দুরন্ত স্বপ্নচারীর পরামর্শে এই বিষয়ে লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছিল না। অবশেষে লিখতে বসলাম। কিন্তু লেখাটা কিভাবে শুরু করব, কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব আর কিভাবে শেষ করব কিছুই ঠিক করতে পারছি না। লিখতে থাকি, দেখি কোনদিকে যায়।
আমার সিনেমা দেখার শুরুটা মনে হয় জন্মের পর থেকেই, শুধু স্মৃতিতে নেই বলে লিখতে পারছি না।
বড় বোনদের কাছে শুনেছি চার-পাঁচ বছর বয়সেই নাকি বিটিভিতে ইংরেজী সিনেমা দেখালে হাঁ করে গিলতাম। ইংরেজী সিনেমার প্রতি দুর্বলতাটা এখনও আছে, তবে বাংলা আর হিন্দী সিনেমাও একেবারে কম দেখা হয়নি। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমি সিনেমার নাম মনে রাখতে পারি না। দেখা যায় ২০-২৫ বছর আগে দেখা সিনেমার কাহিনী বা দৃশ্য মনে আছে, নামটাই মনে নেই।
সিনেমা দেখার মাধ্যম ছিল প্রথমে বিটিভি, এরপর ভিসিপি-ভিসিআরের যুগে ভিডিও ক্যাসেট, যার সমাপ্তি হয়েছিল কেবল টিভি আসার পর, আর কম্পিউটার আসার পর এর সাথে যোগ হয়েছে ভিসিডি-ডিভিডি।
হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সংখ্যা খুব খুব কম।
বিটিভি দিয়েই শুরু করি। শুক্রবার বিকালে বাংলা সিনেমা আর বৃহস্পতিবার রাতে মুভি অফ দ্য উইক -- কিছুতেই বাদ পড়ত না। শুক্রবার বন্ধ থাকায় আম্মাও রাত জেগে সিনেমা দেখতে বাধা দিতেন না। খুব কমই এমন হয়েছে যে রাতে সিনেমা দেখতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।
কালে-ভদ্রে এমন হলে পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে কি আফসোস, ফাস্টো কেলাসের ছবিটার লাস্টো ছিনটা দেখবার পারলাম না, ইশটুপিড, ননচেন্চ। (একটা বাংলা সিনেমার ডায়লগ দিয়ে দিলাম চামে )
ইংরেজী বাংলা যা-ই হোক, সাদা-কালো সিনেমার প্রতি কেন যেন আকর্ষণ ছিল, এখনও আছে। ঐ সময়ের নায়ক-নায়িকাদেরও অনেক ভালো লাগত, রঙীন যুগে এসে ঐ একই নায়ক-নায়িকাদের আর ভালো লাগেনি। রাজ্জাক, ববিতা, শাবানা, কবরী - সবার ক্ষেত্রেই ঐ একই কথা প্রযোজ্য।
সিনেমা নিয়ে লিখতে সবচেয়ে জরুরী বিষয় সিনেমার নাম, সেটাই বহু চেষ্টাতেও মনে করতে পারছি না।
দেখি যে দুই-চারটা মনে পড়ে তা-ই লিখতে থাকি। "টাকা আনা পাই" সিনেমাটা দেখার পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখি সবার মুখে মুখে এক ডায়লগ, "টাকা মাটি মাটি টাকা, মিল-মহব্বত বড় কথা"।
অন্য এক সিনেমায় এটিএম শামসুজ্জামানের একটা মজার চরিত্র ছিল। ঠিকমত কথা
বলতে পারত না, সে গ্রামের চৌকিদার। সারারাত গ্রাম পাহাড়া দেয় আর সারাদিন বউয়ের ঝামটা খেয়ে ঘরের সব কাজ করে, উঠান ঝাড়ু দেয়, ঢেঁকিতে ধান ভানে, রান্না-বান্না করে, আবার বউয়ের হাতে পিট্টিও খায়।
এক রাতে পাহাড়া দেয়ার সময় এক চোর বড় একটা ট্রাংক মাথায় করে পালানোর সময় তার হাতে ধরা পড়ে। চোর কিছু বলার আগেই সে নিজে বলতে থাকে, "কি লে? তুই কই দাত? বউয়েল পিতানি খায়া বালি থাইলা পলাইতাতোত? বালা কলতোত। কিন্তু তুই থালা গায়ে তেল মাকথত ক্যান? ওও বুত্থি , বউ মাল্লে পিতলায়া দাইব, তোল তো দেহি বুদ্দি আথে, দা তুই পলায়া দা। " চোর এতক্ষণ শুধু তার কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছিল, এখন অনুমতি পেয়ে ট্রাংক নিয়ে পালাল।
বাংলার চেয়ে ইংরেজী সিনেমার প্রতি আমার বরাবরই ঝোঁকটা বেশি।
এই ব্যাপারটা মনে হয় জেনেটিকভাবে আব্বার কাছ থেকে পেয়েছি। সে কথায় পরে আসছি। ছোটবেলায় মুভি অফ দ্য উইকে দেখা ছবিগুলোর কথা বেশির ভাগই মনে করতে পারি, শুধু ঐ নামটা ছাড়া। কয়েক বছর আগে 'Godfather' প্রথম পর্বটা দেখতে বসেই মনে পড়ে গেল, আরে এটা তো সেই কবেই দেখেছি, ক্লাস টু-থ্রী তে থাকতেই, এটাই যে সেই বিখ্যাত সিনেমা তাই তো জানতাম না।
The King and I, Roman Holiday, Sound of Music এই সিনেমাগুলো মনের ভেতর এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে পরে টারজানকে নিয়ে দেখতে বসে প্রায় প্রতিটা দৃশ্য আগে থেকেই বলে দিচ্ছিলাম।
টারজানের বিশ্বাসই হচ্ছিল না এই সিনেমাগুলো আমার ২০ বছর আগের দেখা। গ্রেগরী পেক-অড্রে হেপবার্ন জুটি অসাধারণ লাগত। মজা পেয়েছিলাম যেদিন জেনেছি গ্রেগরী পেক আর আমার জন্মদিন একই দিনে । সাড়ে ছয় ফুটি রক হাডসনও প্রিয় নায়কের তালিকায় ছিল।
ইংরেজী সিনেমা অনেক দেখার একটা সুফল (নাকি কুফল বলব) হয়েছে এই যে, বেশির ভাগ হিন্দী সিনেমা দেখেই বুঝতে পারি এর কাহিনী কোন না কোন ইংরেজী সিনেমা থেকে নেয়া হয়েছে।
কতদিন যে বিটিভিতে ইংরেজী সিনেমা দেখি না। এখনও দেখায় না কি? বিটিভিতে আগে ইরানী সিনেমা বাংলায় ডাবিং করে দেখাত। খুব ভালো লাগত আর মনে হত অন্য দেশের সিনেমাও এভাবে ডাবিং করে দেখালে ভালো হত।
প্রথমবারের মত হলে গিয়ে যে সিনেমাটা দেখেছিলাম সেটা ছিল, 'দ্বীপ জ্বেলে যাই'। নামটা যে এখনও মনে আছে তাতেই অবাক হচ্ছি।
নাকি আসলে নামটা ছিল 'দূরদেশ'। ধুরো মনে নাই। নাম যা-ই হোক, একই কথা, কারণ সিনেমার কিছুই মনে নাই। চার-পাঁচ বছর বয়স হবে হয়ত, আমাকে আর ছোট বোনকে নিয়ে আব্বা-আম্মা গিয়েছিলেন। বড় একটা টিভি দেখে দুই বোন অভিভূত।
আর বসার সিটগুলো কিভাবে একা একাই উঠে যায় সেটাও একটা বড় গবেষণার বিষয় ছিল।
ইন্টারভ্যাল পর্যন্ত এই করেই কাটিয়ে দিলাম। ইন্টারভ্যালে চিপস আর মিরিন্ডা কিনে দেয়ার পর সেগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু হল। (কতদিন মিরিন্ডা খাই না)। গবেষণার মূল বিষয় ছিল এক বোতল মিরিন্ডা বড়রা একবারে শেষ করে ফেলে, আমি কেন পারি না।
আর বড়রা এত মনোযোগ দিয়ে এই বোরিং সিনেমা কিভাবে দেখে তাও বুঝতে পারি না।
বড় হয়ে হলে গিয়ে যেসব সিনেমা দেখেছি তার মধ্যে আছে
# শ্রাবণ মেঘের দিনে (অসাধারণ একটা সিনেমা)
# চন্দ্রকথা (কাহিনী খারাপ না, তবে ঢং ঢাং বেশি)
# শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ (জঘন্য, হিন্দী সিনেমার নকল)
# মনপুরা (থিমটা ভালোই, রোমিও-জুলিয়েটের আদলে, কিন্তু ঢিলামি কমাতে পারলে আরও ভালো হতে পারত, গানগুলো সুন্দর)
# The Mummy Returns (ফ্যান্টাসি হিসেবে খারাপ না)
আর নাম মনে নেই।
হলে গিয়ে যত না সিনেমা দেখেছি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি দেখেছি বিভিন্ন প্রদর্শনীতে। মেডিকেলে মাঝে-মধ্যেই ফিল্ম শোর আয়োজন করা হত। এছাড়া পাবলিক লাইব্রেরী, জাতীয় জাদুঘর, বৃটিশ কাউন্সিল, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার যখন যেখানে কোন ফিল্ম শোর খবর পেতাম চলে যেতাম।
একবার কোন একটা শো'তে আমরা দুই বান্ধবী গিয়েছি, যেতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে সিনেমা। অন্ধকারে একটা সারিতে আমরা ঢুকে পড়লাম। আমি একটা সিটে বসার পর বান্ধবী বলল, তুমি পরেরটায় বস, আমি এইটায় বসি। আমি ওকে বললাম, কেন এই পাশের সিট তো খালি তুমি বসে পড় না, বলতে বলতে পাশের সিটে হাত দিয়ে দেখাতে গেলাম।
কিন্তু হাত দিয়েই টের পেলাম আমি কোন খালি সিটে না, বরং পাশের সিটে বসে থাকা দর্শকের পায়ের উপর হাত দিয়ে দিয়েছি। অন্ধকারে বুঝতেই পারিনি যে ওখানে কেউ বসে আছে। আর সেও কেমন পাজী, চুপটি করে বসে আছে, নড়াচড়াও করে না, কিছু বলেও না।
লেখাটা সিনেমা ছেড়ে অন্য লাইনে চলে যাচ্ছে। ফিল্ম শো'তে দেখা সিনেমাগুলোর নাম কিছু মনে করার চেষ্টা করি।
# Mouline Rouge
# Gone in 60 Seconds
# Rock
# Dumb & Dumber
# Final Fantasy
# Captain Gadget (নামটা ভুল লিখলাম কিনা বুঝতে পারছি না)
# দেবদাস (সঞ্জয় লীলা বানসালির)
মেডিকেলে পড়ার সময় যেবার ইন্ডিয়ায় ঘুরতে গিয়েছিলাম, জয়পুরে পৌঁছেই সেখানকার বিখ্যাত সিনেমা হল রাজ মন্দিরে (নামটা ভুল হলে ঠিক করে দিবেন) দল বেঁধে চলে গেলাম সিনেমা দেখতে। ফালতু একটা সিনেমা চলছিল তখন। কি জানি নামটা, 'হাঁ, ম্যায়নে ভি পেয়ার কিয়া হ্যায়' এই ধরণের দুই মাইল লম্বা কোন নাম হবে হয়ত। সিনেমা যেমনই হোক, ঐ বিশাল হলে বসে জটিল সাউন্ড সিস্টেমে সিনেমা দেখার মজাটা ছিল দারুণ।
ওরে লেখাটা কত্ত বড় হয়ে যাচ্ছে রে।
বাকীটুকু আরেকদিন লিখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।