আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালি মুসলমানের পরিচয়..

উঁকি দাও ফুল!

পূর্ববাঙলায় মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য নিয়া ইতিহাসবিদদের মাঝে তত্ত্বের অভাব নাই। সবচেয়ে সুপরিচিত দুইটা তত্ত্ব হৈল ক. ব্রাক্ষণ্য নির্যাতনের কারণে দলে দলে নিন্মবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধ জনসাধারণ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে; আর খ. মুসলমানরা তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে দলে দলে মানুষকে মুসলমান করেছে। দুটো তত্ত্বেরই চরমপন্থী ভক্তের অভাব নাই। ইতিহাসের অমুক নজির থেকে ইসলামের সাম্যের বাণী দেখে অমুক তমকু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এমনটা প্রমাণ করাটা কঠিন হবে না। আমাদের সামান্যপূর্ব কালের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তার একজন বড় নিদর্শন।

শিখ পরিবারে জন্ম নিয়ে অল্প বয়েসে তিনি গৃহত্যাগী হন ইসলাম গ্রহণ করে, পরবর্তী জীবনে দেওবন্দ মাদ্রাসার গূরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে ভারতে অসাম্প্রদায়িক ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন প্রবাদ-পুরুষে পরিণত হন। তার আত্মজীবনীটি বাংলায় পাওয়া যায়, ভারতের জাতিয়তাবাদী আন্দোলনে মুসলমানদের অংশগ্রহণের শুরুটা নিয়ে জানতে আগ্রহী যে কারো জন্য তা অবশ্যপাঠ্য। আবার রাজা গনেশের পুত্র যদুর কথাও আমরা জানি, বাঙলায় সুলতানী আমলের এক পর্যায়ে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা হিন্দু আমত্য গনেশ আস্ত গদিটাই দখলই করে ফেলেন, তার পুত্র মুসলমান হয়, পরে আবার তাকে শোধন করে হিন্দু মতে আনা হয়, কিন্তু পিতার মৃত্যুর পরই তিনি আবার মুসলমান হয়ে শাসনকার্য চালান। আপাতদৃশ্যে যদুর এই মুসলমান হওয়াটা প্রতিবেশী মুসলমান নৃপতি ও ধর্মনেতাদের নিবৃত্ত করার জন্যই ছিল, বিশেষ করে শায়খদের মিত্রতা ছাড়া তিনি বাঙলায় আগ্রাসন ঠেকাতে পারতেন না, সেটা পরিস্কার। ফলে তার মুসলমান হওয়াটাকে উদ্দ্যেশ্যপ্রবণ বলটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কিন্তু এ তো বড় বড় বিশিষ্ট মানুষদের কথা। একত্রে অজস্ত্র এক দেহে লীন পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষদের মাঝে কি করে ইসলামের এই বাড়-বাড়ন্ত হল? আর তারা শুধু নিজেদের সাথেই না, প্রতিবেশী হিন্দু জনগোষ্ঠীর সাথেও কি করে এই ভাবে প্রায় অভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষা আর ঐতিহ্য নিয়ে ইতিহাসের একটা বিরাট পর্যায় পার করল.. তা গবেষকদের না ভাবিয়ে পারেনি সঙ্গতকারণেই। পরিচিত তত্ত্বদুটোর কথাই ধরি, প্রথমটার বিষয়ে একটা বড় আপত্তির হল এই যে, ব্রাক্ষণ্য সংস্কৃতির অনেক বড় কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গ। উত্তর দিক থেকে অগ্রসরমান আর্যসভ্যতা বিহার ও উড়িষ্যায় ইতিপূর্বেই তাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কায়েম করেছিল। গঙ্গা নদী ধরে ধীরে ধীরে তা প্রতিবেশী পশ্চিম বাঙলায়ও আসন গাড়তে থাকে।

মুসলমানরা আসার আগে আগে নব্যন্যায়ের মত সনাতনী দর্শনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে নদীয়া অঞ্চল। নানান সূত্র মতে আমরা জানি রাজা বল্লাল সেন মিথিলা থেকে বামুন আমদানি করে কুলীন প্রথাও চালূ করেন প্রথমবারের মত বঙ্গে, ‘বল্লালি বালাই’ নামে পরিচিত এই কাজের কুপ্রভাব বহুকাল পরেও পুরো বাঙলায় অনুভূত হয়েছে। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর পিসিমার জীবনের করুণ কাহিনীর সূত্রপাত তো ঘটিয়েছিলেন কত শত বছর আগের অর্ধবিস্মৃত নৃপতিই। কিন্তু সে সবই কিন্ত মূলতঃ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কাহিনী। অল্প কয়েকটি কেন্দ্র বাদ দিলে (যেমন বিক্রমপুর, সিলেট, ইত্যাদি...) পূর্ববঙ্গে তখনো তার বিস্তার ছিল সামান্যই।

ইতিহাসের এই পর্যায়েই ভারতে মুসলমানদের আবির্ভাব ঘটা শুরু হয়, ফলে পূর্ববাঙলার আর্যীকরণ কখনই সুমম্পন্ন হয় নাই। আসলে সত্যি বলতে কি, পূর্ববাঙলার সামান্য এলাকাতেই তখন (কোন কোন সূত্রে ১৮ ভাগ এর মত) কৃষিসভ্যতার বিস্তার ঘটেছিল। ফলে বৈদিক নিপীড়ন, জাতপাত, ইত্যাদি পূর্ববাঙলার সংস্কৃতিতে অনেক পরের বিষয় ছিল পশ্চিমবঙ্গের তুলনায়, কেননা তার আর্যীকরণই সম্পন্ন হয় নাই কখনোই। তাহলে প্রশ্নটা দাঁড়ায়: কেন পূর্ববঙ্গে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, যেখানে পশ্চিমবঙ্গই ব্রাক্ষন্য সংস্কৃতির নবীন কেন্দ্র হয়ে উঠছিল? জাতপাতের পীড়নের কারণে ধর্মান্তর ঘটে থাকলে তার তো পশ্চিমবঙ্গেই বেশি হবার কথা? সেখানে কেন তা হয়ে উঠল না? বিষয়টাকে আরও বড় পরিসরেও ভাবা যেতে পারে, জাতপাতের পীড়নের কারণে ভারতের উত্তরাংশে আরও প্রবল। ফলে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সেই প্রাচীন আমল থেকে মানুষ নতুন নতুন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে, বৈষ্ণব- বৌদ্ধ-জৈন-কবীরপন্থী মায় আমাদের চিরচেনা চৈতন্যদেবের ভক্তিআন্দোলন পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের কাঠামোগত বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা করে এসেছে এবং ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণীর মাঝে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

কিন্ত স্রেফ নিজ ধর্মের বিরোধিতা করে হাজার হাজার মানুষের একত্র বা ধারাবাহিক ধর্মান্তরকরণের তত নিদর্শন কই? আবার যদি দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাকে সত্যি বলে ধরে নেই, তাহলেও একটা বড় প্রশ্ন থাকে এই যে, সুলতানী আমল পর্যন্ত, অথাৎ মুঘলদের কর্তৃত্বে বাঙলা আসার আগ পর্যন্ত বাঙলা প্রদেশের সবগুলো রাজধানীই ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে মুসলমানদের প্রতাপ এবং দাপট ছিল মূলত নগরকেন্দ্রিক, ফলে তাদের চাপে কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে জনসাধারণ দলে দলে মুসলমান যদি উঠে থাকত, তাও মূলতঃ পশ্চিমবঙ্গেই হবার কথা ছিল। এই প্রশ্নটাকেও আবারও ভারতের বৃহৎপ্রেক্ষিতে স্থাপন করা যেতে পারে: পাঞ্জাব বা সিন্ধু কখনোই ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল না। কিন্তু সেখানে চাষাদের মাঝে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও দিল্লী-আগ্রাসমেত রাজধানী শহরগুলোতে মুসলমানরা মূলত নগরবাসী জনগোষ্ঠীই ছিল। বিচ্ছিন্ন এবং ছড়ানো ছিটান কিছু মুসলমান কৃষক এলাকা এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিল।

তাহলে এই হল আজব বিষয় যে, একাধারে ব্রাক্ষন্য সংস্কৃতির কেন্দ্র এবং পরবর্তী সুলতানী ক্ষমতার কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, পূর্ববঙ্গেই মুসলমানদের বৃহৎ আবির্ভাব দেখা গেল। কেন? এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন রিচার্ড এম ইটন নামের এক ইতিহাসবিদ তার দি রাইজ অব ইসলাম অ্যান্ড দি বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার নামের বইয়ে। আর একটা জবাবও তিনি দিয়েছেন। প্রায় জমজমাট সামাজিক কাহিনীর মত শ্বাসরুদ্ধকর সেই ঐতিহাসিক পালাবদলে আছে প্রবল এক ভূমিকম্পে গঙ্গা নামের একটা নদীর গতিপরিবর্তন, আরাকান আর অহোম রাজার সাথে সীমান্ত-লড়াইয়ের কারণে মুঘলদের পূর্ববঙ্গের বুকের মাঝখানে জাহাঙ্গীরনগর নামে একটা নতুন আঞ্চলিক রাজধানী স্থাপন, স্প্যানিশ বেনিয়াদের পেরু দখল ও সোনা আর রুপার ভাণ্ডার পুরান দুনিয়ায় নিয়ে আসা এবং মোঙ্গলদের মধ্য এশিয়া লণ্ডভণ্ড করার সাথে দুনিয়ার এক নিভৃত ছায়াচ্ছন্ন নবীন বদ্বীপের কোনে জমির জন্য ক্ষুধার্থ চাষাদের লাঙলের ফলায় আদিম সব বৃক্ষ উৎপাটিত হবার আর ইসলাম নামের এক ধর্মের বিস্তারের রহস্যোদ্বাঘটন। আর কি আশ্চর্য, সেই পূর্বের এই নরম মাটিতে ইসলাম ধর্মের বিস্তার-কাহিনীটা কোন জেহাদী কাহিনী না... কেবলই ইহজাগতিক মানুষের সংস্কৃতির এটা ধরনের বিস্তারের কাহিনী।

ধরনটা কেন প্রধানত ইসলাম, তারই একটা এমন ব্যাখ্যা ইটন দিয়েছেন, যা পুরোটাই সাম্প্রাদায়িক বাষ্পমুক্ত। 'ক' আর 'খ' ব্যাখ্যাওয়ালা দুই তরফের সাম্প্রদায়িকদেরই বাতিল করে ইটন ইতিহাসকে চিনিয়েছেন নতুন এক আলোয়। ইটনকে সালাম। ইটনকে কেউ এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারেননি। তবে কেউ কেউ ছোট খাট কিছু সংস্কার প্রস্তাব করেছেন।

আল্লা যদি বরাতে রাখে, দেখি সামনের দিনগুলোতে সংক্ষেপে তার কিছু বর্ণনা করা যাবে। আপাতত আজকের বিষয় ঐ 'ক' আর 'খ' ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনেই সীমিত থাকুক। আমর ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত। http://www.amarblog.com/khareji/61601 @ মজুর ভাই, সামনের সপ্তার আগে কোন টাইম নাই ভাবনের। (কন তো নিরাপদ লেখছে, পোস্ট সরাসরি প্রথম পাতায় যাইব কইছে, তয় যায় না কেন? কমেন্ট ব্যান না হয় বুঝলাম, আমি কমেন্ট খারাপ করি.. সেইটা না হয় ওক্কে @মেঘলা, ধন্যবাদ কস্ট করে পড়ার জন্য।

@ নাজিমউদ্দীন, হয় রে ভাই এখনও ব্যান। কারণ নিশ্চিত না, সম্ভবত নুটিশবোর্ডের পোস্টে কইছিলাম যে নুটিশবোর্ডের সবগুলা ব্যাখা কেমন জমজ মনে হয়। এই কমেন্ট মুছে দেবার এবং প্রায় শুধু এটুকু লিখে দেয়া পোস্ট মুছে একেবারে লগিং ব্যান করার মানে একটাই হতে পারে: মডুদের ভাষা জ্ঞান খুবি খারাপ। তারা হয়তো জমজকে জারজ বলে পড়েছে। শিওর না।

গোপনবিচার হলে কিছুই শিওর হওয়া যায় না যে! @ মনির, আজ আবার দেখলাম আমার একাউন্ট স্থগিত। এই হৈল ঘটনা। আর এইভাবে উত্তর দিতে মন্দ লাগে না। (ক্লেশবিনে প্রেমের কি প্রমাণ সখী গো...) @ ওক্কে নির্ঝর, পাঠাইলাম। ধন্যবাদ @ জুলভার্ন।

আশা করি সিরিজের শেষ পর্যন্ত আপনাকে পাব। @দস্যু বনহুর, জ্বী, এখনো ব্যান। ছয় দিন আগে নিরাপদ করেছিল(বাট পোস্ট প্রথম পাতায় যায় না, কমেন্টও করা যায় না। গতকাল আবার ওয়াচ। জানি না হাত-পা বাধা অবস্থায় কি অপরাধ করা গেছিল)।

@ভাল মানুষ, মন্দ নাই। আমার অভ্যাস হয়া গেছে। কষ্ট করে খুজে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। @ফারহানা, আপনার দারুণ লেখাটাতে কমেন্ট করতে পারি নাই, কেবল ভূতের মতন ঘুরে চলে এসেছি। দেখতেই পাচ্ছেন, নিজের পোস্টেও কেমনে উত্তর দিতে হয়! আপনাদেরকেও এত মিস করি... ঘুরে ফিরে তাই সামুপাড়ায় চক্কর দেই! @ তামিম ইরফা, কালই আপ্নার লেখাটা পর্লাম।

সেই রকম হৈছে। আর রেসিডেন্টগো কথা কি আর কমু! এই যে আপ্নারা মায়া জানাচ্ছে, এই অনেক বড় পাওয়া। @কঁাকন, গরিব লুক, দেখনের কেউ নাই। অবস্থা তো এরাম হৈবেই। @ আবদুল ওয়াহিদ, হ, কথা ওই একই।

@ মুন্সীজী, আপনার সোজাসাপ্টা মতামতের সাথে একমত হই না সর্বদা, কিন্তু গূরুত্ব দেই। এবারও দিলাম, আর পরের কিস্তি নিয়া একটু থমকায়াও গেলাম। যাহোক, উদ্দেশ্যটা ন্যারো বলতে জানি না আমি যা বুঝছি আপনি তাই বুঝিয়েছেন কি না, সেটা হল: ধর্মান্তরকরণের একটা পূর্বধারণাপ্রসূত অসাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা মাথায় নিয়ে লেখাটা লেখা হচ্ছে কি না, নাকি আগে পর্যালোচনা শেষ করে তার পরে ঐ সিদ্ধান্তে পৌছাচ্ছি! কিংবা আমার এই প্রথম কিস্তির সিদ্ধান্তগুলোর মাঝেই হয়তো এমন সব সাধারণীকরণ আছে যা উদ্দেশ্যকে সংকীর্ণ করে? অবশ্যই বড় কমেন্ট করবেন, পক্ষপাত দেখানো হয়ে গেলেও (যদি আপনার সময় থাকে যথেষ্ট)! পূর্ববাঙলায় মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য নিয়া ইতিহাসবিদদের মাঝে তত্ত্বের অভাব নাই। সবচেয়ে সুপরিচিত দুইটা তত্ত্ব হৈল ক. ব্রাক্ষণ্য নির্যাতনের কারণে দলে দলে নিন্মবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধ জনসাধারণ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে; আর খ. মুসলমানরা তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে দলে দলে মানুষকে মুসলমান করেছে। দুটো তত্ত্বেরই চরমপন্থী ভক্তের অভাব নাই।

ইতিহাসের অমুক নজির থেকে ইসলামের সাম্যের বাণী দেখে অমুক তমকু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এমনটা প্রমাণ করাটা কঠিন হবে না। আমাদের সামান্যপূর্ব কালের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তার একজন বড় নিদর্শন। শিখ পরিবারে জন্ম নিয়ে অল্প বয়েসে তিনি গৃহত্যাগী হন ইসলাম গ্রহণ করে, পরবর্তী জীবনে দেওবন্দ মাদ্রাসার গূরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে ভারতে অসাম্প্রদায়িক ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন প্রবাদ-পুরুষে পরিণত হন। তার আত্মজীবনীটি বাংলায় পাওয়া যায়, ভারতের জাতিয়তাবাদী আন্দোলনে মুসলমানদের অংশগ্রহণের শুরুটা নিয়ে জানতে আগ্রহী যে কারো জন্য তা অবশ্যপাঠ্য। আবার রাজা গনেশের পুত্র যদুর কথাও আমরা জানি, বাঙলায় সুলতানী আমলের এক পর্যায়ে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা হিন্দু আমত্য গনেশ আস্ত গদিটাই দখলই করে ফেলেন, তার পুত্র মুসলমান হয়, পরে আবার তাকে শোধন করে হিন্দু মতে আনা হয়, কিন্তু পিতার মৃত্যুর পরই তিনি আবার মুসলমান হয়ে শাসনকার্য চালান।

আপাতদৃশ্যে যদুর এই মুসলমান হওয়াটা প্রতিবেশী মুসলমান নৃপতি ও ধর্মনেতাদের নিবৃত্ত করার জন্যই ছিল, বিশেষ করে শায়খদের মিত্রতা ছাড়া তিনি বাঙলায় আগ্রাসন ঠেকাতে পারতেন না, সেটা পরিস্কার। ফলে তার মুসলমান হওয়াটাকে উদ্দ্যেশ্যপ্রবণ বলটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এ তো বড় বড় বিশিষ্ট মানুষদের কথা। একত্রে অজস্ত্র এক দেহে লীন পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষদের মাঝে কি করে ইসলামের এই বাড়-বাড়ন্ত হল? আর তারা শুধু নিজেদের সাথেই না, প্রতিবেশী হিন্দু জনগোষ্ঠীর সাথেও কি করে এই ভাবে প্রায় অভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষা আর ঐতিহ্য নিয়ে ইতিহাসের একটা বিরাট পর্যায় পার করল.. তা গবেষকদের না ভাবিয়ে পারেনি সঙ্গতকারণেই। পরিচিত তত্ত্বদুটোর কথাই ধরি, প্রথমটার বিষয়ে একটা বড় আপত্তির হল এই যে, ব্রাক্ষণ্য সংস্কৃতির অনেক বড় কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গ।

উত্তর দিক থেকে অগ্রসরমান আর্যসভ্যতা বিহার ও উড়িষ্যায় ইতিপূর্বেই তাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কায়েম করেছিল। গঙ্গা নদী ধরে ধীরে ধীরে তা প্রতিবেশী পশ্চিম বাঙলায়ও আসন গাড়তে থাকে। মুসলমানরা আসার আগে আগে নব্যন্যায়ের মত সনাতনী দর্শনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে নদীয়া অঞ্চল। নানান সূত্র মতে আমরা জানি রাজা বল্লাল সেন মিথিলা থেকে বামুন আমদানি করে কুলীন প্রথাও চালূ করেন প্রথমবারের মত বঙ্গে, ‘বল্লালি বালাই’ নামে পরিচিত এই কাজের কুপ্রভাব বহুকাল পরেও পুরো বাঙলায় অনুভূত হয়েছে। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর পিসিমার জীবনের করুণ কাহিনীর সূত্রপাত তো ঘটিয়েছিলেন কত শত বছর আগের অর্ধবিস্মৃত নৃপতিই।

কিন্তু সে সবই কিন্ত মূলতঃ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কাহিনী। অল্প কয়েকটি কেন্দ্র বাদ দিলে (যেমন বিক্রমপুর, সিলেট, ইত্যাদি...) পূর্ববঙ্গে তখনো তার বিস্তার ছিল সামান্যই। ইতিহাসের এই পর্যায়েই ভারতে মুসলমানদের আবির্ভাব ঘটা শুরু হয়, ফলে পূর্ববাঙলার আর্যীকরণ কখনই সুমম্পন্ন হয় নাই। আসলে সত্যি বলতে কি, পূর্ববাঙলার সামান্য এলাকাতেই তখন (কোন কোন সূত্রে ১৮ ভাগ এর মত) কৃষিসভ্যতার বিস্তার ঘটেছিল। ফলে বৈদিক নিপীড়ন, জাতপাত, ইত্যাদি পূর্ববাঙলার সংস্কৃতিতে অনেক পরের বিষয় ছিল পশ্চিমবঙ্গের তুলনায়, কেননা তার আর্যীকরণই সম্পন্ন হয় নাই কখনোই।

তাহলে প্রশ্নটা দাঁড়ায়: কেন পূর্ববঙ্গে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, যেখানে পশ্চিমবঙ্গই ব্রাক্ষন্য সংস্কৃতির নবীন কেন্দ্র হয়ে উঠছিল? জাতপাতের পীড়নের কারণে ধর্মান্তর ঘটে থাকলে তার তো পশ্চিমবঙ্গেই বেশি হবার কথা? সেখানে কেন তা হয়ে উঠল না? বিষয়টাকে আরও বড় পরিসরেও ভাবা যেতে পারে, জাতপাতের পীড়নের কারণে ভারতের উত্তরাংশে আরও প্রবল। ফলে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সেই প্রাচীন আমল থেকে মানুষ নতুন নতুন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে, বৈষ্ণব- বৌদ্ধ-জৈন-কবীরপন্থী মায় আমাদের চিরচেনা চৈতন্যদেবের ভক্তিআন্দোলন পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের কাঠামোগত বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা করে এসেছে এবং ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণীর মাঝে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্ত স্রেফ নিজ ধর্মের বিরোধিতা করে হাজার হাজার মানুষের একত্র বা ধারাবাহিক ধর্মান্তরকরণের তত নিদর্শন কই? আবার যদি দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাকে সত্যি বলে ধরে নেই, তাহলেও একটা বড় প্রশ্ন থাকে এই যে, সুলতানী আমল পর্যন্ত, অথাৎ মুঘলদের কর্তৃত্বে বাঙলা আসার আগ পর্যন্ত বাঙলা প্রদেশের সবগুলো রাজধানীই ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে মুসলমানদের প্রতাপ এবং দাপট ছিল মূলত নগরকেন্দ্রিক, ফলে তাদের চাপে কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে জনসাধারণ দলে দলে মুসলমান যদি উঠে থাকত, তাও মূলতঃ পশ্চিমবঙ্গেই হবার কথা ছিল। এই প্রশ্নটাকেও আবারও ভারতের বৃহৎপ্রেক্ষিতে স্থাপন করা যেতে পারে: পাঞ্জাব বা সিন্ধু কখনোই ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল না।

কিন্তু সেখানে চাষাদের মাঝে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও দিল্লী-আগ্রাসমেত রাজধানী শহরগুলোতে মুসলমানরা মূলত নগরবাসী জনগোষ্ঠীই ছিল। বিচ্ছিন্ন এবং ছড়ানো ছিটান কিছু মুসলমান কৃষক এলাকা এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিল। তাহলে এই হল আজব বিষয় যে, একাধারে ব্রাক্ষন্য সংস্কৃতির কেন্দ্র এবং পরবর্তী সুলতানী ক্ষমতার কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, পূর্ববঙ্গেই মুসলমানদের বৃহৎ আবির্ভাব দেখা গেল। কেন? এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন রিচার্ড এম ইটন নামের এক ইতিহাসবিদ তার দি রাইজ অব ইসলাম অ্যান্ড দি বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার নামের বইয়ে। আর একটা জবাবও তিনি দিয়েছেন।

প্রায় জমজমাট সামাজিক কাহিনীর মত শ্বাসরুদ্ধকর সেই ঐতিহাসিক পালাবদলে আছে প্রবল এক ভূমিকম্পে গঙ্গা নামের একটা নদীর গতিপরিবর্তন, আরাকান আর অহোম রাজার সাথে সীমান্ত-লড়াইয়ের কারণে মুঘলদের পূর্ববঙ্গের বুকের মাঝখানে জাহাঙ্গীরনগর নামে একটা নতুন আঞ্চলিক রাজধানী স্থাপন, স্প্যানিশ বেনিয়াদের পেরু দখল ও সোনা আর রুপার ভাণ্ডার পুরান দুনিয়ায় নিয়ে আসা এবং মোঙ্গলদের মধ্য এশিয়া লণ্ডভণ্ড করার সাথে দুনিয়ার এক নিভৃত ছায়াচ্ছন্ন নবীন বদ্বীপের কোনে জমির জন্য ক্ষুধার্থ চাষাদের লাঙলের ফলায় আদিম সব বৃক্ষ উৎপাটিত হবার আর ইসলাম নামের এক ধর্মের বিস্তারের রহস্যোদ্বাঘটন। আর কি আশ্চর্য, সেই পূর্বের এই নরম মাটিতে ইসলাম ধর্মের বিস্তার-কাহিনীটা কোন জেহাদী কাহিনী না... কেবলই ইহজাগতিক মানুষের সংস্কৃতির এটা ধরনের বিস্তারের কাহিনী। ধরনটা কেন প্রধানত ইসলাম, তারই একটা এমন ব্যাখ্যা ইটন দিয়েছেন, যা পুরোটাই সাম্প্রাদায়িক বাষ্পমুক্ত। 'ক' আর 'খ' ব্যাখ্যাওয়ালা দুই তরফের সাম্প্রদায়িকদেরই বাতিল করে ইটন ইতিহাসকে চিনিয়েছেন নতুন এক আলোয়। ইটনকে সালাম।

ইটনকে কেউ এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারেননি। তবে কেউ কেউ ছোট খাট কিছু সংস্কার প্রস্তাব করেছেন। আল্লা যদি বরাতে রাখে, দেখি সামনের দিনগুলোতে সংক্ষেপে তার কিছু বর্ণনা করা যাবে। আপাতত আজকের বিষয় ঐ 'ক' আর 'খ' ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনেই সীমিত থাকুক। আমর ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত।

http://www.amarblog.com/khareji/61601 @ মজুর ভাই, সামনের সপ্তার আগে কোন টাইম নাই ভাবনের। (কন তো নিরাপদ লেখছে, পোস্ট সরাসরি প্রথম পাতায় যাইব কইছে, তয় যায় না কেন? কমেন্ট ব্যান না হয় বুঝলাম, আমি কমেন্ট খারাপ করি.. সেইটা না হয় ওক্কে @মেঘলা, ধন্যবাদ কস্ট করে পড়ার জন্য। @ নাজিমউদ্দীন, হয় রে ভাই এখনও ব্যান। কারণ নিশ্চিত না, সম্ভবত নুটিশবোর্ডের পোস্টে কইছিলাম যে নুটিশবোর্ডের সবগুলা ব্যাখা কেমন জমজ মনে হয়। এই কমেন্ট মুছে দেবার এবং প্রায় শুধু এটুকু লিখে দেয়া পোস্ট মুছে একেবারে লগিং ব্যান করার মানে একটাই হতে পারে: মডুদের ভাষা জ্ঞান খুবি খারাপ।

তারা হয়তো জমজকে জারজ বলে পড়েছে। শিওর না। গোপনবিচার হলে কিছুই শিওর হওয়া যায় না যে! @ মনির, আজ আবার দেখলাম আমার একাউন্ট স্থগিত। এই হৈল ঘটনা। আর এইভাবে উত্তর দিতে মন্দ লাগে না।

(ক্লেশবিনে প্রেমের কি প্রমাণ সখী গো...) @ ওক্কে নির্ঝর, পাঠাইলাম। ধন্যবাদ @ জুলভার্ন। আশা করি সিরিজের শেষ পর্যন্ত আপনাকে পাব। @দস্যু বনহুর, জ্বী, এখনো ব্যান। ছয় দিন আগে নিরাপদ করেছিল(বাট পোস্ট প্রথম পাতায় যায় না, কমেন্টও করা যায় না।

গতকাল আবার ওয়াচ। জানি না হাত-পা বাধা অবস্থায় কি অপরাধ করা গেছিল)। @ভাল মানুষ, মন্দ নাই। আমার অভ্যাস হয়া গেছে। কষ্ট করে খুজে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

@ফারহানা, আপনার দারুণ লেখাটাতে কমেন্ট করতে পারি নাই, কেবল ভূতের মতন ঘুরে চলে এসেছি। দেখতেই পাচ্ছেন, নিজের পোস্টেও কেমনে উত্তর দিতে হয়! আপনাদেরকেও এত মিস করি... ঘুরে ফিরে তাই সামুপাড়ায় চক্কর দেই! @ তামিম ইরফা, কালই আপ্নার লেখাটা পর্লাম। সেই রকম হৈছে। আর রেসিডেন্টগো কথা কি আর কমু! এই যে আপ্নারা মায়া জানাচ্ছে, এই অনেক বড় পাওয়া। @কঁাকন, গরিব লুক, দেখনের কেউ নাই।

অবস্থা তো এরাম হৈবেই। @ আবদুল ওয়াহিদ, হ, কথা ওই একই। @ মুন্সীজী, আপনার সোজাসাপ্টা মতামতের সাথে একমত হই না সর্বদা, কিন্তু গূরুত্ব দেই। এবারও দিলাম, আর পরের কিস্তি নিয়া একটু থমকায়াও গেলাম। যাহোক, উদ্দেশ্যটা ন্যারো বলতে জানি না আমি যা বুঝছি আপনি তাই বুঝিয়েছেন কি না, সেটা হল: ধর্মান্তরকরণের একটা পূর্বধারণাপ্রসূত অসাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা মাথায় নিয়ে লেখাটা লেখা হচ্ছে কি না, নাকি আগে পর্যালোচনা শেষ করে তার পরে ঐ সিদ্ধান্তে পৌছাচ্ছি! কিংবা আমার এই প্রথম কিস্তির সিদ্ধান্তগুলোর মাঝেই হয়তো এমন সব সাধারণীকরণ আছে যা উদ্দেশ্যকে সংকীর্ণ করে? অবশ্যই বড় কমেন্ট করবেন, পক্ষপাত দেখানো হয়ে গেলেও (যদি আপনার সময় থাকে যথেষ্ট)! @ তামিম আর কঁাকন, আমারও সেই সন্দেহ, আর কথা বলতে দিবে না মনে হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.