আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৬২ থেকে ২০১০ মৌলিক পাথক্য কতটুকু ?

কহ কানে কানে শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলও বারতা

“ শিক্ষা সম্পর্কে জনসাধারণের চিরাচরিত ধারণা অবশ্যই বদলাতে হবে। সস্তায় শিক্ষা লাভ করা যায় বলিয়া তাহাদের যে ভুল ধারণা রয়েছ, তা শীঘ্রই ত্যাগ করিতে হবে। যেমন দাম তেমন জিনিস – এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন শিক্ষার ব্যাপারেও তেমনি এড়ানো দুষ্কর ”। শরিফ শিক্ষা কমিশন ১৯৬২। এই উদ্ধিতি টি দেবার কারন লেখার শেষে দেয়া আছে ।

এই লেখাটির কারন ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১০, দৈনিক প্রথম আলো তে প্রকাশিত “ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতি বৈষম্য ” শিরোনামে প্রকাশিত কয়েকজন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের লেখার প্রতিক্রিয়া হিসাবে লিখলাম। কারন বিষয়টা যতটা না বৈষম্যের তারচেয়ে বেশী বাণিজ্যের । কারন এখানে টাকা বড় মেধা নয়। আপনারা বলেছেন একটি উন্মুক্ত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হোক এবং একটি মানদণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক যে শতকরা ৭০ কিংবা ৮০ ভাগ নম্বর পেলেই কেবল ওই ছাত্র ভর্তির সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন তাহলেই তিনি ভর্তির সুযোগ পাবেন।

ধরা যাক, একজন ছাত্র নৈশকালীন কোসের উন্মুক্ত ভর্তি পরীক্ষাতে বেশী মাকস পেলো কিন্তু তার ওই কোসে ভতি হবার টাকা নাই তাকে কী ঐ কোসে ভতি করবে ? মনে হয় না । কারন বিষয়টা মুনাফার । আর বৈষমের কথা বলেন এই দেশে ১১ ধারার শিক্ষা ব্যবন্থা রয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয় পযায়ে গ্রেডিং ব্যবস্থা তেও বৈষমের ছোয়া কোথও ৪ আবার কোথাও ৫। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ ও অর্থ বরাদ্দ সারা পৃথিবী বা এশিয়ার নয় দক্ষিন এশিয়ার যে কোন দেশের তুলনায় কম।

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবার পর দেশের মাত্র ৪.০৪% উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারে। কিন্তু এর হার ভারতে ১১.৯%, মালয়েশিয়াতে ২৯.৩%, থাইল্যান্ডে ৩৭.৩%। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যায় হয় শিক্ষাবাজেটের ৮.৮৮%, যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৭.৬৬%। কিন্তুভারতে ২০.৩%, থাইল্যান্ডে ১৯.২%, মালয়েশিয়াতে ৩৩.৩%। মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ও রয়েছে বৈষম্য- সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪,৪১৩ টাকা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৭৭,৩৫৯ টাকা. প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫,৫১৯ টাকা , মেডিকেল কলেজ ১,৫৪,৪৩০ টাকা।

অন্যদিকে এই বরাদ্দ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নরুপ, যা বৈষম্যের নির্দেশক- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ৬৫,৮২২ টাকা, আই, ইউ ভি ৮৭,৯৭৭ টাকা, এইউভি ৭২,২১১ টাকা। ইউজিসি এর গবেষনা মতে ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছে ১০,৩৩,০৪৯ জন। এর মধ্যে ২৬ টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১,১২,৪৩০ জন বা ১০.৩% ৫৪ টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬২,৮৫৬ জন বা ৬% , ১,৫৯৭ টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুক্ত কলেজ থেকে সর্বাধিক ৭৪.৯% বা ৭,৭৩,৪৯২ জন এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুরশিক্ষন মাধ্যমে প্রায় ৮% বা ৮৪,২৭১ জন। (সুত্র: দৈনিক প্রথম আলো . ১১ ‡m‡Þ¤^I ২০০৬.) সাম্প্রতিক সময়ে ঢাবি ও রাবি তা নৈশকালীন মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ দেখা গেছে তার মুল কারন শিক্ষা বাণিজ্য। যার টোটকা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সহ শ্রদ্ধেয় (!) দাতা গোষ্ঠী ( অর্থাৎ আমরা এখনো মানসিকভাবে পরাধীণ, আমরা গরু কিনতেও ৩য় পক্ষের সাহায্য চাই !!! ) ।

এর সারমর্ম হচ্ছে, বাবারা নিজেদের পেটের খোরাক তোমরা নিজেরা জোগাড় করো। এটা মুলত বাস্তবায়িত হবে ইউজিসি ( পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি ¯^vqËkvwmZ প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে ইউজিসি কেন ? ) এর ২০ বছর মেয়াদী কৌশল পত্র এবং পিপিপি ( পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) এর মাধ্যমে। এর ধারাবাহিকতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নৈশ কালীন কোর্স চালু, বেতন ফি এর লাগামহীন বৃদ্ধি অভ্যাহত রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের এহেন বাণিজ্যিকীকরন কে পরিপূর্ণতা প্রদানই মুলত ২০ বছর মেয়াদী কৌশল পত্র এবং পিপিপি -এর মুল jক্ষ্য । যদিও জগন্নাথ বিশইবদ্যালয়কে এর জন্য মডেল ধরা হয়েছিল কিন্তু ইউজিসি সে জায়গা থেকে m‡র যেতে বাধ্য হয়েছে ।

যার ফলে ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে we‡ক্ষvf চোখে পড়ছে। বর্তমান সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ সমুহে বেতন - ফি ১৫% পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে wkক্ষাক্ষে‡Î বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের কথামতো কাজ করলেও ইউনেস্কের সুপারিশ অনুযায়ী wkক্ষাক্ষে‡Î মোট বাজেটের ২৫% ও জাতীয় আয়ের ৮% বরাদ্দের বিষয়ে এদেশের শাসক শ্রেণীর মুখে কোন কথা শুনা যায় না । আপনারা বলেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া কি কোনো অপরাধ? না অপ্রাধ নয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করি না।

তারাও এদেশের সন্তান । সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ৩শ ৯০ জন শিক্ষকের মধ্যে ১শ ৪৯ জনই রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। ফলে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বর্তমানে শাবিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ১২ জনই রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন শিক্ষক।

গণিত বিভাগে ২৬ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন ১২ জন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১৬ জনের মধ্যে ৬ জনই রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২১ জনের মধ্যে ১২ জনই শিক্ষাছুটিতে। কেমিস্ট্রি বিভাগে ২৮ জনের মধ্যে ৮ জন শিক্ষাছুটিতে। পরিসংখ্যান বিভাগে ২৫ জনের মধ্যে ১১ জন শিক্ষাছুটিতে।

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২১ জনের মধ্যে ১২ জনই শিক্ষাছুটিতে। ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স বিভাগে ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন শিক্ষাছুটিতে। সমাজকর্ম বিভাগে ১৯ জনের মধ্যে ৬ জন শিক্ষাছুটিতে। ইংরেজী বিভাগের ১৯ জনের মধ্যে ৮ জন শিক্ষাছুটিতে। ফুড এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগে ১০ জনের মধ্যে ৩ জন শিক্ষাছুটিত।

পেট্রোলিয়াম এন্ড জিয়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৯ জনের মধ্যে ৩ জন শিক্ষাছুটিতে। আর্কিটেকচার বিভাগে ৯ জনের মধ্যে ২ জন শিক্ষাছুটিতে। জেনেটিক্স ইঞ্জনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন শিক্ষাছুটিতে। অর্থনীতি বিভাগে ২৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন শিক্ষাছুটিতে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯ জন শিক্ষাছুটিতে।

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন শিক্ষাছুটিতে। নৃবিজ্ঞান বিভাগে ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন শিক্ষাছুটিতে। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগে ১২ জনের মধ্যে ৩ জনই শিক্ষাছুটিতে। লোকপ্রশাসন বিভাগে ৯ জনের মধ্যে ২ জন শিক্ষাছুটিতে। বাংলা বিভাগে বর্তমানে ১০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ২০ জনের মধ্যে ৬ জন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। ( তথ্য সুত্র ঃ ঢাকা নিউজ ২৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ ) । এখন যদি এই বিভাগ গুলি নৈশকালীন মাস্টার্স কোর্সে ছাত্র ভতি করে তাহলে দিবা কালীন শিক্ষাথীদের কি অবস্থা হবে তা কি বিবেচনার দাবী রাখে না। এমনিতেই তো ফল প্রকাশে দীঘ সুত্রিতা, শ্রেণী কক্ষ সংকট তো রয়েছে । আপনারা বলেছেন কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হবে ।

আসলে বেসরকারী weশ্বe`¨vjq আইন ২০১০ এ এখানে আমরা স্পষ্টত দুটি শ্রেণী দেখতে পাই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক ও শিক্ষার্থী । আমাদের দেশে যেখানে অধিকাংশ মানুষ যেখানে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে, সেখানে শিক্ষা বৈষম্য ও বাণিজ্যিকীকরন আমাদের কে কোথায় নিয়ে ধার করাবে আমাদের এতা ভাবা উচিত । আপনারা শিক্ষানীতিতে শিক্ষাকে উন্মুক্ত করার কথা বলেছেন, অথের কথা বলেছেন, কিন্তু শিক্ষার দায় ভার রাষ্টের একথা বলেননি । শিক্ষা দিবসের দিনে এটাই হবার কথা ছিলো মুল প্রতিপাদ্য। উচ্চ শিক্ষার আন্তজাতিক মান বজায় রাখার জন্য শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে হবে ।

সরকারি অনুদান ছাড়া ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোকে ব্যায় নিবাহের জন্য শিক্ষাথীদের বেতন ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে । শিক্ষা নীতি ২০১০ (অধ্যায় উচ্চ শিক্ষা অনু ১০) পাঠক এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ প্রশ্ন হলো ১৯৬২ থেকে ২০১০ মৌলিক পাথক্য কতটুকু ? সত্যজিত দত্ত পুরকায়াস্থ সাধারন সম্পাদক , বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদ ও সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.