আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমানুষের যন্ত্রনায় দিশেহারা কিছু মানুষ



গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা গৌরী সেনগুপ্তা (৭৫) অঝোরে চোখের পানি ছেড়ে একমাত্র পুত্র সন্তানের বাড়ি থেকে নিজের বিতাড়িত হওয়ার বর্ণনা দেয়ার সময়ও উপস্থিত সকলে কেদে উঠেন। ওই বৃদ্ধাশ্রমে তার মত আরও ৯৮ জন মহিলা রয়েছেন। তার মত আপনজন থেকেও সকলেই বঞ্চিত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই নিয়েছেন। ছেলেবেলায় সন্তানদের একমাত্র আশ্রয়স্থল পিতামাতা অথচ বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার আশ্রয়স্থল সন্তানরা কেন হয় না? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে গৌরী সেনগুপ্তাসহ অন্য বৃদ্ধারা কেঁদে ফেলেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে শুধু চোখের পানি ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই।

এটাই নিয়তি বলে গৌরী সেনগুপ্তা কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারে হেলে পড়েন। গৌরী সেনগুপ্তা চট্টগ্রাম শহরে দীর্ঘ জীবন কাটিয়েছেন। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার স্বামী সড়ক ও জনপথে চাকরি করতেন। বিয়ের ৪ বছর পর স্বামী তাকে ছেড়ে মির্জাপুরে এক নার্সকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন।

ঐ সময় গৌরী সেনগুপ্তার একমাত্র শিশু পুত্রের বয়স ৩ বছর। তিনি পুত্রকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নামেন। চাকরির পাশাপাশি পুত্রকে লেখাপড়া করান। ছেলেকে শিক্ষিত হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেন। একমাত্র পুত্র ব্যবসা শুরু করে।

একমাত্র পুত্র মায়ের দুর্দিনের সাথী হবে, মাকে বুকে জড়িয়ে রাখবে মা এমনটাই কামনা করেছিলেন। কিন্তু গৌরী সেনগুপ্তার কপালে সেই সুখ আসেনি। বৃদ্ধ বয়সে তার ভাগ্যে জুটছে একমাত্র পুত্রের হাতে নিপীড়ন ও নির্যাতন। গৌরী সেনগুপ্তা শান্ত স্বভাবের মানুষ। ১৯৯৫ সালে গৌরী সেন গুপ্তা চাকরি থেকে অবসর নেন।

এরপর থেকে পুত্রের স্বভাব ও চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে। তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর ভাতাসহ এক সঙ্গে তিন লাখ টাকা পান। এই টাকার জন্য একমাত্র পুত্র গৌরী সেনগুপ্তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের করে দিতো। চাকরি থাকাকালে পুত্রের এ স্বভাব ধরা পড়েনি।

বৃদ্ধা বয়সে তিনি পুত্রের বোঝা হয়ে পড়বেন মনে করে পুত্র তাকে বের করে দেয়ার জন্য এই নির্যাতন চালাতো বলে তিনি জানান। ঐ সময় চোখের জলে তার বুক ভেসে যায় এক সময়। শান্ত মা গৌরী সেন একমাত্র পুত্র ও বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এক ভাই ভারতে থাকেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ভারতে ভাইয়ের কাছে চলে যান।

কিন্তু সেখানে ভাইয়ের সংসারে তার ঠাঁই হয়নি। তিনি আলাদা বাসা ভাড়া করে শেষ সময় আপন ভাইয়ের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই আশাও তার পূরণ হয়নি। ভারত থেকে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশে এসে তিনি হয়ে যান নিঃসঙ্গ।

পরে এক হƒদয়বান ব্যক্তির সহায়তায় গাজীপুরে এই বৃদ্ধাশ্রমে তিনি ঠাঁই পান। বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল জাহিদ মুকুল ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সেবা যতেœ গৌরী সেনগুপ্তা অতীতের সকল নিপীড়ন নির্যাতন ভুলে গেছেন। জীবনের শেষ ঠিকানা এই বৃদ্ধাশ্রম বলে তিনি জানান। বি.দ্র: সামান্য কাটাছেড়া, সৌজন্যে ইত্তেফাক, প্রচারের জন্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.