কল্যাণের কথা বলি, কল্যাণের পথে চলি।
এই ব্লগে এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক একটা বিষয় হল যুদ্ধাপরাধ। একদল মানুষকে অহড়হ যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তাঁরা সব সময় একবার অমুককে আরেকবার তমুককে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কেউ কেউ তাদের বিচারের দাবী করেন, যার সাথে আমি নিজেও একমত পোষণ করি।
কারণ যুদ্ধাপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একবার হয়ে গেলে তখন আর ময়দানে এ বিষয়টা নিয়ে হাউ-কাউ করাও বন্ধ হবে, যা স্থিতিশীল সমাজের জন্য খুবই জ়রূরী। একবার বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেলে তখন স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক শিকারীরা তা আর ময়দান ঘোলা করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা।
আবার কিছু মানুষ আছেন - যারা ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অধিকারী - তারা কোন বিচারের দাবী-টাবী করেননা। তাদের অবস্থা হলো কিছু মানুষকে তারা নিজেরা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করবেন অথবা কোথাও কিছু মানুষ সম্পর্কে পড়েছেন যেখানে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তারপর পারলে নিজেরা গিয়েই এদের হত্যা করে আসেন। আসলেই কেউ যুদ্ধাপরাধী কিনা এটা জানা এরা প্রয়োজন বোধ করেন না, এবং বিচার শালিসের দরকারও তাদের অভিধানে নেই। কারন এরা মনাব সভ্যতাকে পিছনের দিকে চালানোর আকাঙ্খী অসভ্য। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাউকে যুদ্ধাপরাধের তকমা লাগিয়ে নিজেরাই রায় দিয়ে দেন, অপরাধ প্রমাণের কোন প্রয়োজনীয়তা এদের নেই। এ পক্ষটা যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও ক্ষতিকর, কারণ এরা সমাজে ঘৃণা-এবং বিদ্বেষ জিইয়ে রেখে তাকে শতগুনে বাড়াতে সাহায্য করে।
সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
যার যা মত থাকুকনা কেন এ ব্যাপারে কতগুলো বিষয় জানা দরকার সবার। যুদ্ধাপরাধ কি? যুদ্ধে শুধু কোন একটা পক্ষে অংশ নিলেই কি কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়? যুদ্ধাপরাধী কি শুধু বিজিতদের মধ্যে থাকে, নাকি বিজয়ীদের মাঝেও যুদ্ধাপরাধী থাকতে পারে? এছাড়াও যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী করেন তারা আসলেই তা আন্তরিকতার সাথে করেন না ময়দান ঘোলা করার জন্য করেন? তারা কি সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান? তাদের এই বিচার চাওয়া কি মানবতার ও সুবিচারের স্বার্থে নাকি শুধু তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে?
যুদ্ধাপরাধ কি?
যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক যুদ্ধের নীতিমালা লংঘন করাই হল সংক্ষেপে যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের নীতিমালা হল যুদ্ধ সংক্রান্ত ঐ সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন যা জেনেভা কনভেনশন সমুহের মাধ্যমে বিশ্বের জাতিসমূহ গ্রহন করতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল যুদ্ধবন্দী হত্যা, বেসামরিক জনগন হত্যা, ধর্ষণ, আত্মসমর্পনকারী শত্রু সৈন্য হত্যা, গণহত্যা, ইত্যাদি।
যুদ্ধাপরাধী কে?
যে কেউ যুদ্ধকালীন সময়ে উপরোক্ত অপরাধগুলো করবে সেই যুদ্ধাপরাধী।
যুদ্ধে কোন একটা পক্ষে অংশ নিলেই কি কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যান বা যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে যান?
উত্তর হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোন একটা পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করলেই কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়না। সুস্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত অপরাধ করা ব্যতিরেকে কাউকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা যেতে পারেনা। আবার কোন একটা পক্ষে থাকলে তাকে যুদ্ধাপরাধ করার পরও নিরপরাধ বলা যেতে পারেনা।
যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সব দল বা গোষ্ঠির মাঝে থাকতে পারে।
স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী কি এক?
না! শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধিতা যুদ্ধাপরাধ নয়। আবার স্বাধীনতার পক্ষে থাকা মানেই যুদ্ধাপরাধ মুক্ত থাকা নয়। যুদ্ধের নীতিমালা লংঘন করে যে যুদ্ধ করেছে সেই যুদ্ধাপরাধী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত কিনা?
হ্যাঁ।
কারন এতে করে মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি বিধান করা যাবে এবং এধরণের অপরাধ প্রবণদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা যাবে। এ বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নয়, বরং নিতান্তই মানবতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে।
এ বিচার কি শুধু এক পক্ষের যুদ্ধাপরাধীদের করতে হবে?
না। সব পক্ষের যুদ্ধাপরাধীরাই সমান অপরাধী। তাদের অপরাধের ধরণের উপর ভিত্তি করে তাদের সবার শাস্তি নির্ধারিত করা উচিত।
তারা কোন পক্ষে যুদ্ধ করেছিল এটা বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধ করেছিল সেটাই বিবেচ্য।
বিঃদ্রঃ যারা মন্তব্য করবেন তাদের জন্য - আমি কোন ধরণের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বরদাশ্ত করতে পারিনা। ব্যক্তি আক্রমন আর গালাগালির অভ্যেস যাদের আছে তারা এ ব্লগে অনাকাংখিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।