আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানের দর্শন ও বিজ্ঞান তথা মুক্তবুদ্ধি চর্চা (পর্ব-১৩)

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র
ইবনে তুফায়েলঃ পরিচয় ও কর্মযজ্ঞঃ ইবনে তুফায়েলের পুরো নাম আবুবকর মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল মালিক ইবনে মুহাম্মদ ইবনে তুফায়েল আল কাইসি আল আন্দালুসি। তার জন্ম আন্দালুসিয়ার গুয়াডিক্সএ ১১০৫ সালে। পাশ্চাত্যে তিনি পরিচিত ছিলেন আবু বাকের আবেন তোফায়েল নামে। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, লেখক এবং ঔপন্যাসিক। এছাড়াও একজন সফল রাজনীতিবীদ হিসাবে তিনি দীর্ঘকাল গ্রানাডার গুরুত্বপূর্ণ প্রাশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।

মুসলিম পাশ্চাত্যের ত্রিরত্নের দ্বিতীয় হিসাবে পরিচিত এই মনিষী শুরুতে সেভিল ও কর্ডোভায় চিকিৎসাশাস্ত্র ও দর্শন অধ্যয়ন করেন। এসময় তিনি ইবনে বাজা’র শিষ্যত্ব লাভ করেন। এরপর তিনি দর্শন চর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং এবং চিকিৎসক হিসাবে গ্রানাডায় কর্ম জীবন শুরু করেন। অল্প সময়েই তিনি চিকিৎসব হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। গ্রানাডার গভর্নরএর সচিব হিসাবে তিনি প্রথম প্রাশাসনিক গুরুদায়িত্ব পালন করা শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তিনি তৎকালিন বিদ্যানুরাগী মুয়াহহিদ খলিফা আবু ইয়াকুবের পৃষ্টপোষকতা লাভ করেন এবং রাজকী চিকিৎসক হিসাবে নিয়োগ পান। বিদ্যানুরাগী এই খলিফার বন্ধুত্বেই ইবনে তুফায়েল চিকিৎসা শাস্ত্র এবং দর্শন চর্চায় নিশ্চিন্তে আত্মনিয়োগ করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অটোপসির পক্ষের শুরুর দিকের একজন সমর্থক। গুরুত্বপূর্ণ প্রাশাসনিক দায়িত্ব পালন সত্ত্বেও তিনি রচনা করে গেছেন তৎকালিন সময়ের দর্শন এবং বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু গ্রন্থ। কিন্তু ইবনে তুফায়লের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে গন্য করা হয় যেই পুস্তককে তা মুলত একটি উপন্যাস।

রুপক কাহিনীর অবলম্বনে দার্শনিক তত্ত্ব বিশেষ করে ওহি এবং যুক্তিবিচারের তুলনা করে তিনি লেখেন তাঁর অমর গ্রন্থ “হাই ইবনে ইয়াকজান”। মধ্য এবং আধুনিক যুগের প্রারম্ভে এই উপন্যাসের গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত ব্যাপক, শিল্পমানেও তা দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল অনন্যতা। ১১৮২ সালে বার্ধক্যজনিত তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসরে যাওয়ার সময় নিজের উত্তরসূরী হিসাবে নির্বাচিত করে যান ইবনে রুশদ’কে। ১১৮৫ সালে এই মহামনিষী মরোক্কতে মৃত্যুবরণ করেন।

ধর্ম ও দর্শনঃ ইবনে তুফায়লেরে দর্শন ও ধর্ম বিষয়ক ধ্যান ধারণা অনেকটাই মধ্যপন্থী। তিনি একিসাথে কঠোর বুদ্ধিবাদী পন্থায় দার্শনিক যুক্তি বিচার, অভিজ্ঞতাবাদী বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন, এবং সজ্ঞাপ্রসুত মরমিবাদের সমর্থক ছিলেন বা বলা যায় এই তিনি এই তিনের সামষ্টিক প্রয়োগে ভরসা রাখতেন। দর্শন, ধর্ম, নৈতিকতা, বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর মতামত তিনি বিধৃত করে গেছেন তাঁর সুবিখ্যাত হাই ইবনে ইয়াকজান নামক গ্রন্থে। হাই ইবনে ইয়াকজান নাম এর বাঙলা অর্থ দাঁড়ায় “সজাগ ব্যক্তির পুত্র জীবিত ব্যাক্তি”। এর আগে ইবনে সিনাও একি নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন।

এই দুই গ্রন্থের বিষয় বস্তুই দর্শন। তবে ইবনে তুফায়েলের হাই ইবনে ইয়াকজান শুধু দার্শনিক গ্রন্থই না বরং একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস। মূলত মরমী অভিজ্ঞতাকে প্রচলিত ভাষায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব না এমন চিন্তা করেই ইবনে তুফায়েল বর্ণনামূলক পদ্ধতি পরিহার করে গ্রহণ করেন রূপক পদ্ধতি। এই একটা মাত্র গ্রন্থের কারণে ইবনে তুফায়েল অমর হয়ে আছেন। হাই ইবনে ইয়াকজানের কাহিনীঃ মধ্যযুগীয় এই উপন্যাসের নায়ক হাই নামক এক ব্যাক্তি।

এই ব্যাক্তির জন্ম এক মানববসতিহীন নির্জন দ্বীপে। এক হরিণীর দুধ পান করে হাই বড় হতে থাকে। যৌবনে আকস্মিকভাবে একদিন লাঠির ব্যাবহার শেখে হাই, শেখে কিভাবে শিকার করে জীবন নির্বাহ করতে হবে। এক পর্যায়ে তার মাতৃতূল্য হরিণীর মৃত্যু ঘটে। শুরুতে স্বাভাবিক আবেগে আচ্ছন্ন হয় হাই, হয়ে পরে শোকবিহবল।

কিন্তু এক পর্যায়ে মৃত্যু রহস্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে ওঠে হাই। শুরুতেই সে বেছে নেয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, ধারাল পাথরের টুকরার সাহায্যে কেটেকুটে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হরিনের মৃতদেহ। বুঝতে পারে মানব শরীরের ক্রিয়াপক্রিয়া এবং হৃৎপিন্ডকে চিহ্নিত করে শরীরের মূল অঙ্গ হিসাবে যা থেমে গেলেই প্রাণশক্তি দেহত্যাগ করে, ফলে মৃত্যু ঘটে শরীরের। প্রথমবারের মতো সে আত্মা বা প্রাণশক্তির অস্তিত্ব বুঝতে সক্ষম হয়। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সে সমাহিত করে ঐ হরিণীকে।

এরপর শুরু হয় হাইএর দার্শনিক অনুধ্যান। দ্বীপের গাছপালা, প্রাকৃতিক প্রাচুর্য, খনিজদ্রব্য জীব জন্তু নিয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন করে এবং প্রকৃতির ক্রিয়াপরতা এবং নিয়মশৃঙ্খলার বৌদ্ধিক দার্শনিক বিশ্লেষন করে এক পর্যায়ে জ্ঞান বিজ্ঞানে সে উপস্থিত হলো এমন এক পর্যায়ে যে পর্যায়ে অল্পকিছু বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং সাধক পুরুষের পক্ষেই শুধু পৌছানো সম্ভব হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব সম্বন্ধে জ্ঞানের এক উচ্চ পর্যায়ে সে লাভ করলো মরমি অভিজ্ঞতা। অর্থাৎ শুরুতে বিজ্ঞান চর্চা, তারপরে দার্শনিক অনুধ্যান আর সবশেষে মরমি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সে উদঘাটন করতে সক্ষম হলো বিশ্বজগতের রহস্য, পৃথিবী ও নক্ষত্রমন্ডলির শ্রিঙ্খলা, জড় ও চিদাত্মার পার্থক্য, সব সৃষ্ঠির পেছনে এক বিশুদ্ধ এবং বিকারহীন পরমসত্ত্বা এবং চিদাত্মার সাথে সেই পরমসত্ত্বার সম্পর্ক ইত্যাদি। সেই সাথে নিজ বুদ্ধিতেই সে অর্জন করলো নৈতিক জ্ঞান, ভালো মন্দ, শুভ অশুভের ধারণা।

সে এও বুঝতে পারলো যে উন্নত জীবন যাপনের জন্য এই নৈতিক নিয়ম কানুন অনুযায়ী তাকে জীবনযাপন করতে হবে। এ পর্যায়ে পার্শবর্তী দ্বীপ থেকে আগমন ঘটে আফজাল নামে এক ব্যাক্তির। আফজালের কাছে হাই জানতে পারে যে আফজাল এবং পার্শবর্তী দ্বীপের বাসিন্দারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ঐ দ্বীপের লোকজনের অনৈতিক এবং ভোগবিলাসে মত্ত্ব জীবন যাপনে অতিষ্ট হয়ে আফজাল ঐ দ্বীপ ত্যাগ করে এই নির্জন দ্বীপে এসেছেন নির্জনে উপাসনা করার জন্য। হাই এবং আফজালের মধ্যে বন্ধুত্ব ঘটে।

আফজালের কাছে হাই শেখে মানুষের ভাষা, জানতে পারে সামাজিক মানুষের আচার অনুষ্ঠান সম্বন্ধে। আফজাল আবিস্কার করে যে কোন রকম ধর্ম শাস্ত্রীয় জ্ঞান ছাড়াই হাই অর্জন করেছে বিশ্ব, স্রষ্ঠা, আত্মা, নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান। ধর্মীয় বাহ্য আচার অনুষ্ঠান এবং কাহিনীর গন্ডি এড়িয়ে বিশ্বজগত এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে যতটুকু মৌলিক জ্ঞান পাওয়া যায় সেই মৌলিক জ্ঞানই হাই অর্জন করেছে সম্পূর্ণ দার্শনিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে। হাই এবং আফজাল দুজনেই এই স্বিদ্ধান্তে পৌছায় যে আফজালের ধর্মীয় জ্ঞান আর হাইএর দার্শনিক জ্ঞান চুড়ান্ত পর্যায়ে মূলত একই। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ ওহি বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে যেসব জ্ঞান এবং নৈতিকতা লাভ করে সেই একি জ্ঞান দার্শনিক অর্জন করতে পারেন বুদ্ধি বিচার খাটিয়ে।

বরং হাইএর পদ্ধতিতে পুরো বিষয়কে আরো সঠিক ভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়, ধর্মের বাহ্যিকতার পেছনের কারণকে অনুধাবন করা যায় বিশুদ্ধভাবে। এই সত্য উদঘাটন করার পর হাই এবং আফজাল দুজনেই গমন করেন পার্শ্ববর্তী দ্বীপে এবং সেখানে প্রচার করা শুরু করেন তাদের উদঘাটিত সত্য। কিন্তু মানুষের মাঝে এই সত্য প্রচার করতে গিয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় দুই বন্ধু। শেষ পর্যন্ত তারা স্বিদ্ধান্তে পৌছায় যে সত্য এবং জ্ঞানকে বিশুদ্ধ সত্য এবং জ্ঞান হিসাবে অনুধাবন করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাই। সাধারণ মানুষ জিজ্ঞাসু না, তারা সরলপ্রাণ এবং বিশ্বাসপ্রবণ।

এইকারণে নবী এবং পয়গম্বরদের প্রচারিত রূপক এবং কাল্পনিক আকর্ষনিয় কাহিনীর মাধ্যমে প্রচারিত ধর্মীয় জ্ঞান এবং নৈতিকতাই তাদের কাম্য। হাই ইবনে ইয়াকজানের মূল বক্তব্যঃ হাই ইবনে ইয়াকজানের মাধ্যমে তুফায়েল বোঝাতে চেয়েছেন যদি নবি পয়গম্বররা ধর্ম প্রচার নাও করতেন তবুও শুধুমাত্র বিচারবুদ্ধি খাটিয়ে প্রকৃতি, নৈতিকতা এবং বিশুদ্ধ সত্ত্বা সম্পর্কে একজন দার্শনিক মানুষ জ্ঞান লাভ করতে পারে। কিন্তু এই ধরণের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন সব মানুষের পক্ষে সম্ভব না, সম্ভব শুধু কিছু মুষ্টিমেয় জিজ্ঞাসু এবং অনুধ্যানী ব্যাক্তির পক্ষেই। সেই মুতাজিলাদের সময় থেকে যৌক্তিক বিচারবুদ্ধিকে ওহির সমান মর্যাদা দেয়ার যে আন্দোলন করে আসছিলেন মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন দার্শনিক বিজ্ঞানীরা তারই ধারাবাহিকতায় ইবনে তুফায়েল রচনা করেন হাই ইবনে ইয়াকজানের মতো শিল্পীত দার্শনিক বয়ান। তবে তাঁর আগের বহু মুসলিম দার্শনিক যেখানে দার্শনিক অনুধ্যানকে ওহির চেয়ে উচ্চ মর্যাদা দিতে চেয়েছেন, তুফায়েল সেখানে চেষ্টা করেছেন এ দুইয়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে।

মনে রাখতে হবে, এটা ছিল এমন একটা সময় যখন মুসলিম দুনিয়ায় জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় অবক্ষয়ের শুরু হয়ে গেছে, এবং দার্শনিকদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্টি সংজ্ঞবদ্ধ আক্রমন পরিচালনা করছে, গাজালির তাহাফুত আল ফালাসিফা তখন একটি প্রভাবশালী গ্রন্থ। এই কারণে হাই ইবনে ইয়াকজানে খানিকটা কৈফিয়তমূলক স্বর লক্ষ্য করা যায়। তুফায়েল বলতে চান যে সাধারণ মানুষের জন্য শরিয়ত পালনই ধর্ম আর দার্শনিকদের জন্য দর্শন চর্চাই ধর্ম। এ দুইয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নাই, অর্থাৎ দার্শনিকরা ধর্মবিরোধী না। কিন্তু সেইসাথে তুফায়েল শাস্ত্রীয় ধর্মান্ধদের জ্ঞান বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা, কান্ডজ্ঞানহীনতা আর ভাবালুতার সমালোচনা করতেও ছাড়েন নাই।

ইবনে তুফায়েলের পক্ষ বিপক্ষঃ নিজের পূর্বজদের মতো বিপূল পরিমান গ্রন্থ রচনা না করলেও শুধুমাত্র মুসলিম জ্ঞান চর্চায়ই না বরং ইউরোপিয় জ্ঞান চিন্তায় ইবনে তুফায়েলের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইবনে তুফায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিলেন খলিফা আবু ইয়াকুব ইউসুফ ( শাসনকাল ১১৬৩-১১৮৪)। খলিফা নিজে ছিলেন অত্যন্ত বিদ্যানুরাগী এবং তাঁর শাসনামলে তাঁর দরবারে সমাগম ঘটে বহু জ্ঞানানুসন্ধানী মনিষীদের। খলিফার মৃত্যুর পর তার পুত্র খলিফা আবু ইউসুফ আল-মনসুরও ইবনে তুফায়েলকে একিরকম শ্রদ্ধার অবস্থানে রাখেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং খলিফার আনুগত্যের কারণে ইবনে তুফায়েলকে কখনো সরাসরি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্টির সমালোচনা বা আক্রমনের শিকার হতে হয় নাই।

খলিফার দরবারে যেসব জ্ঞানানুসন্ধানীরা উপস্থিত হন তাদের অনেকেই লাভ করেন তুফায়েলের শিষ্যত্ব এবং পৃষ্টপোষকতা। নিজ শিষ্য ইবনে রুশদকে এরিস্টটলের ভাষ্যকারের জীবন বেছে নিতে উৎসাহ প্রদান করেন ইবনে তুফায়েল। এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইবনে রুশদ লিখেছিলেনঃ “একদিন আবুবকর ইবনে তুফায়েল আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন যে এরিস্টটলের রচনা এবং সেগুলোর অনুবাদের ভাব প্রকাশের জটিলতা এবং দুর্বদ্ধতার কারণে তার মূল বক্তব্য অনুধাবন করা অত্যন্ত কঠিন। তিনি বলেছেন যদি কারো সময় হতো তাঁর রচনাগুলো সর্বতভাবে আয়ত্ব করে তারপর সেগুলোর সহজ ভাষ্য বা সারমর্ম তবে মানুষের পক্ষে এরিস্টটলের বক্তব্য বোঝা অনেক সহজ এবং কম সময়সাধ্য হতো। এরপর ইবনে তুফায়েল আমাকে বললেন, “তোমার যদি সেই ধৈর্য্যশক্তি থাকে, তুমি করো।

আমার নিশ্চিত, তুমি পারবে। কারণ আমি জানি কি পরিমান ধৈর্য্যশীল এবং অনুধ্যানী তোমার চরিত্র। তুমি জান আমি এখন বৃদ্ধ, সেই সাথে আমার আছে প্রাশাসনিক দায়িত্ব, এবং সেই সাথে আমার নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে আমাকে সময় দিতে হচ্ছে, নাহলে আমি নিজেই এই গুরু দায়িত্ব নিতাম”। ইবনে তুফায়েলের এহেন উৎসাহেই ইবনে রুশদ বেছে নেন এরিস্টটলের ভাষ্যকারের জীবন। আর প্রতিভাবান তুফায়েলের নিষ্টাবান রচনার মাধ্যমেই ইউরোপ নতুন করে পরিচিত হয়ে ওঠে এরিস্টটলের রচনার সাথে।

ইবনে রুশদ যদি ইবনে তুফায়েলের পৃষ্টপোষকতা লাভ না করতেন তাহলে ইউরোপের রেনেসাই পরে যেত হুমকির মুখে। হাই ইবনে ইয়াকজান ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে “ফিলোসফাস অটোডিডাকটাস” নামে। থমাস হবস, জন লক, আইজ্যাক নিউটন, গটফ্রিড লাইবেনিজ, জন ওয়ালিস, ডেভিড হিউম, জর্জ বার্কলি, ইমানুয়েল কান্টের মতো বহু দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে হাই ইবনে ইয়াকজান। ১৭ এবং ১৮ শতকের সায়েন্টিফিক রেভুলেশ্যন এবং ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসাবে পরিগণিত হয় এই পুস্তক। দর্শনের বাইরে সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই গ্রন্থের দ্বারা অনুপ্রানিত হন ডেনিয়েল ডেফো।

এই অনুপ্রেরণার ফসল ডেফোর বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো। ১৩ শতকের পর অন্যান্য মুসলিম দার্শনিকের মতোই প্রাচ্যে অপাংক্তেও হয়ে ওঠেন ইবনে তুফায়েল। কিন্তু মধ্যযুগের অসামান্য প্রতিভাবান এবং ধিমান এই দার্শনিককে সুযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তাঁর আলোয় রেনেসা এবং এনলাইটেনমেন্টের পথে অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছিল ইউরোপ।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.