ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ [এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি, জন্ম ২১ এপ্রিল, ১৯২৬] হচ্ছেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান রানী ও রাষ্ট্রপ্রধান। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছে : যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্স ও নেভিস। কমনওয়েলথ প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অফ ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন গত বছর।
ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি সমর্থ হলেন এই বিরল দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়ে দিতে। এর আগে দীর্ঘসময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি রানীর আসনে আসীন রানী এলিজাবেথ। সুদীর্ঘ ছয় দশক বিশ্ব অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে; প্রশ্নের ঊধের্্ব থেকে রানী এলিজাবেথ মানুষের কল্যাণে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬। পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। আর সে সময় ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের অদ্ভুত একটি দিনে জীবনটা বদলে যায় সেই রাজকন্যার।
সুদূর কেনিয়ায় বসে সেদিন শুনেন পিতা ব্রিটিশ রাজ ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু-সংবাদ। সেই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সে দিনই তিনি জেনে গিয়েছিলেন রানী হওয়ার সংবাদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তার মাথায় ওঠে রাজমুকুট। রানী হলেন এলিজাবেথ, সেই থেকে ব্রিটেনের জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় রানী হয়েই কাটিয়ে দিলেন ৬০টি বছর। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি এ বিরল দীর্ঘতম সিংহাসনে আসীন।
তার আমলে ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ জন প্রেসিডেন্ট ও ছয়জন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ। এলিজাবেথের দাম্পত্যসঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অফ এডিনবরা। তাদের চার সন্তান রয়েছে : চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড।
১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন।
১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। দীর্ঘ ৬ দশকের পথচলা তার জন্য খুব মসৃণ ছিল না। টেমসের জলধারার সঙ্গে সঙ্গে অনেক চড়াই-উৎরাই ছিল। বিশেষ করে ডায়নার বিচ্ছেদ, মৃত্যু ইত্যাদি কারণে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের জনপ্রিয়তা বেশ কমতে শুরু করেছিল।
কিন্তু ডায়নাপুত্র উইলিয়ামের বিয়ের পর থেকে সেই জনপ্রিয়তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সব কিছুর পরও রানী হচ্ছেন ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক। এলিজাবেথ বাংলাদেশেও এসেছিলেন। দুবার ঢাকায় এসেছেন তিনি। প্রথমবার এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আমলে।
১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১ সালে রানীর বিমান নেমেছিল পুরনো বিমানবন্দরে। ১৩ ফেব্রুয়ারি রানী বের হয়েছিলেন স্টিমারে বুড়িগঙ্গা ভ্রমণে। ভ্রমণ শেষে রানী যান আদমজী জুটমিলে। বিশ্বের মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার রানীকে জীবন্ত কিংবদন্তি বলা যেতেই পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।