আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধান পুনর্মুদ্রণ ও অন্যান্য বিষয়ে একটি গবেট নোট: প্রধানমন্ত্রীর প্রতি

গেরিলা কথাবার্তা
পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের ফলাফল নিয়ে উকিল কামাল হোসেন প্রথম গবেট মন্তব্যটি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের পর সংশ্লিষ্ট সংশোধনীগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে। এখন পুরনো সংবিধানের কোন অস্তিত্ব নেই। ’ জ্যোষ্টতা লঙ্ঘন করে নিযুক্ত সদ্যনতুন প্রধান বিচারপতি, যিনি পঞ্চম সংশোধনী মামলা, স্বাধীনতার ঘোষক মামলা, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার রায়দাতা- শুধু তাই নয়- ভবিষ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুগত প্রধান উপদেষ্টা বানানোর ইচ্ছেতেই যাকে নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে- সেই এবিএম খায়রুল হক তাঁর প্রথম পাবলিক আলাপে সংবিধান পুনর্মুদ্রনের আহবান জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। এই হাস্যকর অবাস্তব আইনবহির্ভূত আহ্বান- উকিলের মুখে শুনতে কৌতুক লাগলেও প্রধান বিচারপতির মুখে শুনতে মোটেই কৌতুক লাগছে না, বরং মনে হয় বড়ো রকমের কিছু ঘাপলা ঘটছে।

কেবল রায় এবং গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তনের এই ভয়ানক খেলায় তিনি কেবল রায় দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই- বরং পাবলিক ফোরামে সরকারকে সংবিধান পরিবর্তন নয় পুনর্মুদ্রনের আহ্বান জানাচ্ছেন। এমনকি সরকারী দল লোক দেখানো নিয়ম রক্ষার তাগিদে হলেও তথাকথিত সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি গঠন করেছে- কিন্তু জনাব খায়রুল হক সাহেব চাটুকারিতায় একধাপ এগিয়ে গেছেন- তিনি সংসদীয় কমিটির এই কর্মযজ্ঞকেও থোড়াই তোয়াক্কা করছেন, তার আগেই সরকারকে সংবিধান পুনর্মুদ্রনের আহ্বান জানাচ্ছেন। বিচারালয়ের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করে বিচারালয়ের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের এই দলীয় যজ্ঞ এবং একই সাথে এই যজ্ঞে বিচারালয়ের কুশিলবদের নগ্ন অত্যুৎসাহ কোনটাই খুব ভাল ইঙ্গিত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদিও একটি দলের নেতা, এবং তাঁর পিতার মতই প্রশংসা, চাটুকারিতা এইসব ভালবাসেন- নিজেকে কেন্দ্র করে জননৈরাজ্যকে উপভোগ করেন খুব- কিন্তু এইসবের ফলাফল কি তিনি কল্পনা করতে সক্ষম না? বর্তমান বাংলাদেশের জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিকদের মধ্যে সরকার ও আওয়ামীলীগের পেশি শক্তির প্রতি যে সন্ত্রস্থ ও অস্থিরতার ভাব বিরাজমান- গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক তৎপরতার উপর যে প্রতিনিয়ত খড়গ, যে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশে- গণবিরোধী ও ফ্যাসিবাদি অবস্থানের কারণে সরকারের সাথে জনগণের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে- আমরা ভাবতে চাই- উল্লেখিত চাটুকারবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে সেইসব বিষয়ে যথাযথ সংবাদ দিচ্ছে না। যার প্রমাণ জাতিসংঘের অনুষ্ঠান থেকে দেশে ফেরার পর প্রধান সড়কগুলো ব্লক করে করে দিয়ে কয়েক ঘন্টা ধরে জনগণকে মারাত্মক দুর্দশায় ফেলে দেশের আনাচে কানাচে থেকে কর্মী জড়ো করে প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধণা প্রদান, যেন তাঁর ভ্রম হয় এখনো এই সরকার এবং তাঁর উপচে পড়া জনপ্রিয়তা বিদ্যমান।

দেখা গেল, বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না যাওয়ায় ৪৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বাহির করে দেওয়া হয়েছে। পাবনার প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সম্মিলিত পিটুনি- প্রতিকার চাওয়ায় বদলী এবং সবাইকে ওএসডি করে দেওয়ার ঘটনা, প্রশাসনে দলীয়করণের ব্যাপারে কয়েকজন কেবিনেট মন্ত্রী এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য ঘোষণা- বিপরীত কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ এর অবিরাম পরষ্পর খুনোখুনি, তারপর তার প্রতিকার না করে দলের ভিতর ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার- যেখানেই আন্দোলন, বিরুদ্ধ মত, ছাত্র বা শ্রমিক অসন্তোষ- সেখানেই শিবির বা যুদ্ধাপরাধীদের ষড়যন্ত্র খুঁজে পাওয়া- এইসব কীসের আলামত? প্রধানমন্ত্রী কি বুঝতে অক্ষম যে, একটি অন্যরকম জরুরী অবস্থা জারি রেখেছেন তিনি, তাঁর দল এবং তাঁর চারপাশের এইসব ক্ষতিকর চাটুকরবৃন্দ- যা তাঁকে এবং তাঁর দলকে গণবিরোধী অবস্থানে নিয়ে এসে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং জনগণ কখনো কাউকে ক্ষমা করে না। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় এবং বিচারবিভাগ নিয়ে কয়েকটি বরাত: আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের পঞ্চম সংশোধনী ভাবনা বাংলাদেশের 'উত্তর-ঔপনিবেশিক' বিচারকবৃন্দ: ব্লাক স্কিন, হোয়াইট মাস্কস
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.