর, নলের চর ও কেরিং চরের বাসার মাঝির কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করতেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী। বাসার মাঝি র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার বাহিনীর নেতৃত্ব নেয় নাসির কেরানী।

এই নাসির কেরানীর কাছ থেকে সম্প্রতি ধানের ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মোহাম্মদ আলী। এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় নাসির বাহিনীকে হটাতে মিয়া সিকদার ও মুন্সীয়া চোরসহ বেশ কয়েকটি ডাকাত বাহিনী চরে হামলা, লুটপাট ও লাশ গুমের রাজনীতি শুরু করে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী বলেন, চরের ভূমিহীন কৃষকদের নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি তিনি করেন না। এলাকার নাসির কমান্ডার ভূমিহীন কৃষকদের জিম্মি করে রেখেছে। নাসির বাহিনী ৭ কৃষককে হত্যা করে এসব রাজনীতি শুরু করেছে।

অন্যদিকে বুধবার পুলিশের একটি দল নলেরচরের ইসলামপুর বাজারে নিখোঁজ ৭ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ ৭ জনের নাম-ঠিকানায় কিছু গরমিল রয়েছে। যে ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে তাদের দুইজনকে জীবিত হিসাবে সনাক্ত করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে জীবিত এই দুজন আদৌ নিখোঁজ ব্যক্তি কিনা এ বিষয়ে পুলিশ আরো তদন্ত করছে। নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ হাযারী বলেন, দুই সপ্তাহ পর চরে ধান কাটা শুরু হবে।

এ কারণে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐ সময় চরে জেলা পুলিশ, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, এপিবিএন এবং র‌্যাবের টহল থাকবে। প্রাথমিকভাবে বৃহস্পতিবার থেকে নঙ্গলিয়া চরের জনতার বাজারে একটি পুলিশ ক্যাম্প চালু হবে। দৈনিক ইত্তেফাক/নোয়াখালী ওয়েব/২১ অক্টোবর/আইএইচএম/০০১৫ঘ.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.