আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফটোওয়াক কিংবা পূজো মন্ডপ পরিদর্শন (পর্ব ১)

www.cameraman-blog.com/

১৪ই অক্টো্বর তারিখেই হয়ে গেল সামু ব্লগারদের ঘটনাবহুল প্রথম ফটোওয়াক। ঘটনা দিয়েই এর শুরু। এই ঐতিহাসিক ফটোওয়াকে অংশ নেয়ার জন্য ৪ জন বিশিষ্ট ব্লগার তাদের স্ব স্ব চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তামশা মনে করার কোন কারণ নেই। আইরিন সুলতানা ৩ দিন আগে রেজিগনেশন জমা দিয়েছেন, যদিও তার রেজিগনেশন এখনও নাকি গ্রহণ করা হয় নাই।

অফিস থেকে নাকি ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে আগামী রোববার পর্যন্ত, যাতে আইরিন মাথা ঠান্ডা করতে পারে। এর আগে বৃত্তবন্দি, শুভ্র নামের ছেলে আর বাংলাদেশ ফয়সল ঠিক একই কাজ করেছে যাতে এই ফটোওয়াক মিস না হয়। হ্যালো ! হ্যালো !! মাইক্রোফোন টেষ্টিং !!! থুক্কু ক্লিক ! ক্লিক !! ক্যামেরা টেষ্টিং !!! দ্বিতীয় ঘটনা আমার নিজের। ফটোওয়াকে আহবায়ক হিসেবে একটু আগেই উপস্থিত হওয়া দরকার ছিল। উত্তরা থেকে শাহবাগ যেতে দুই আড়াই ঘন্টাও লেগে যায় ইদানিং।

হিসাব করে আমি ঠিক করলাম ৮টায় বের হয়ে যাব, এরাউন্ড ১০টায় আমি পৌছে যাব। সেই মতো আমি ৫টায় উঠে গোসল করে, কিছুক্ষণ নেট ব্রাউজ করে ৭টার মধ্যে রেডি হয়ে নাশতা করতে বসলাম। বোন এসে জানাল অয়ন ক্লাসে যাবে। আমি ইচ্ছা করলে ওর সাথে গাড়ীতে যেতে পারি। দূলাভাই অফিসের কাজে খূলনা যাচ্ছে, সুতরাং গাড়ী শাহবাগে আমাকে নামিয়ে দিয়ে আসতে পারবে।

সুতরাং আমি নাশতা সেরে গাড়ীতে উঠলাম। ছবির হাটে নেমে মোবাইল বের করে দেখি সময় ৮:৫০। কি আর করা। ছবির হাটের চলমান স্থাপত্য কর্ম দেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করলাম। দুই কাপ চা খেলাম।

তাও দেখি সময় কাটে না। প্রথম আসলো বৃত্তবন্দি আর সবার শেষে আসলো যেমন ইকনোমিক্স। তখন ঘড়ির কাঁচা ১১টা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের ঐতিহাসিক ফটোওয়াক শুরু করতে পারলাম। সামনে রাষ্ট্রপ্রধান, পিছনে বাংলাদেশ ফয়সল এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে ৩ নারী ব্লগারকে কালপূরুষ'দা ক্যামেরা এনেছিলেন ২টা।

একটা ধার দিলো আইরিনকে। আর আইরিন ক্যামেরা হাতে পেয়েই শাটার টেপা শুরু করলো। শেষে তাকে বলা হলো বালিকা এইটা ডিজিটাল ক্যামেরা না, এক ফিল্মে ছবি নেয়া যায় ৩৬টা। কালপূরুষ'দা অবশ্য আশ্বস্থ করলেন এই বলে যে আরেকটা রোল দেয়া যাবে। আমরা উদ্যানের মধ্যে দিয়ে রমনা কালী মন্দিরের দিকে এগুতে থাকলাম।

পথে ফুল, প্রজাপতি, গাছ, ঘুমন্ত মা আর সন্তান সহ আরো অনেক কিছুর ছবি তুলতে ব্যস্ত হলো সবাই। আর্ট কলেজের ছাত্ররা দেখলাম শিল্প চর্চায় ব্যস্ত। আরো কিছুদূর এগুতেই দেখি রাস্তায় এক ফাজিল শুয়ে আছে লুঙ্গিটা কোমরের উপরে তুলে দিয়ে। ভাল করে খেয়াল করি নাই, ব্যাটার জননাঙ্গে মনে হয় কোন সমস্যা ছিল সেটাই সে প্রদর্শন করছিলো। আমি কিছুক্ষণ এক প্রজাপতির ছবি তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।

শেষে মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে আবার রওনা হলাম ... প্রজাপতি, প্রজাপতি কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। মা ঘুমাচ্ছে তার এক সন্তানকে নিয়ে, আরেকজন চেয়ে অসহায় দৃষ্টিতে অবশেষে রমনা কালী মন্দিরে পৌছে দেখি প্রতিমা বহু দূরে। আমার জুম (৫০ এমএম) এটা কাভার করবে না। শেষ পর্যন্ত অন্যদের দেখাদেখি জুতো খূলে পূজোর অংশে বেদীর কাছাকাছি চলে গেলাম। ছবি কিছু তুললাম।

তবে হিন্দু ধর্মালম্বিরা মনে হয় আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই টের পাচ্ছিলো যে আমরা হিন্দু না। যদিও কিছু বলে নাই। আমরা যখন রমনা কালী মন্দির থেকে বের হবো, ঠিক সেসময়েই আমাদের সাথে এসে জয়েন করলো একরামূল হ শামিম। এখান থেকে বের হয়ে আমরা রওনা হলাম শাঁখারী বাজারের দিকে ছয় রিক্সা নিয়ে, মোটমাট ১২ জন। পথে যানজটের কারণে অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।

আমি বুদ্ধি করে আমাদের রিক্সা নিয়ে গেলাম তাঁতী বাজারের মূখে, আমাদের পিছনে এসে হাজির যেমন ইকনোমিক্স আর তার বান্ধবী। আর বাংলাদেশ ফয়সল আর নিশো পথ হারিয়ে ফেললো আমাদের কাছাকাছি এসে। ওদের রিক্সাওয়ালা পূরানো ঢাকার কিছু চেনে না আবার ওরাও চেনে না। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ফোনাফুনির পর ওদের টিকির দেখা পাওয়া গেল। ফয়সল এসে জানাল একধরণের ১৮+ দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণেই মূলতঃ এই বিপত্তি।

এদিকে আইরিন, আহাদিল আর কালপূরুষ'দা জায়গামতো পৌছে বার বার ফোন করছেন। আমিও তাঁতী বাজারের ভিতর দিয়ে রওনা হলাম শাখারী বাজারের দিকে। পথে মাঝে মধ্যে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে নিচ্ছিলাম যাতে এই সরু গলির গোলক ধাঁধায় হারিয়ে না যাই। ফোনে কথা বলে কালপূরুষ'দাও বাকিদের নিয়ে রওনা হলেন আমাদের দিকে। কোন এক জায়গায় আমাদের দুই দলের দেখা হয়ে গেল।

এরমধ্যে ছবি তোলা হচ্ছিলো অনেক। লা জবাব শাখারী বাজার খূবই সরু একটা গলি। গলির মাঝেই বাঁশ আর কাঠ দিয়ে ৬/৭ ফিট উচু পাটাতন তৈরী করা হয়েছে। নিচ দিয়ে লোকজন মাথা নিচু করে পারাপার হচ্ছে আর পাটাতনের উপরে তৈরী করা হয়েছে মন্ডপ। সেখানেই স্থাপন করা হয়েছে দেবী দূর্গার প্রতিমা।

মাঝামাঝি জায়গায় সরু করে একটা সিড়ি রাখা হয়েছে, পূজারীরা উপরে উঠে পূজা দিচ্ছেন। শাখারী বাজারে প্রতি এক-দেড়শ গজ পরপরই এরকম পূজা মন্ডপ। তাঁতী বাজারে সংখ্যাটা একটু কম। কোন মন্ডপে হয়তো পূরোহিত মনত্র পাঠ করছেন তো পরের মন্ডপেই বাজছে হিন্দি গান। এটা আমার কাছে একটু অড লেগেছে।

ছোটবেলায় ময়মনসিংহে যেসব পূজা দেখেছি সেখানে সবসময়ই নানারকম ভক্তিমূলক গান বাজতে দেখেছি আর সন্ধ্যার পর আরতি সহ হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর একটা ব্যতিক্রম দেখলাম। ময়মনসিংহে পূজা দেখতে গেলে সেই আমলে লুচি-নিরামিষ বা খিচুরী খেতে দিত। এখানে সেরকম কোন ব্যবস্থা দেখলাম না। চিন্তা করে দেখলাম ঢাকায় আসলে এটা সম্ভবও না।

প্রসাদ হিসেবে দেখলাম ছোট ছোট চিনির মিষ্টি দিচ্ছে। অবশ্য আমি খূব একটা শিওর না ওটা প্রসাদ ছিল কিনা, তয়েকজনকে দেখলাম পূজো দিয়ে হাতে করে নিয়ে আসতে। সাপে বাজায় বীণ, নাচে কেবল মানুষ তা ধিন ধিন বৃত্তবন্দী শাঁখারী বাজার থেকে বের হয়ে কালপূরুষ'দা বললেন তিনি আমাদের নতুন একটা আইটেম খাওয়াবেন, যদি সেটা পাওয়া যায়। কেউ হেটে কেউবা রিক্সায় রওনা হলাম বাংলাবাজার টৌরাস্তার দিকে। আমি ভুল করে রাষ্ট্রপ্রধান আর ফয়সলকে নিয়ে হাজির হলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ওভার ব্রিজের কাছে।

পরে ফোন করে জানলাম দাদা গেছেন আরেক মোরে লালকুঠির কাছে ক্যাফে কর্নারে। আবারও হাটা। পৌছে দেখি সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য। প্রথমেই এলো পাঁকা পেঁপেঁ। সেটা শেষ হতেই এলো ক্র্যাম্ব চপ।

এটা নিয়ে আগেই একটা পোষ্ট দিয়েছি, তাই বিস্তারিত আর লিখলাম না। এরপর এলো ধূমায়িত চা। ১২ জনের মধ্যে মনে হয় ৯ জন চা খেলো। কে জানি কানের কাছে বলে উঠলো আইরিন নাকি কালো হয়ে যাবার চিন্তায় চা খায় না। এখান থেকে বের হতেই শামিম বিদায় নিলো।

ও এখন সমকালে চাকরি করছে বিকালের পালায়। আমরা হেটে রওনা হলাম আহসান মঞ্জিলের দিকে। পথে বৃষ্টি আমাদের বাধাগ্রস্ত করলো কিছুটা। দাদা এই সূযোগে পাটুয়াটুলির এক দোকান থেকে ভাবীর জন্য একটা কালো ঘড়ি কিনে ফেললেন কালো শাড়ীর সাথে পড়ার জন্য। আহসান মঞ্জিলের কাছে এসে বৃষ্টি বেড়ে গেল।

আমরা আশ্রয় নিলাম পাশের এক মার্কেটে। আর তখনই ফোনে বৃত্তবন্দীর কাছে জানলাম আহসান মঞ্জিল বন্ধ। দোষটা আমারই, এটা মাথাতেই আসে নাই। এরপর কিছুক্ষণ শলাপরামর্শ হলো কোথায় যাওয়া যায় - লালবাগ কেল্লা নাকি ঢাকেশ্বরী মন্দির। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো ঢাকেশ্বরী মন্দিরেই যাব।

কিন্তু কি মুশকিল, কোন রিক্সাই যেতে চায় না। খালি একটা ভ্যান দেখে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করে বসলো যাবে কিনা। ব্যাটা ভ্যানওয়ালা নিমেষেই রাজি। সবাই হৈ হৈ করতে করতে সেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রওনা হলাম ঢাকেশ্বরীর দিকে। নানা অলিগলি পেরিয়ে অবশেষে আমরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।

এর মধ্যে যীশুও আমাদের সাথে জয়েন করলো। এখানেও বেশ কিছু ছবি তোলা হলো। রমনা কালী মন্দিরের প্রবেশ পথ এখানে এক ফটো সাংবাদিকের কান্ড দেখলাম। সে ছবি তুলছিল বেদীর বাইরে থেকে, সামনে বেদীর উপর পূজারীরা আসছে যাচ্ছে। ব্যাটা সাংবাদিক বার বার একে তাকে "এই সরেন" "সামনে আসেন কেন" এই জাতীয় কথা বলছে।

আমি তার কান্ড দেখছিলাম। আমাকে তাকাতে দেখে বলে এই মোবাইল গুলার জ্বালায় ছবি তোলা দায়। আমি তাকে বললাম ওরা আসছে পূজা করতে আর আপনি আসছেন ছবি তুলতে। এভাবে আপনি বলতে পারেন না। ছবি তোলার ইচ্ছা থাকলে জুতা খূলে উপরে উঠে গিয়ে ছবি তুলেন।

আমার কথা শুনে আমার দিকে কতক্ষণ কটমট করে চেয়ে থেকে সরে গেল লোকটা। এরপর বিদায়ের পালা। কয়েকটা গ্রুপ ছবি তোলা হলো। যেমন ইকনোমিক্স দেখি সবার ইমেইল এড্রেস আর ফোন নাম্বার কালেক্ট করছে। সব শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর দাদা বিদায় নিয়ে চলে এলাম আজিমপূর, উত্তরার বাস ধরার জন্য।

কালকের ফটোওয়াকের সময় আমার যেটা মনে হয়েছে এই ১২-১৩ জন ব্লগারের মধ্যে মাত্র কয়েকজনেরই পূরান ঢাকা, পূজা ইত্যাদির ব্যাপারে জ্ঞান আছে, যদিও অন্যান্যদের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। আর এই ব্যাপক আগ্রহের কারণেই সবাই এসেছে। আমার নিজের খ্রীষ্টানদের বড়দিন বা বৌদ্ধদের মাঘী পূর্নিমা ইত্যাদির কোন অভিজ্ঞতাই নেই। ভাবছি এখন থেকে সব পালা পার্বনেই ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়বো। [এর পরের পর্বগুলো হবে একেবারেই ফটো ব্লগ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।