আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছি



শাহীন গল্ফ এন্ড কান্ট্রি ক্লাব (এসজিসিসিপি) একটি উদীয়মান গলফ ক্লাব। ক্লাবটি কর্ণফুলি নদীর ধারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আঙিনায় সুন্দর মনরোম পরিবেশে অবস্থিত । এই গলফ ক্লাবেরই আমি একজন স্টাফ । কাজ করতে করতে যখনই বোর ফিল করি ,ঠিক তখনই ঘারটা আলতো ঘুরালেই চোখের সম্মুখে ভেসে ওঠে এয়াপোর্ট রোডে চলিত নানা রকমের যানবহন, কর্ণফুলিতে চলন্ত জাহাজ, মাঝির এপার ওপার করা, চোখ দুটো আর একটু প্রসারিত করলেই ওপারে মাথা উচুকরে দাড়িয় থাকা পাহাড়ের সারি যেন ওগুলো চাঁটগায়ের নওজোয়ান পাহারা দিচ্ছে তার মাতৃ ভুমিকে । এসব ছাড়াও ঘাটিঁ এলাকায় হওয়া বিমান ওঠা নামার দৃশ্য তো প্রতিয়ত উপভোগ কারিই।

এসব দেখে আবার কাজে মনদিই । কিন্তু আজকে ( ২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০১০ ইং) নিজ চোখে যা দেখলাম তা হয়তো সবার দেখার সুযোগ হয়না শুধু সিনেমা ছাড়া তাও আবার হরর কিংবা হলিউডি মুভি ছাড়া দেখা সম্ভব না । প্রতিদিনের ন্যায় কাজ করছি একটু আগেই বস এসে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তিনিও অন্য কাজে চলে গেলেন, কাজে মনযোগ দিতে না দিতেই একটা বিকট শব্ধ হল, ভাবলাব কোন খালি বড় লরি টরি হয়তো রাস্তার গ্যাপে পড়ে এরকম শব্দ হল । ইতিমধ্যেই একটা ফাইটার ওড়ে যাওয়ার শব্দও শুনতে পেলাম । সময় তখন দুটো পরনের কিংবা বিশ মিনিট হবে।

ঠিক বুঝতে পারলাম না বাইরে কি ঘটল! আমার অন্য এক বস বললেন রফিক ভাই , কোন লরি টরি হয়তো উল্টে গেল -আসেন দেখে আসি - আমি তার কথায় সায় দিয়ে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ করে তার সাথে দৌড়ে বাইরে গেলাম ইতিম মধ্যে দু 'চারজন কর্ণ ফুলির ধারে জমা হতে লেগেছে । কেউ একজন কলে উঠল রফিক ভাই এফ সেভেন ক্রাশ করেছে , আৎকে উঠলাম! আকাশের পানে তাকাতেই দেখলাম একটা মানুষ সুন্দর ভাবে দোলনায় বসা অবস্থায় আকাশ থেকে ধীরে ধীরে কর্ণফুলি নদীর পূর্ব পারে পানির কিনারায় বিলনি হয়ে যাচ্ছে । মনে হল যেন স্বর্গীয় কোন দেব দূত আকাশ থেকে জলে পড়ছে আর তাই দেখার জন্য মানুষ কর্নফুলির দুই পাড়ে জমায়েত হয়েছে । নিজের চোখ কে বিশ্বাষ করাতে দেরি হল , বিমানের পাইলট অক্ষত, এবং একদম নিরাপদে অবস্থায় পানিতে অবতরণ করল । বিমানটি এতক্ষণে কর্ণফুলির ঘোলা লোনা পানিতে বিলিন হয়ে গেল ।

কাছেই একটি খেয়ার সাম্পান পাইলট কে উদ্ধার করে নদীর পূর্বকূলে নিয়ে সেবা শুশ্রুশা দিতে লাগল আমারা এপাড় থেকে দাড়িয়ে লোকজনের ভিড় ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না । ইতি মধ্যে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স সবজায়গায় সতর্ক সংকেত পাঠিয়ে দিয়েছে । উদ্ধাকারী হেলিক্পটার চলে গেল ওপার এদিকে নদীর পশ্চিম পাড়ে সকল অফিসারের সরি বিভিন্ন ভাবে খোজ নেওয়ার চেষ্টা করছে । আরটি (ওয়্যারলেস) তে খবর আসছে -পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সানজিদ সার প্যারাসুট করার সময় অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন কিন্তু তীরে নেওয়ার পর জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন । শুনে আমারও খুব ভাল লাগল ।

পাইলট বেঁচে আছেন মায়ের ছেলে মায়ের কাছে যেতে পারবে, এই মনে হয়ে আর কোন দুঃক থাকল না মনে । যদিও সরকারের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল কিন্তু জীবনের চেয় অর্থের মূল্য বেশী নয় নিশ্চয় !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.