বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d
এই তো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। রাত তখন প্রায় ১১ টা বাজে। রাতের খাওয়া খেয়ে বসে পেপার পড়ছিলাম। হঠাৎ খুব কান্নার শব্দ।
ফ্যানটাকে একটু বন্ধ করে কান দিলাম সেদিকটায়। হ্যাঁ, ঠিকই আছে। একজন মহিলার তীব্র কান্নার শব্দ।
আমার বাসার একেবারে শেষের ঘরটাতে আমার বাস। বাসার দেয়ালের ও পাশে কিছু ঘর উঠেছে।
সম্ভবতঃ সরকারী খাস জমি থাকাতে কিছু লোক ওটা দখল করে টেম্পুরারি ঘর করে ভাড়া দিয়েছে। যাইহোক, শব্দটা সেদিক থেকেই আসছিল। আমার স্ত্রীকে ডাকলাম। খেয়াল করতে বললাম। উনি বললেন, আমাদের বাসার পিছনের ডান পাশের ঘর থেকে শব্দটা আসছে।
কান্নার শব্দ শুনে মনে হলো কেউ মারা গেছেন।
মহিলাটি কাঁদছেন, গলা শুনে মনে হলো বয়স খুব বেশী হবে না। বেশ চিৎকার করেই কাঁদছেন। কিন্তু ওদিকটায় যাওয়ার কোন সরাসরি রাস্তা নেই। ইচ্ছা হচ্ছিল, বের হয়ে দেখে আসি।
তার কান্নার শব্দে আমাদের মনটা খুব ভারি হয়ে গিয়েছিল। আমার স্ত্রী না পেরে বাহির হলেন। উনি এসে জানালেন, সেই মহিলাটির বাড়ি থেকে খবর এসেছে। তার ভাই ইলেক্ট্রিক শক পেয়ে মারা গেছেন (দুঃখিত)। ওনাকে কোন ভাবেই সান্তনা দেয়া যাচ্ছে না।
কয়েকজন মহিলা তাকে সান্তনা দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করছেন।
কিন্তু আমার কথা, ঠিক এটা না। আমার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল একটা কথা শুনে। কথাটা শোনা যাচ্ছে, আমার বাসার ঠিক পিছনের ঘরটা থেকে। ঐ ঘরের ভিতর থেকে কেউ একজন পুরুষ মানুষ চিৎকার করে বলছে, "এত কানতাছোস কেন? কান্দার কি আছে? এখন কাইন্দা লাভ কি, আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়া গেছে, কুরান পর, দুয়া কর, সকাল হইলে ঐহানে যাইস, দেইখা আসিস।
" এই কথাটি সে বার বার সেই মহিলাকে শুনিয়ে শুনিয়ে রূঢ় ভাবে বলছে।
হ্যাঁ, এই কথাটি সে খারাপ বলেনি। কিন্তু এই কথাটি ঘটনার মুহুর্তে বলাটা কি সাজে? যে মানুষটার একটা আপনজন বিয়োগ হয়েছে, তার মনটা এখন কতটা ভারি সেটা আর কেউ না বুঝলে সেই মহিলাই বুঝছে। আমার মনে হচ্ছিল, যেয়ে সেই লোকটিকে বলে আসি, "মানবতা বলতে একটা ব্যাপার আছে। "
মনটা খুব খারাপ।
মানুষের কষ্ট সহ্য করতে কষ্ট হয়। ঐ মহিলার ভায়ের মৃত্যু সংবাদে যতটা না কষ্ট পেয়েছি তারচেয়ে কষ্ট পেয়েছি, সেই লোকের এই ধরনের অযাচিত কটুক্তি।
সৃষ্টিকর্তা সবার হেফাজত করুক, মৃতব্যাক্তিকে স্বর্গদান করুক আর মহিলার মনকে শান্ত করুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।