সত্যকে বলতে শিখুন.......
বহুল আলোচিত ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালীউর রহমানের বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। গত শুক্রবার সিলেটের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে সিলেট অঞ্চলে এর কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই বাঁধ নিয়ে দেশে ধূম্রজাল ছড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে আমাদের এখানে যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত হবে সে বছর ভারত পানি কম ছাড়বে, আর যে বছর বৃষ্টিপাত কম হবে সে বছর ভারত বেশি পানি ছাড়বে। এর ফলে আমাদেরই উপকার হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালীউর রহমানের বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন সিলেটের বিশিষ্টজনরা। তাঁরা তার বক্তব্যকে শিষ্টাচারে বহির্ভূত ও দেশের স্বার্থবিরোধী বলে বিবেচনা করছেন। তাঁদের মতে, তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের মত কথা বলছেন। সিলেটের বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে যুক্তি আছে। কারণ, রাষ্ট্রদূত সাবেক হোন কিংবা বর্তমানের- তার তো দেশের স্বার্থের পক্ষেই ভূমিকা রাখার কথা।
আর কোন রাষ্ট্রদূত যদি ভিন দেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলেন, তবে তাকে তো ওই দেশের রাষ্ট্রদূত বলেই মানুষের মনে হবে। টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে ওয়ালীউর রহমান যে ভাষায় কথা বলেছেন ঐ ভাষা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। কারণ, ঐ ভাষায় ইতঃপূর্বে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরা কথা বলেছেন। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর বাংলাদেশের মানুষ আর এ কথা বিশ্বাস করতে চায় না যে, ‘টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না, বরং উপকার হবে'। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মত ভারতের মনিপুর-মিজোরামের পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীরাও টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য ক্ষতি প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শুধু তাই নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে টিপাইমুখ বাঁধসহ বৃহৎ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে। এমনকি হরতালও পালিত হয়েছে। অথচ ভাটি এলাকার তথা বাংলাদেশের সচেতন মানুষ ঐ বাঁধের ক্ষতির কথা উচ্চারণ করায় তাদের স্বার্থান্বেষী ও ধূম্রজাল সৃষ্টিকারী বলে নিন্দাবাদ করলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালীউর রহমান। তাই জন মনে প্রশ্ন জেগেছে, ওয়ালীউর রহমানরা আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছেন?
সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, ভারতের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী জয়রাম রমেশ স্বয়ং বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আর অগ্রসর না হওয়ার জন্য যেখানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে অনুরোধ করলেন, সেখানে বাংলাদেশের কেউ ঐ বাঁধের পক্ষে গুণগান করেন কেমন করে? উল্লেখ্য যে, দিনকয়েক আগে ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী গণশুনানি শেষে দিল্লী ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে তিন পৃষ্ঠার এক চিঠিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃহৎ নদী বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অঞ্চলে নির্মীয়মাণ সব কয়টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ভাটি এলাকার সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করার ওপর জোর দেন।
এরপরও কি ওয়ালীউর রহমানের বয়ান বিশ্বাস করে আমাদের মেনে নিতে হবে যে, টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না, বরং উপকার হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।