জানি না
প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খবরে নিত্যদিনই খুনখারাবিসহ নানা সন্ত্রাসী ঘটনার কথা প্রচারিত হচ্ছে। গত দু’দিনেই সারাদেশে ২৬ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়। এসবের মধ্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ছাড়াও মার্ডার, ডাবল মার্ডার, ট্রিপল মার্ডার, পরিকল্পিত খুন, খুনের পর লাশ গুম, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ফসল কেটে নেয়া, জমি-দোকান-বাজার-অফিস-ঘের-হল-বিল-পুকুর দখলের মতো ঘটনার শেষ নেই। এছাড়া দ্বিমুখী, ত্রিমুখী সংঘর্ষ, রগকাটা, হাত-পা কেটে ফেলা, চোখ তুলে নেয়ার মতো গা শিউরে ওঠার মত ঘটনাও রয়েছে। সরকারের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর বুকেই গত ৯ দিনে অন্তত ১৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
দেশব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতাকে মিছিলে হামলা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চার সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন, ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়েছে। অথচ পুলিশের নীরব ভূমিকার কথা পত্রপত্রিকায় জানা গেছে। দৃষ্কৃতকারী বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলা-পাল্টা হামলাই শুধু নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের হাতে নিহত ও নির্যাতিত হওয়ার ঘটনাও বেড়ে গেছে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে গত ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯০ জন নাগরিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে শিকার হওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে।
এ সময় পুলিশ তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছে ৮৭ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৫ জন। তাছাড়া তিন সাংবাদিক নিহত, ৬৬ জন আহত, ৪২ জন হুমকির সম্মুখীন এবং ৩৩ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনাও এ সময় ব্যাপক হারে বেড়েছে।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পেছনে ক্ষমতাসীনদের দায় কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বেশিরভাগ ঘটনার সঙ্গে শাসক দল ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীর জড়িত থাকার ব্যাপারটি মুখে স্বীকার করা না হলেও পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়।
তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। সাধারণ ক্ষমা ও রাজনৈতিক বিবেচনাসহ বিভিন্নভাবে বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৫০ হাজার বন্দি ছাড়া পেয়েছে। এদের অধিকাংশই খুন, রাহাজানি, অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ সম্পর্কিত মামলার আসামি। স্বল্প সময়ে এত বিপুলসংখ্যক আসামি ছাড়া পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেননি। নাটোরে গামা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি দেয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান খুন হওয়ার ঘটনায় এমন উদ্বেগ বেড়ে গেছে বহুগুণ।
ছাড়াপ্রাপ্ত আসামিদের ওপর পুলিশের নজরদারি রিপোর্ট প্রতি মাসে দেয়ার কথা থাকলেও তা পালিত হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের প্রভাবের ফলেই যে এমনটা হচ্ছে সে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। তাছাড়া আইন রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা শাসক দলের নেতাকর্মীদের মন জুগিয়ে চলতেই ব্যস্ত। অন্যথায় বদলিসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে পুলিশসহ অন্য সবাইকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে।
পুলিশের এমন ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। পুলিশকে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচালিত হওয়া নিয়েও তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ প্রধানও একই সুরে সুর মিলিয়েছেন। তার কথায়, মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এমনটি বলা যাবে না বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। চোখ বন্ধ করে বাস্তবতা অস্বীকারের এমন ঘটনায় বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। ক্ষমতাসীনদের মুখে পরিস্থিতি নিয়ে আত্মতৃপ্তির এমন ঢেঁকুর তোলা দেশকে কোন পরিণতির দিকে টেনে নেবে সেটা ভেবে দেখার বিষয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।