আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যান নিহত

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী"

বিএনপির মিছিলে আওয়ামী ও যুবলীগের হামলা, আহত ৩০ । । কাল হরতাল নাটোরের বনপাড়ায় বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত জনসভা উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নাটোরের চার সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩০ জন। আহত সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভাংচুর ও ছিনতাই করা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই বড়াইগ্রাম পৌর বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে। সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি কাল রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালসহ তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, প্রতিটি থানা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ এবং দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বনপাড়া পৌর বিএনপি মাসব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনাসভার আয়োজন করে। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সভা ও দুলুর আগমন উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্ল­­াহ নূর বাবুর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে বনপাড়া বাজারে আসলে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠি-সোঁটা ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অপর একটি মিছিল নিয়ে আক্রমণ চালায় বলে বিএনপি দাবী করেছে। এ সময় সানাউল্ল­াহ নূর বাবু, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল উদ্দিন আলী, উপজেলা যুবদল সভাপতি রফিক সরদার, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল আলিম ও মোজাম্মেল হকসহ অন্ততঃ ২৫ জন আহত হন।

নাটোর থেকে ঘটনাস্থলে ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের উপর সশস্ত্র কর্মীরা হামলা করে। এতে ডেসটিনি ও বাংলার চোখের নাটোর জেলা প্রতিনিধি শেখ তোফাজ্জল হোসেনের ডান পা ভেঙ্গে যায় এবং বাম হাত গুরুতরভাবে জখম হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নাটোর জেলা প্রতিনিধি নাসিম উদ্দিন ও এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান রানা আহম্মেদের মাথা ফেটে যায়। দিগন্তের ক্যামেরাম্যান লিমন হোসেনকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ঘটনার সময় বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা মোঃ ইসাহাক আলীকে বহনকারী মাইক্রোবাস ভাংচুর ও তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।

আহতদের মধ্যে সানাউল্ল­াহ নূর বাবুকে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে কিছু সময় পরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ৪ সাংবাদিকসহ অন্যদের নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় দুইটি টিভি ক্যামেরা ভাংচুর ও তিনটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় ঢাকা-রাজশাহী ও নাটোর-পাবনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বনপাড়া বাজারের সমস্ত দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। হামলাকারীরা রাস্তায় চলাচলকারী তিনটি মাইক্রোবাস, ৩টি প্রাইভেটকার ও ৭টি সিএনজি ট্যাক্সী, অটোবাইক ভাংচুর করে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, এ হামলার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

সংঘর্ষ শেষে দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে বড়াইগ্রাম পৌরসভা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শরিফুল হক মুক্তার নেতৃত্বে পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ হয়। ঘটনার পর নাটোরের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ ফটো, কো-অহ্বায়ক মুহিবুর রহমান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসেন ফকু গতকাল এক বিবৃতিতে সানাউল্লাহ নূর বাবুকে হত্যার তীব্র নিন্দা এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.