প্রকৃতির যে পরিবেশে আমরা মানুষেরা এবং অন্য জীবেরা বেঁচে আছি সে পরিবেশের ভারসাম্যের উপরই নির্ভর করছে আমাদের জীবন এবং মরণও। আমরা নির্বিচারে চিন্তাভাবনা শূন্যভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ইচ্ছেমতো দূষিত করে চলেছি। কী কী কাজের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ দূষিত করে ভয়ংকর সর্বনাশকে ডেকে আনছি সেগুলো সঠিকভাবে জানেন কেবল মুষ্টিমেয় শিক্ষিত লোক আর বুদ্ধিজীবীরা। কিন্তু কেবল তাদের নিয়েই তো আর সমাজ গঠিত হয়নি। সমাজের ৯০ ভাগ মানুষই সে সব অপকর্ম সম্পর্কে সচেতন নন।
আর যে একআনা লোক সেগুলো জানেন তাঁরাও সে সব কাজ করতে মোটেই উৎসাহী বা আন্তরিক নয়।
লক্ষ লক্ষ পেট্রোল-ডিজেল চালিত যানবাহনের পরিত্যক্ত বিষে বাতাস বিষাক্ত হচ্ছে প্রত্যহ। ছোট-বড় মিলে হাজার হাজার কল-কারখানার বিষবাষ্পও বাড়াচ্ছে বাতাসে বিষের পরিমাণ। ওই সব কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থে দূষিত হচ্ছে মাটি, নদী। রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত বিশেষ গ্যাসের ধাক্কায় ফুটো হচ্ছে ওজন স্তর।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি সোজা এসে পড়ছে পৃথিবীতে। নির্বিচারে বন ধ্বংস করে কমাচ্ছি জমির উর্বরতা, কমাচ্ছি বৃষ্টিপাত, কমাচ্ছি প্রাণধারণের অমৃত অক্সিজেন। হু হু করে বাড়ছে পৃথিবীর তাপ। ফলে গলছে মরুদেশের কোটি কোটি টন বরফ। বেড়ে যাচ্ছে সাগরের পানি।
এভাবে চললে খুব তাড়াতাড়ি সমুদ্র গ্রাস করবে কোটি কোটি মানুষের ঘর-বাড়ি, বাসভূমি, নগর আর দেশ। মানুষ তথা জীবের বেঁচে থাকার আসল উপাদান পানি-বাতাস-আলো আর পায়ের তলার মাটি এ সবগুলোর উপরই আমরা করে চলেছি নির্মম কুঠারাঘাত।
বৈজ্ঞানিকেরা বার বার সাবধান বাণী উচ্চারণ করে চলেছেন, বাতাসে বিষ বাড়ছে, পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে, আলোতে চলে আসছে মরণরশ্মি, পানি দূষিত হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নেমে যাচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বে পানীয়জলের চরম সংকট দেখা দেবে। কিন্তু এসব কথা নিয়ে কারু মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
অনেকেই বলেন যে, ‘এসব হতে এখনও অনেক দেরি আছে।
আমাদের জীবদ্দশায় এসব কিছু হবে না। ’ এটা বড়ই স্বার্থপরের মতো ভাবনা। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে ভাবব না? আজ যে শিশুটিকে আদরে আদরে কোলে-পিঠে করে মানুষ করছি- যে শিশুটির আধো আধো বোলে মুগ্ধ-মোহিত হচ্ছি, তার জন্য ভাবব না? পৃথিবীটাকে তার বাসযোগ্য করে রেখে যাব না? তাকে কি ছেড়ে দিয়ে যাব এমন এক রুক্ষ, মরণশীল পৃথিবীতে যেখানে সে ক্ষুধার্ত হয়ে একমুঠো অন্নের জন্য হাহাকার করবে? বিষাক্ত আলো-হাওয়ার কামড়ে আক্রান্ত হবে মরণ ব্যাধিতে? এক বুক বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য খাবি খাবে? এক চুমুক পিপাসার পানি না পেয়ে তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে মরবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।