হট নিউজ
যুদ্ধাপরাধের বিচার মহাজোট সরকারের অনেকগুলো নির্বাচনী অঙ্গিকারের একটি। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের তালিকার নিম্নদেশে এর অবস্থান ছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জনগণের কাছে কৃত সকল অঙ্গীকার বিস্মৃত হয়ে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধ বিচারের এক দফা মনে রেখেছে। যে কোন অপরাধের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচারে কোন বাধা নেই। যুদ্ধাপরাধ এ থেকে মোটেই আলাদা নয়।
কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ বা হবুচন্দ্রীয় পাতানো ও প্রহসনের বিচার অনুষ্ঠান করা হয় তাহলে এ জাতি কোন দিনই তা মেনে নেবে না বরং বিচারের প্রহসনকারীদেরই সময়ের ব্যবধানে একদিন জাতি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। কিন্তু সরকার যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে তাতে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। সরকার যুদ্ধাপরাধের তদন্ত কমিশন, প্রসিকিউসন ও ট্রাইবুনালে দলীয় লোকদের বসিয়ে কথিত বিচারের নামে রীতিমত খেল-তামাসা শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা ইতিমধ্যেই বিশেষ উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে কথিত অকুস্থলে তদন্তের নামে রীতিমত নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তদন্ত সংস্থা সরকার দলীয় লোক ও ঘাদানিক দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে তদন্তের নামে যা করছে তা সচেতন মানুষের হাস্যরসের খোরাক হয়েছে।
তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজানো সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে জনসমক্ষে অপপ্রচার শুরু করেছে যে, জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। অথচ তদন্তকারীদের এমন মন্তব্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ, তদন্ত কোন বিচার নয়। তাই কোন কিছু নিশ্চিত করে বলার অধিকার তাদের নেই। অভিযোগ বিচারের সন্মুখীন হওয়ার আগে কোন পক্ষের নিশ্চিত মন্তব্য ন্যায় বিচারকেই ব্যাহত করে।
মূলত সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে চায় না। আসলে এ ম্যাচের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত হয়েই আছে। শুধু ছেলে ভোলানো আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আইনী মোড়ক লাগানোর আনুষ্ঠানিকতা বাকি। কথিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সরকার সেই অপকর্মটি সম্পাদন করতে চায়। আর আন্তর্জাতিক আদালতের রায় যে পূর্ব নির্ধারিত এর প্রমাণ মেলে গত ২৬ মার্চ ধানমন্ডিতে ১৪ দল আয়োজিত এক সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের উক্তি থেকে।
তিনি তার অতি উৎসাহী বক্তব্যে বলেছেন, ‘‘নিজামী-মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে’’। এ থেকেই বিচারের নামে সরকারের দুরভিসন্ধি সুস্পষ্ট।
যে দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বিশেষ দলের নেতাদের যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, সে মানদন্ডে দেশের সকল বড় বড় রাজনৈতিক দলে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। এমন কী খোদ আওয়ামী লীগেও যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা নগণ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার পিতামহ রাজাকার ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিয়াই মুসা বিন শমশেরও নামজাদা রাজাকার ছিলেন। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ আছে। আইন প্রতিমন্ত্রীসহ তার পুরো পরিবারই রাজাকার ছিলেন। ময়মনসিংহে আওয়ামী এমপির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাও হয়েছে। এমন কী ২২ সেপ্টেম্বর খোদ আইনমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী টিকিটে নির্বাচিত ৪৩ জন সদস্য পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় দল তাদেরকে বহিষ্কার করেছিল।
কিন্তু সরকার তাদের বিচারের ব্যবস্থা না করে যুদ্ধাপরাধের কথিত বিচারের নামে সরকার শুধু মাত্র একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে জনসমক্ষে জানান দিয়েছে যে, তারা শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান।
সরকার জাতীয় সকল সমস্যা উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারলেই দেশে আর কোন সমস্যা থাকবে না। বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তদানীন্তন আওয়ামী সরকার ১৯৭২ সালে ত্রিপক্ষীয় শিমলা চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে বিচারের নামে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে আত্মঘাতী ও জাতিসত্তাবিরোধী খেলায় মেতে উঠেছে।
আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এ্যাক্ট-১৯৭৩ ও প্রণয়ন করা হয়েছিল পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। আর দেশীয় কথিত দালালদের বিচারের জন্য দালাল আইন প্রণীত হয়েছিল। এ আইনে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে কারো কারো শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু কোন জামায়াত নেতার নামে এ আইনে কোন মামলা তো দূরের কথা দেশের কোন থানায় তাদের নামে কোন জিডি তথা সাধারণ ডাইরী করাও সম্ভব হয়নি। আর পরবর্তীতে সরকার কথিত দালালদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং দালাল আইন রহিত হয়।
কিন্তু মহাজোট সরকার মূল যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে সে আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার করতে চাইছে। আইনগতভাবে যার কোনই সুযোগ নেই। সরকার যদি সত্যিকারেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আন্তরিক হয় তাহলে সবার আগে পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠানো ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে এতে বিচার করতে হবে। তারপর তাদের কথিত সহযোগিদের কথা আসতে পারে। কিন্তু সরকার সে সরল পথে না গিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রাষ্ট্রের কতিপয় সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানহানির আয়োজন করে জাতিকে বহুধা বিভক্ত করে সম্প্রসারণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সরকার যে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় তা সর্ব সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এ্যাক্ট-১৯৭৩ অনুযায়ী তদন্ত ছাড়া কাউকে আটকাদেশ দেয়ার বিধান নেই। অথচ গত ২৬ জুলাই/১০ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতাকে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যায় ও বেআইনীভাবে আটকাদেশ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট-এর সংশোধনীতে ধারা ১১(৫) অনুযায়ী চার্জ গঠনের আগে কোন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করতে পারেনা। কিন্তু সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সে কাজটি করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের মন্তব্য বেশ প্রণিধানযোগ্য। তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘‘জামায়াত নেতাদের আটকাদেশ মোটেই বিধি সম্মত হয়নি। ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে বেআইনীভাবে আটকাদেশ দিয়েছে’’। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘আইনের ব্যাখ্যা যদি নিজামী-মুজাহিদদের পক্ষে যায়, তাতে তার কিছূ করার নেই’’। এর মাধ্যমে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, সরকার বিশেষ উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধের নাটক মঞ্চস্থ করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।