অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে সুদিনে ফিরেছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। অথচ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। এর উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদেরও কোনো উদ্যোগ নেই। কিন্তু কেন? প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা যখন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করি, তখন তার নির্মাণ আঙ্গিক, বিষয়বস্তু নির্বাচন ও প্রদর্শন ব্যবস্থায় দর্শকের রুচি ও দেখার সহজলভ্যতার বিষয়টি প্রাধান্য পেত। শুধু প্রেক্ষাগৃহে নয়, বিভিন্ন মিলনায়তনেও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হতো। এতে দর্শকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকত। অন্যদিকে জীবনঘনিষ্ঠ গল্প, বিষয়বস্তু ও মৌলিক নির্মাণ আঙ্গিকের কারণে চলচ্চিত্রগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হতো। বর্তমানে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু গল্প, নির্মাণ আর প্রদর্শনের আঙ্গিক পরিবর্তন হওয়ায় তা আর দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না।
মোরশেদুল ইসলাম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, 'বর্তমানে যারা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তারা সংগঠিত নয়। ফোরামের সদস্য না হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে নির্মাণ ও প্রদর্শন করছেন। এতে সামগ্রিকভাবে এ ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা ও সুফল পাওয়ার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না।' নির্মাতা আবু সাইয়িদ বলেন, 'বর্তমানে তরুণদের হাতে ভালো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ হলেও তা আগের মতো সমৃদ্ধ হচ্ছে না। কারণ কারিগরি দিক দিয়ে উন্নত হলেও এতে মানসম্মত গল্পের অভাব রয়েছে। তরুণরা কাজ করছে ঠিকই কিন্তু তাদের গবেষণা নেই। এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা দরকার। পাশাপাশি সরকারি অনুদানের পরিমাণও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।'
এ দেশে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ১৯৮৪ সালে। চলচ্চিত্রের শিরোনাম 'আগামী'। এটি নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। পরবর্তীতে তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ, তারেক শাহরিয়ার, শামীম আক্তার, মানজারে হাসিন মুরাদ, ইয়াসমিন কবির, নুরুল আলম আতিক, জাহিদুর রহমান অঞ্জন, রাশেদ চৌধুরী, আক্রাম খান, আবু সাইয়িদ প্রমুখরাও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসেন।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মৌলিকত্ব রক্ষায় ১৯৮৬ সালের ২৪ আগস্ট গঠন করা হয় 'বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম'। এটি হলো এ ধারার নির্মাতাদের সংগঠন। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে সংগঠনটির কার্যালয় খোলা হয়। মোট ২৩ সদস্য নিয়ে গঠিত ফোরামের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহিদুর রহমান অঞ্জন এবং রাশেদ চৌধুরী। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় প্রথম 'স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব' অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র অংশ নেয়। এদেশে চাকা, হুলিয়া, নরসুন্দর, আগামী, একাত্তরের যীশু সহ অসংখ্য দর্শক প্রিয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এগুলো দেশে-বিদেশে সম্মান কুড়িয়েছে। কিন্তু নব্বই দশকের শেষদিক থেকে কৌলীন্য হারাতে থাকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র । বর্তমানে এ জাতীয় চলচ্চিত্র প্রায় স্থবির হযে পড়েছে। চলচ্চিত্রবোদ্বারা বলছেন, নীতিমালা অনুযায়ী এগুলে এবং নির্মাতারা ঐক্যবদ্ধ হলে পূর্ণদৈর্ঘ্যের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেরও সুদিন ফিরবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।