আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানের ওপর মুসলমানের হক

ভালবাসি বাংলা ভাষাকে ইসলাম একটি মহান ধর্ম, মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত একমাত্র জীবনাদর্শ। ইসলাম প্রদর্শন করেছে তার অনুসারীদের জন্য সঠিক পথ। ইসলামে রয়েছে অধিকার ও কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়। সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার। ইসলাম যেসব হক বা অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক।

মুসলিম জাতি আজ স্রোতে ভাসা খড়কুটার মতো মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। মুসলমানদের কাতার আজ হয়ে গেছে খণ্ড-বিখণ্ড। তারা হয়ে পড়েছে শতধা বিভক্ত। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আজ ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক তাআ‘উন তথা সহযোগিতার পবিত্র বন্ধন। ফলে ঠিক দলচ্যুত মেষের মতোই তারা আজ শিকারে পরিণত হচ্ছে নানা জাতি ও গোত্র-সম্প্রদায়ের।

বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ লাঞ্ছনাকর ও অপমানজনক অবস্থায় কালাতিপাত করছে। এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ঈমান ও তাকওয়ার উত্তাপ হ্রাস পাওয়া এবং আল-উখুওয়াহ ফিল্লাহ তথা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অভাবে। ‘আল-উখুওয়াহ ফিল্লাহ’ হচ্ছে, তাওহীদের নিখাঁদ বাঁধন এবং পূর্ণাঙ্গ এক ঐক্য চেতনা। এই নিখাঁদ, পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যাপ্ত চেতনা ছাড়া বাস্তবে এই ভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে পুনর্জীবন দান করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যেমন এই ভ্রাতৃত্বচেতনা মুসলমানদের প্রথম জামাতকে মেষের রাখাল থেকে বিভিন্ন দেশ ও জাতির নেতা ও পরিচালক বানিয়ে দিয়েছিল।

এ রূপান্তর ও পরিবর্তন তখনই সূচিত হয়েছিল যখন তাঁরা পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া এই ভ্রাতৃত্বকে তাঁদের কর্ম ও জীবন পদ্ধতিতে বাস্তবে রূপায়িত করেছিলেন। এই উজ্জ্বল ও দ্যুতিময় চিত্র সেদিন ভাস্বর হয়ে উঠেছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম যেদিন মক্কায় তাওহীদের অনুসারীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের উদ্বোধন করেছিলেন। বর্ণ ও গোত্র এবং ভাষা ও ভূমির ভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে বপণ করেছিলেন এক অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব ও একতার বীজ। ভ্রাতৃত্বের এক সুতোয় বেঁধেছিলেন তিনি কুরাইশ বংশের হামযা, গিফারী বংশের আবূ যর আর পারস্যের সালমান, হাবশার বিলাল ও রোমের সুহাইব রাযি. প্রমুখকে। একতা ও ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে তাঁরা সবাই যেন অভিন্ন কণ্ঠে আবৃত্তি করছিলেন পবিত্র কুরআনের এ আয়াত : ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।

কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (সূরা আল হুজুরাত : ১০)। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভ্রাতৃত্ব রচনার প্রথম পর্ব। এরপর দ্বিতীয় পর্বে সুদীর্ঘ রক্তাক্ত যুদ্ধ ও বহুকাল ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে তিনি ভ্রাতৃত্ব গড়ে দেন মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে। তারপর তৃতীয় পর্বে তিনি ভ্রাতৃত্ব রচনা করেন মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে।

এ ছিল মৈত্রী ও ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত, পুরো মানবেতিহাসে যার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বন্ধন রচিত হলো। মনের সাথে মনের মিলন হলো। এমন হৃদয়কাড়া দৃশ্যও মঞ্চায়িত হলো, বুখারী ও মুসলিমে যার বিবরণ এসেছে এভাবে : আনাস রাযি. বলেন, ‘আমাদের কাছে আবদুর রহমান ইবনে আউফ এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ও সা‘দ ইবনুর রাবী‘র মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে দিলেন।

সা’দ রা. ছিলেন বিত্তশালী। তিনি বললেন, আনসাররা জানে আমি তাদের মধ্যে সবচে’ বেশি সম্পদশালী। আমি আপনার ও আমার মাঝে নিজ সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে নেব। আমার দুইজন স্ত্রী আছে। আপনি দেখেন কাকে আপনার বেশি সুন্দরী মনে হয়।

আমি তাকে তালাক দেব। তারপর তার ইদ্দত শেষ হলে আপনি তাকে বিয়ে করবেন। আবদুর রহমান বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দিন। আপনি আমাকে বাজার কোথায় দেখিয়ে দিন। বাজার থেকে তিনি কেবল তখনই ফিরে এলেন যখন তার কাছে অল্প কিছু মাখন ও পনির অবশিষ্ট রয়ে গেল।

ক্ষণকাল বাদেই সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুর রহমান রাযি. কে উদ্দেশ্যে বললেন, ‘ঘটনা কী?’ আবদুর রহমান রাযি বললেন, আমি এক আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, ‘তাকে কী দিয়েছো’? বললেন, খেজুরের বিচি পরিমাণ স্বর্ণ অথবা বললেন, স্বর্ণের একটি বিচি। তিনি বললেন, ওলীমা করো, হোক না তা একটি ছাগল দিয়ে’ (বুখারী ও মুসলিম)। আজ আমরা সা‘দ ইবনুর রবী‘ রাযি. -এর যুগের কথা কল্পনা করে আফসোস করি আর বলি, কোথায় সেই সা‘দ ইবনুর রবী‘ রাযি., যিনি নিজ সম্পদের অর্ধেক ও নিজ সহধর্মীনিকে মুসলমান ভাইয়ের জন্য ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হবেন।

এর উত্তর হলো, সেদিন আর নেই। সেদিন তো তখনই বিদায় নিয়েছে যেদিন আবদুর রহমান রাযি. বিদায় নিয়েছেন। তেমনি যখন জিজ্ঞেস করা হয় কোন সে ব্যক্তি যিনি সা‘দ রাযি.-এর মতো বদান্যতা ও মহানুভবতা দেখাবেন? তার জবাবে বলা হবে, কোথায় সেই ব্যক্তি যিনি আবদুর রহমান রাযি.-এর মতো অমুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন করবেন? এই হলো পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের কিছু চিত্র। আল্লাহর কসম! এ হাদীসটি যদি সর্বোচ্চ স্তরের একটি বিশুদ্ধ হাদীস না হতো, তাহলে আমি নির্ঘাত একে একটি কাল্পনিক দৃশ্য বলে আখ্যায়িত করতাম। হ্যা, এটিই হলো নির্ভেজাল ভ্রাতৃত্ব।

এই হলো প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব। কারণ আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে কেবল আকীদার বাঁধন, ঈমানের বন্ধন ও আল্লাহর ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, যার শিকড় কখনো উপড়ে পড়ে না। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি মহামূল্যবান নিয়ামত। এটি আল্লাহর এমন এক দান, প্রকৃত মুমিনদের প্রতি যা প্রচুর ধারায় প্রবাহিত হয়। আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব শুভ্র ও পরিশুদ্ধ হৃদয়ের মুমিনদের জন্য এক ‘শারাবান তহূরা’ বা পবিত্র পানীয়।

এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক হলো তাকে ভালোবাসা। আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘ তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে : (১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে গোটা সৃষ্টিজগত অপেক্ষা অধিক প্রিয় হওয়া; (২) মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা; (৩) কুফরিতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় হওয়া’ (মুসলিম)। আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন ‘ সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না : (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ; (২) এমন যুবক যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে বেড়ে উঠেছে; (৩) এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত; (৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসেছে। এ উদ্দেশ্যেই তারা একত্রিত হয়েছে ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে; (৫) এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশীয় রূপসী নারী ব্যভিচারের প্রতি আহ্বান করেছে; কিন্তু সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি; (৬) যে ব্যক্তি এমন গোপনভাবে দান করেছে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাতও তা টের পায় নি; (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করেছে আর তার দুই চোখ দিয়ে অশ্র“ প্রবাহিত হয়েছে’ (বুখারী ও মুসলিম)। সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. থেকে আরও একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘ এক ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে অন্য গ্রামে গেল।

পথিমধ্যে আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা তার কাছে এসে বললেন, কোথায় চলেছ তুমি? লোকটি বলল, এ গ্রামে আমার এক ভাই আছে, তার সাক্ষাতে চলেছি। তিনি বললেন, তার ওপর কি তোমার কোনো নেয়ামত আছে যা তুমি পরিচর্জা ও যতœ কর? তিনি বললেন, না। তবে এতটুকু যে, আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে আল্লাহর বার্তাবাহক হিসেবে এসেছি।

আল্লাহ তোমাকে বার্তা জানিয়েছেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন যেমন তুমি তাকে তাঁর জন্য ভালোবাসো’ (মুসলিম)। মুসলিম ও আবু দাউদে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে যাবৎ না পরিপূর্ণ মুমিন হবে। আর তোমরা পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের কথা বলে দেব না, যা অবলম্বন করলে তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও’ (মুসলিম ও আবু দাউদ)। এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট হক রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি হলো হাদীস অনুযায়ী নিম্নরূপ: ‘ এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে।

বলা হলো সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, (১) তুমি যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে; (২) সে যখন তোমাকে দাওয়াত করবে তখন তা গ্রহণ করবে; (৩) সে যখন তোমার কাছে নসীহত; (পরামর্শ) চাইবে, তখন তুমি তাকে নসীহত করবে; (৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে; (৫) যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে; (৬) এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযা-দাফন কাফনে অংশগ্রহণ করবে’(মুসলিম)। এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের আরেকটি হক হলো, তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। কেননা মুমিন হবে পরিষ্কার মনের অধিকারী। তার অন্তর হবে অনাবিল ও অপঙ্কিল। তার হৃদয় হবে কোমল ও দয়ার্দ্র।

মুমিন যখন রাতে শয়ন করে তখন সে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলে, পৃথিবীর কারো প্রতি তার একবিন্দু হিংসা-বিদ্বেষ নেই। বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষপরায়ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে না এবং পরস্পরে প্রতিহিংসায় লিপ্ত হয়ো না, বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও’ (মুসলিম)। আমাদের জেনে রাখা উচিত, মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহের অন্যতম হলো হিংসা-বিদ্বেষ। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন) মানুষকে সুখী দেখে মানুষ হিংসা করে; তার অন্তরে আগুন জ্বলে। অথচ এই অর্বাচীন লোক ভুলে যায় যে, এ রিযক ও সম্পদ কিন্তু আল্লাহই বণ্টন করেছেন।

সুতরাং আমাদের কর্তব্য, কাউকে সুখ ও প্রাচুর্যের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ করা। যে আল্লাহ তাকে এত নিয়ামত ও প্রাচুর্য দিয়েছেন তার কাছে তার জন্য আরও বৃদ্ধির দু‘আ করা। তিনি যেন আমাকেও সম্পদ ও সুখ-প্রাচুর্য দেন সে প্রার্থনা তাঁর কাছেই করা। সেই নেককারদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাদেরও উচ্চারণ করা উচিত যারা বলতে ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু’ (সূরা আল হাশর : ১০)। মুসলমানের প্রতি হিংসা না রাখা এবং তাদের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা লালন করা কত বড় আমল তা বুঝতে পারা যাবে একটি ঘটনা শুনলে।

ঘটনাটি আনাস রাযি. থেকে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে’। তারপর আনসারীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তার দাড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় উযুর পানি ঝরছিল।

বাম হাতে তার জুতো ধরা। পরদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ বললেন। অতঃপর প্রথম বারের মতো সেই লোকটিই উপস্থিত হলো। তৃতীয় দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই কথা বললেন। এবারও প্রথম বারের মতো লোকটিই উপস্থিত হলো।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বৈঠক ত্যাগ করলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ‘স তার পিছু নিলেন। তাকে তিনি বললেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া করেছি। এক পর্যায়ে কসম করেছি তিনদিন আমি তার কাছে যাব না। তুমি যদি আমাকে এ সময়টুকু তোমার কাছে থাকতে দিতে? তিনি বললেন, ঠিক আছে। আনাস রাযি. বলেন, আবদুল্লাহ বলতেন, তিনি তার সাথে তিনটি রাত অতিবাহিত করেছেন।

তাকে তিনি রাতে নামায পড়তে দেখেননি। তবে এতটুকু দেখেছেন যে, রাতে যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হন, তখন তিনি পাশ ফিরে ফজরের নামায শুরু হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকর ও তাকবীরে লিপ্ত থাকেন। আবদুল্লাহ বলেন, তবে আমি তাকে ভালো ছাড়া কারও মন্দ বলতে শুনিনি। অতঃপর যখন তিন রাত অতিবাহিত হলো এবং আমি তার আমলকে সামান্য জ্ঞান করতে লাগলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞেসই করে বসলাম, হে আল্লাহর বান্দা, আমার ও আমার পিতার মাঝে কোনো রাগারাগি বা ছাড়াছাড়ির ঘটনা ঘটেনি; তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমার সম্পর্কে তিন দিন বলতে শুনেছি : ‘এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী লোক উপস্থিত হবে’। আর ঘটনাক্রমে তিনবারই তুমি উপস্থিত হয়েছ।

এজন্য আমি তোমার সান্নিধ্যে এসেছিলাম তুমি কী আমল করো তা দেখতে। যাতে আমি তোমাকে অনুসরণ করতে পারি। কিন্তু আমি তো তোমাকে খুব বেশি আমল করতে দেখলাম না! তাহলে তোমার কোন্ আমল তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত মর্যাদায় পৌঁছালো? লোকটি বলল, তুমি যা দেখলে তার বেশি কিছুই নয়। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, যখন আমি ফিরে আসলাম, তখন সে আমাকে ডেকে বলল, তুমি যা দেখলে তা তার চেয়ে বেশি কিছুই নয়। তবে আমি মনের মাঝে কোনো মুসলমানকে ঠকানোর চিন্তা রাখি না এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে কোনো হিংসা বোধ করি না।

আবদুল্লাহ রাযি. বললেন, ‘এটিই তোমাকে উক্ত মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে। আর এটিই তো আমরা পারি না’। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.