এ যেন অভিসারে গিয়ে ব্যাকুল প্রতীক্ষায় প্রেয়সীর জন্য অস্থির হয়ে অপেক্ষা করা। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের ভক্তরাই জানেন, কী অসহ্য কয়েকটা মাস পার করতে হয় তাঁদের। সেই মে মাসে শেষ হয়েছে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের মৌসুম। প্রায় তিন মাসের বিরতি শেষে মহাসমারোহে শুরু হয়ে গেল আবার। শুরু হলো রোমাঞ্চ, শিহরণ, রাত জেগে ফুটবলে বিভোর হওয়া।
আগে চারটি প্রধান লিগেই থাকত সবার চোখ। এবার তারকার ভিড়ে ফ্রেঞ্চ ফুটবলেও রাখতে হবে নজর। এই পাঁচটি লিগ নিয়ে আমাদের নতুন ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বে আজ থাকছে লা লিগা—
সবার আগে রাদামেল ফ্যালকাও। তারপর একে একে আলভেরো নেগ্রেদো, রবার্ট সলদাদো। গত মৌসুমের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সেরা গোলদাতা স্প্যানিশ লিগ ছেড়ে গেছেন নতুন গন্তব্যে।
চলে গেছেন হিগুয়েইন, থিয়াগো, লরেন্তে, নাভাসের মতো খেলোয়াড়েরাও। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৭০ জনেরও বেশি।
স্প্যানিশ লিগে যেন তারা ঝরার মিছিল। যতটা তারকাদ্যুতি স্প্যানিশ লিগ হারিয়েছে, সেটা একাই পুষিয়ে দিতেই যেন সান্তোস থেকে উড়ে এসেছেন নেইমার! গ্যারেথ বেলকে আনার আপ্রাণ চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখছে না রিয়াল মাদ্রিদ। গত মৌসুমজুড়ে মরিনহোকে নিয়ে নানা সমালোচনা, বিতর্ক, মরিনহোর প্রস্থানের ফলাফল এই মৌসুমে ডাগআউটে নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
টিটো ভিলানোভার বিদায়ের পর এই প্রথম ‘স্থিতিশীল বার্সেলোনা’র টিকিটাকা অর্কেস্ট্রার নতুন কনডাক্টর আর্জেন্টিনার জেরার্ডো মার্টিনো। ভাঙা-গড়ার হাট যেন এবারের লা লিগা।
নেইমার! নেইমার! নেইমার! সম্ভবত এবারের স্প্যানিশ লিগের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নেইমার। রিয়ালের অঢেল অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করে সান্তোস থেকে ৫৭ মিলিয়ন ইউরোতে চলে এলেন বার্সেলোনায়। ইয়োহান ক্রুইফ, পেলের মতো কিংবদন্তিরা সন্দিহান।
নিঃসংশয় ভক্তরা। কিছুদিন ধরে বহুল চর্চিত মেসি-নেইমার জুটির রসায়ন এবার ঠিক বোঝা যাবে মাঠে।
ডেভিড ভিয়ার বিদায়ের ফলে সহজেই তাঁর জায়গায় খেলতে পারছেন নেইমার। ভিয়া-মেসির জুটিটা ঠিক জমেনি। তবে বার্সা-ভক্তদের আশা, মেসি-নেইমার জুটি ত্রাস হয়েই দেখা দেবে প্রতিপক্ষের রক্ষণে।
বিশ্বের যেকোনো ডিফেন্সই চিড়ে-চ্যাপ্টা, ছিন্নভিন্ন করে ফেলার ক্ষমতা রাখেন দুজনই। মাঝমাঠে থিয়াগোর শূন্যতা হয়তো টের পাবে বার্সা। জাভি কিংবা ইনিয়েস্তাকে উঠিয়ে কাকে নামানো হবে, সেই মাথাব্যথা মার্টিনোর জন্যই তোলা থাক।
বিধ্বংসী আক্রমণভাগ এবং দুর্দান্ত মিডফিল্ডের পাশে বড্ডই বেমানান বার্সার দুর্বল ডিফেন্স। অনেক চেষ্টা করেও চেলসির ডেভিড লুইসকে আনতে পারেনি।
থিয়াগো সিলভাকে নিয়ে তো এক পশলা নাটকই হয়ে গেল। শেষমেশ মার্টিনো জানিয়েই দিয়েছেন, এই দলবদলের বাজারে সেন্টার ব্যাক অন্তত কিনছেন না। দেখা যাক, বার্সার রক্ষণ এবার কতটা অটুট থাকে।
রিয়াল যেখানে এক বেলকে পাওয়ার জন্যই ১০০-১২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে প্রস্তুত বলে খবর, সেখানে বার্সেলোনা ছাড়া লিগের অন্যান্য দলগুলো এ পর্যন্ত নতুন খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে সর্বসাকল্যে ১০১ মিলিয়ন ইউরোর মতো। এখান থেকে আরেকটি তথ্য পরিষ্কার, এবারও লিগটা হবে দুই ঘোড়ার রেস।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের মতো স্পেনের ফুটবলেও ‘বিকল্প তৃতীয় শক্তি’ খুবই মুখরোচক একটি আলোচনা। তবে রিয়াল-বার্সার বিকল্প এই মৌসুমেও কারও হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। গতবার অবশ্য অ্যাটলেটিকো ভালোই খেল দেখিয়েছিল। কিন্তু বাজির ঘোড়া ফ্যালকাওয়ের শূন্যতা বুড়ো ঘোড়া ভিয়াকে দিয়ে কতটা পূরণ করতে পারবে তারা, সেটাই দেখার।
এদিকে রোনালদো এখনো চুক্তিপত্র নবায়ন করেননি।
ফলে ধোঁয়াশা কাটছেই না। হিগুয়েইনের বিদায়ের ফলে আরেকজন স্ট্রাইকারের অভাব অনুভব করবে রিয়াল। তবে দলে স্প্যানিশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের সম্ভাবনাময় তারকা ইসকোর অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে স্কোয়াডটিকে আরও শক্তিশালী করেছে। গত মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ পারফরম্যান্স; বিশেষ করে এল-ক্লাসিকোর মতো ঝাঁজাল ম্যাচগুলোতে নজরকাড়া রাফায়েল ভারানের ওপর আরও বেশি আস্থা রাখতে পারেন আনচেলত্তি। প্রাক-মৌসুমে ৬টি জয় ও ১টি ড্র দিয়ে রিয়াল-যাত্রার প্রস্তুতিটাও ভালোমতোই সেরে রেখেছেন এই ইতালিয়ান।
তবে আনচেলত্তির কাছে রিয়ালের বেশি প্রত্যাশা থাকবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মরীচিকা হয়ে থাকা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাটা এনে দেওয়ার। খেলোয়াড়-কোচ দুই ভূমিকাতেই এই ট্রফি জেতার কৃতিত্ব আছে আনচেলত্তির।
২০১১-১২ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে ৫০ গোল, ২০১২-১৩ মৌসুমে ৩২ ম্যাচে ৪৬ গোলের পর এই মৌসুমেও পিচিচি ট্রফির সেরা দাবিদার মেসি। তবে এই আয়োজনে বাগড়া দেওয়ার জন্য নিশ্চিতভাবেই মুখিয়ে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। লড়াইটাকে ত্রিমুখী মাত্রা দিচ্ছেন নেইমার।
যদিও মেসির রাজত্বে এসে শুরুতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সতীর্থকে সাহায্য করতেই তাঁর বার্সায় আসা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সেরা নাকি স্প্যানিশ লিগ—এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই, এই মুহূর্তের বিশ্বের সেরা তিন খেলোয়াড়ের শিল্পকর্ম উপভোগ করতে চাইলে চোখ রাখতে হবে লা লিগার ক্যানভাসেই। রিয়াল বনাম বার্সা—এমন শ্বাসরোধী দ্বৈরথই বা আছে কোথায়!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।