আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানের বৈশিষ্ট্য

রাজা

আল্লাহ তাআলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন একটি মূল থেকে। এরশাদ হচ্ছে— يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿১৩﴾ (سورة الحجرات : ১৩) ‘হে লোকসকল ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে যে অধিক মুত্তাকী সে-ই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। আল্লাহ তাআলা সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ে ঘোষণা করে বলেন, হে কোরাইশ সম্প্রদায় ! আল্লাহ তাআলা জাহেলী অহমিকা ও বাপ-দাদার বড়াই মিটিয়ে দিয়েছেন।

সকল মানুষ আদম সন্তান, আর আদম মাটির সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে তাঁকে চেনার মত যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে সাথে তিনি রব ও উপাস্য হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, যেগুলো মানুষের বিবেক, অনুভূতি ও আত্মাকে সম্বোধন করে। মানুষকে তাঁর পরিচয় লাভ না করার কারণে শাস্তি প্রদানের জন্যে এতটুকুর উপরই ক্ষান্ত হননি ; বরং রাসূল প্রেরণ করে কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে মানব প্রকৃতিকে সম্বোধন করে সঠিক ধারণার বীজ বপন করা যায়। এ বিষয়ে প্রচুর আয়াত রয়েছে।

এরশাদ হচ্ছে— فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿৩০﴾ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿৩১﴾.(الروم:৩০-৩১) তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহ তাআলার প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সহজ-সরল দ্বীন, কিন্তু অধম মানুষ জানে না। বিশুদ্ধ চিত্তে তার অভিমুখী হয়ে তাকে ভয় কর, তোমরা নামায কায়েম কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আল্লাহ তাআলা মানুষের নিকট এরকমই চেয়েছেন।

কিন্তু মানুষ সংকীর্ণ বিবেক ও কুপ্রবৃত্তির কারণে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে, বিভ্রান্ত হয়ে নানা পথ ও পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে আকল-বুদ্ধি-বিবেক ও আত্মা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এক দিককে অপরটির উপর প্রাধান্য দেবে, সে সঠিক রাস্তা থেকে সরে যাবে। ইসলামী ব্যক্তিত্বের গুণ-বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা মুসলমানের জন্য এমন কিছু গুণাবলী নির্ধারণ করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে তাদের সহজেই অন্যদের থেকে পৃথক করা যায়। (১) মুসলমান আকীদা ও বিশ্বাসে দৃঢ় :— মুসলিম আল্লাহকে প্রভু, ইসলামকে ধর্ম ও মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে।

আল্লাহ, তদীয় ফেরেশতাকুল, কিতাব, রাসূলগণ, আখেরাত ও ভাল-মন্দ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখে। ঈমানের ভিত্তির উপর একজন মুসলমান জীবনকে পরিচালিত করে, যা তাকে আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও লেনদেনে দিক নির্দেশনা দেবে। এর উপরই প্রতিষ্ঠিত হবে তার জীবন-জীবিকা ও সময়। নির্ধারিত হবে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার কাজকর্ম চলবে সুস্পষ্ট প্রামাণ্যতার উপর, যাতে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও চিন্তা-বিভ্রান্তি থাকবে না। ইসলাম এ বিষয়টির উপরই বিশেষ জোর দিয়েছে ; কেননা এ জীবনে মানুষের চলার সূচনা কি হবে সেটা একমাত্র ইসলামই নির্ধারণ করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেন— فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ﴿১৯﴾ (سورة محمد:১৯) ‘সুতরাং তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ ছাড়া (প্রকৃত) কোন মাবুদ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্যে। ’ আল্লাহ তাআলা বলেন— آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ﴿২৮৫﴾ (سورة البقرة : ২৮৫) ‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে, এবং মুসলমানরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তার পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে : আমরা তাঁর রাসূলগণের মাঝে কোন তারতম্য করি না। তারা বলে : আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি, আমরা তোমার ক্ষমা চাই হে আমাদের পালনকর্তা।

তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ’ আল্লাহ তাআলা আরো বলেন— وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿৩৬﴾ (سورة النحل : ৩৬) ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মাঝে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। ’ (২) মুসলমান এবাদতে দৃঢ় :Ñ আল্লাহর এবাদত করাই হল মুসলমানের জীবন, তাদের কাজকর্ম চলবে নীতিবদ্ধতা, শৃঙ্খলা, ভারসাম্যের উপর।

সে এ ধরনের এবাদতে অঙ্গীকারাবদ্ধ, যাতে জীবনের সকল দিক অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন— وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿৫৬﴾ (سورة الذاريات: ৫৬) ‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন— قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿১৬২﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ﴿১৬৩﴾ ( سورة الأنعام : ১৬২-১৬৩) ‘হে নবী ! আপনি বলুন : আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন-মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তার কোন অংশীদার নেই। আমি তা-ই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্য পোষণকারী।

’ তার উপর ভিত্তি করেই মুসলমান একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন— وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ﴿৫﴾ (سورة البينة : ৫) ‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে। ’ আর তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণও থাকতে হবে। যেমন হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد. (رواه مسلم: ৩২৪৩) যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। (৩) মুমিন উত্তম চরিত্রের অধিকারী :— একজন মুসলমানের ব্যক্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম আখলাক ও সুন্দর ব্যবহার।

আর এ ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণ করবে প্রথম আদর্শ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর, যার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন। এরশাদ হচ্ছে— وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ ﴿৪﴾ (سورة القلم : ৪) ‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী। ’ আয়েশা সিদ্দীকা রা.-কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন― كان خلقه القرآن. (رواه أحمد : ২৩৪৬০) ‘কোরআনই ছিল তার চরিত্র। ’ তিনি সর্বদাই উম্মতকে উত্তম চরিত্র গ্রহণ করার আদেশ দিতেন। তিনি বলেন― أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقاً. (رواه الترمذي : ১০৮২) ‘সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে সবচেয়ে চরিত্রবান।

’ জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট অসিয়ত তলব করলে তিনি বলেন― اتق الله حيثما كنت، وأتبع السيئة الحسنة تمحها، وخالق الناس بخلق حسن. (رواه الترمذي : ১৯১০) ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর। গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে একটি নেক আমল করে ফেল, তা সেটি মিটিয়ে দিবে। আর মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার কর। ’ ইসলাম এবাদতের সাথে আখলাককে মিলিয়ে দিয়েছে। একজন প্রকৃত আবেদ এবাদতের মাধ্যমে তার চরিত্র সংশোধন করে নিবে।

এরশাদ হচ্ছে― إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ (سورة العنكبوت : ৪৫) ‘নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশালীন কাজ থেকে (আদায়কারীকে) বিরত রাখে। ’ সিয়াম সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন― إذاكان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب، فإن سابه أحد أوشاتمه فليقل إني صائم. (رواه البخاري : ১৭৮১) ‘তোমরা সিয়াম পালনের দিনগুলোতে অশালীন কাজ ও শোরগোল কর না। যদি কেউ গালি দেয় অথবা ঝগড়া করে, তাহলে বলবে―আমি রোজাদার। ’ হজের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন― فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ. (سورة البقرة: ১৯৭) ‘তবে সে হজের মাঝে সহবাস, দুষ্কর্ম ও কলহ করতে পারবে না। ’ ‘এমনিভাবে উত্তম আখলাকের গুরুত্ব সম্পর্কে শরীয়তের অনেক দলীল প্রমাণ রয়েছে।

একজন প্রকৃত মুমিন উত্তম চরিত্র ও প্রশংসিত গুণাবলির অধিকারী হবে―এটি স্বাভাবিক। উত্তম গুণসমূহ যেমন―সততা, বদান্যতা, বিনম্র আচরণ, খারাপ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংরক্ষণ, অশালীন কাজ থেকে দূরে থাকা, ধৈর্য, লজ্জা―প্রভৃতি। ’ (৪) মুসলমান ইলম ও প্রজ্ঞার উপর জীবন অতিবাহিত করে :― সে অন্যদের সাথে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার অন্যদের থেকে আশা করে। অন্যদের ভালোবাসে এবং তাদের কল্যাণ কামনা করে। তাদের জন্যে দোয়া করে এবং আহ্বান করে এমন কাজের প্রতি যা তাদের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ বয়ে আনে।

মুসলিম এমন স্বার্থপর হবে না যে, শুধু নিজের কল্যাণ কামনা করে, অন্যের নেয়ামত কুক্ষিগত করার আশা করে। কখনও সে অন্যের অমঙ্গল চাইতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার দাওয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েই একজন প্রকৃত মুসলিম মানুষকে হেদায়েত ও দিক-নির্দেশনা দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন― كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ﴿১১০﴾ (سورة آل عمران : ১১০) ‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যে বের করা হয়েছে।

তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে। এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করবে। আর আল্লাহর উপর ঈমান রাখবে। ’ আল্লাহ তাআলা কাজের উৎসাহ প্রদান লক্ষ্যে বলেন― وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿৩৩﴾ (سورة فصلت : ৩৩) ‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে এবং নিজেও নেক আমল করে, আর বলে আমি মুসলমানদের একজন। বিশেষত্বের ফলাফল :— (১) অন্তরের প্রশান্তি ও অস্থিরতার ফলেই পার্থিব জীবনে প্রতিটি মানুষ সুখ-দুঃখের সম্মুখীন হয়।

মুসলিম সর্বাবস্থায় মানসিক শান্তিতে থাকে, সতত নিজেকে আবিস্কার করে এক অনাবিল স্থিরতা ও প্রশান্তিতে। আল্লাহ তাআলা বলেন― الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ﴿২৮﴾ (سورة الرعد : ২৮) ‘যারা মুমিন এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। শোন! আল্লাহর জিকিরেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে থাকে। ’ আল্লাহ তাআলা আরো বলেন— أَفَمَنْ شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿২২﴾. (سورة الزمر : ২২) ‘যে ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন এবং সে রবের পক্ষ থেকে নূরের উপর রয়েছে। যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে কঠোর ,তাদের জন্যে দুর্ভোগ।

তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে’ অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে— هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ﴿৪﴾ (سورة الفتح : ৪) ‘তিনি এমন সত্তা যিনি মুমিনগণের অন্তরে বিশেষ শান্তি দিয়েছেন। যেন তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বেড়ে যায়। ’ (২) পৃথিবীতে আল্লাহর দাসত্বের বাস্তবায়ন :— আল্লাহ তাআলা বলেন— وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿৫৬﴾ (الذاريات : ৫৬) ‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার এবাদতের লক্ষ্যে। ’ তিনি আরো বলেন— قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿১৬২﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ﴿১৬৩﴾ (سورة الأنعام : ১৬২-১৬৩) ‘আপনি বলুন : আমার সালাত, কোরবানি, জীবন, মরণ সবই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তার কোন শরীক নেই।

আমি এ মর্মেই আদিষ্ট হয়েছি আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (৩) স্থিতিশীলতা : আল্লাহর পথে চলার মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিরতা অর্জিত হয়। এরই মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। আর বিপরীত পথে উল্টো ক্ষতি হয়। (৪) সম্মান, সাহায্য ও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ : আল্লাহ বলেন— إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ﴿৭﴾ (سورة محمد : ৭) যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ দৃঢ় রাখবেন।

(৫) চূড়ান্ত লক্ষ্যের বাস্তবায়ন : তা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ। আল্লাহ বলেন― إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا ﴿১০৭﴾ (سورة الكهف : ১০৭) ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনে নেক আমল করে তাদের জন্য মেহমানদারিরূপে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সমাপ্ত লেখক : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার تأليف: أبو الكلام أزاد أنوار الله সম্পাদনা : ইকবাল হুসাইন মাসুম مراجعة: إقبال حسين معصوم ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.