আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুশিয়ার! ঘরের ধুলোয় এলার্জি

শেখ আনোার

হুশিয়ার! ঘরের ধুলোয় এলার্জি শেখ আনোয়ার আপনি জানেন কি, যে কোন পরিচ্ছন্ন বাড়িতেও ধুলো থেকে এলার্জি হতে পারে? আর এই এলার্জির কারণেই বছরব্যাপী মানুষ ভোগে । নাক থেকে পানি ঝড়ায়, চোখ চুলকানি, চোখ থেকে পানি ঝড়ায়। আর এসবের মূল কারণই হচ্ছে ঘরের ধুলোর জীবাণু। ধুলোর কারণে এ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, নিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাশি হয়। কিন্তু ঘরের ধুলো থেকে এলার্জি হয় কেন? ঘরের ধুলো প্রকৃত পক্ষে অনেকগুলো জিনিসের মিশ্রণ।

এর উপাদানগুলো কম-বেশি হতে পারে এক ঘর থেকে আরেক ঘরের ফার্নিচারের প্রকারভেদে, ঘর তৈরির উপাদনের কারণে, পোষা প্রাণীর উপস্থিতির কারণে, আর্দ্রতার কারণে। ধুলোর মধ্যে থাকতে পারে সুতোর আঁশ, মানব দেহের ত্বকের মৃত কোষ, প্রাণীর লোম, আনুবীণিক জীবাণু, তেলাপোকার প্রতঙ্গ, ছত্রাকের জীবাণু, খাদ্যকণা এবং আরও অনেক পরিত্যাক্ত ক্ষুদ্র জিনিস। এগুলোর মধ্যে প্রাণীর লোম, তেলাপোকা এবং ধুলোর জীবাণু হচ্ছে প্রধান তিন বিপজ্জনক বস্তু। কোন ব্যক্তি এগুলোর যে কোনটির কারণে ভুগতে পারেন। এবং তিনি যখন ধুলোর সংস্পর্শে আসেন, তখন এলার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটে।

তাহলে ধুলোর এলার্জি হলে কি বলা চলে যে এটি একটি নোংরা বাড়ি? জী না। অবশ্য নোংরা বাড়ির কারণে এলার্জি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে । তবে স্বাভাবিক ঘর পরিস্কারের প্রক্রিয়া ধুলোর এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ ধুলোর সকল উপাদান এভাবে দূর করা সম্ভব নয়। যেমন আপনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে যত চেষ্টাই করেন না কেন, কার্পেট, মাদুর এবং বালিশ থেকে ধুলোর জীবাণু দূর করতে পারবেন না। বরং এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে পড়তে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ধুলোর জীবাণুগুলো কী কী? এর উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানানÑ অতি ক্ষুদ্র আণুবিণিক এই প্রাণীগুলো আটপায়ের অ্যারাকনাইড পরিবারের অন্তর্গত। আঁটুলি পোকা এবং চিগার একই পবিবারভুক্ত। এগুলো শক্ত দেহের অধিকারী। এরা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার উচ্চ তাপমাত্রায় ভালোভাবে বাঁচতে পারে। ৭৫-৮০ শতাংশ আর্দ্রতাই এদের পছন্দ।

আর্দ্রতা ৪০-৫০ শতাংশের কম হলে এদের বংশ বৃদ্ধি হয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের দেখা যায় না। দেখা গেছে শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এদের কারণে আক্রান্ত হয়। এ্যাজমা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই এদের সংস্পর্শে এলে এলার্জি প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এই জীবাণুদের দেহ ও মুখমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে মানুষের এলার্জি হয়।

এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বালিশে, মাদুরে, কার্পেটের ভাঁজে এবং আসবাব পত্রের তলায়। ঝাড় দিলে বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রয়োগ করলে সরে যায়। এলার্জি রোগীদের শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি দিনে ৮ ঘন্টা ঘুমান তার নাক জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় বালিশে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুগুলোর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে। সর্বোচ্চ ১৯০০০ পর্যন্ত জীবাণু থাকতে পারে।

গড়ে এই সংখ্যা প্রতি গ্রামে ১০০০। প্রত্যেক জীবাণু দিনে ১০টি নতুন জীবাণু সৃষ্টি করে। এদের বেঁচে থাকার মেয়াদ ৩০ দিন। এদের খাদ্য মূলত পশুর লোম এবং ত্বকের মৃত কোষ। সুতরাং যেখানে মানুষের বাস, সেখানেই এদের বসবাস।

এরা কামড়ায় না, অন্য কোনো রোগ ছড়ায় না এবং মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে না। এরা শুধু সেই মানুষগুলোর প্রতিই ক্ষতিকর যাদের এই জীবাণুদের প্রতি এলার্জি রয়েছে। সাধারণত বাড়িতে যেসব জীবাণুরোধক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়ে এদের অপসারণ করা যায় না। ফলে ঘরে ধুলোর জীবাণুর পরিমাণ কমানো সম্ভব হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরের ধুলোতে ছত্রাক থাকে কেন? ছত্রাক থাকে সাধারণত বাইরের বাতাসে।

তবে যে কোন বাড়িতেই ছত্রাকের কলোনি তৈরী হওয়া সম্ভব। বাড়ির বাসিন্দারা হয়তো দেয়ালে ছত্রাকের কলোনি দেখতে পায় না। কিন্তু সেটি ঠিকই তৈরি হতে থাকে। দুটি জিনিস ঘরের মধ্যে ছত্রাকের কলোনি গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রথমত: বেশি আর্দ্রতা শতকরা ৫০ এর বেশি।

পানির পাইপে ক্ষুদ্র ফুটা বা যে কোনো পানির প্রবাহ এতে ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয়ত: দেয়ালে কোন বোর্ড থাকলে বা স্যাঁতস্যাঁতে আসবাব থাকলে সেখানে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাকের স্পোর কাপড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই স্পোর থেকে সুনির্দিষ্ট জীবনচক্রের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ছত্রাক তৈরি হয় অনুকূল পরিবেশে। যেসব শ্রেণীর ছত্রাকে এলার্জি আছে, তারা ছত্রাক অধ্যুষিত বাড়িতে থাকলে নিশ্চিতভাবে ছত্রাকজনিত এলার্জির শিকার হন।

কারণ তারা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ছত্রাক গলাধ: করণ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরের ধুলোতে তেলাপোকা থাকে কি? হ্যাঁ। তেলাপোকার বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ঘরের ধুলোতে মিশে থাকে। বিশেষ করে পুরোনো বাড়ি ও ফ্ল্যাটবাড়ি সেখানে বিভিন্ন ফ্লাটে বিভিন্ন পরিবার বাস করে, সেখানে তেলাপোকা নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিবিশেষ করে এ্যাজমা রোগী এই ধরনের বাড়িতে গেলে তার উপসর্গ বেড়ে যায়।

বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তার করার জন্য তেলাপোকার দরকার খাদ্য ও আর্দ্রতা। এগুলো থেকে বঞ্চিত করতে তেলাপোকার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরের ধুলোর এলার্জি কি মৌসুমী? দেখা গেছে আমেরিকাতে ধুলোর জীবাণুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় জুলাই আগষ্ট মাসে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উচ্চ সংখ্যা বজায় থাকে। বসরে শেষের দিকে ধুলোর জীবাণু ঘটিত এলার্জির সংখ্যা সবচেয়ে কম থাকে আমেরিকায়।

এইধরনের কিছু রোগী জানিয়েছেন, তাদের উপসর্গ সবচেয়ে বেশি হয় শীতকালে, এর কারণ হচ্ছে মৃত জীবাণু এবং জীবিত জীবাণুদের বর্জ্য উভয়ই এলার্জি প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে ছত্রাকের পরিমাণেও কমবেশি ঘটে। দেখা যায় গ্রীষ্মের সময় তেলাপোকার পরিমাণ বেশি হয়। বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ বেশি হয়। আর গ্রীষ্মকালে মানুষ বাড়িতে সচারচর বেশি সময় কাটায় বলে এই সময়ে এলার্জির উপর্সগও বৃদ্ধি পায়।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনার ধুলো জনিত এলার্জি রয়েছে? এক্ষেত্রে আপনাকে এলার্জি বিশেষজ্ঞের সাহায্যে নিতে হবে। তিনি আপনার উপসর্গগুলো লক্ষ্য করবেন, আপনার গৃহ ও কর্মস্থলের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইবেন। প্রশ্ন করবেন আপনার অভ্যাস, পারিবারিক রোগের ইতিহাস, উপসর্গ কমা বাড়ার প্রবণতা, পোষা প্রাণীর ধরন সম্পর্কে। তারপরে তিনি আপনার শরীরে একটি পরীক্ষা করবেন যার নাম স্কিল-প্রিক টেস্ট। সেই সঙ্গে রক্ত পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

এই ধরনের এলার্জির উপসর্গ কমাতে কী করবেন? ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকুন। তবে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ঠিক কোন ধরনের ধুলোর উপাদান থেকে আপনি এলার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধুলোর জীবাণু পরিপূর্ণভাবে অপসারণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন, যাতে পরিমাণটা অত কম থাকে। গড়পড়তা হিসেবে মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটায় বেডরুমে।

সমীায় দেখা গেছে, ধুলো-অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শোবার ঘরের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। আর হ্যাঁ। বেছে নিন এমন শোবার জিনিসপত্র যেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং যাতে এলার্জির পরিমাণ কম থাকে। বালিশে ফোম বা তুলো ব্যবহার না করে সিনথেটিক জিনিস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত: একবার বিছানাপত্র ধুয়ে রেখে শুকিয়ে নিন।

সম্ভব হলে বেডরুমে এয়ারকন্ডিশনার ও আর্দ্রতারোধক যন্ত্র ব্যবহার করুন। আর্দ্রতা কম থাকলে জীবাণু ও তেলাপোকার বংশবিস্তার রোধ হবে। জানালায় সুক্ষè কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘন ঘন বদলাতে হবে। কাপড় চোপড় ক্লোজেটে রাখুন।

ক্লোজেটের ঢাকনা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোনো মৃত প্রাণী বা প্রাণীর অংশ থাকলে অবিলম্বে বাইরে ফেলে দিন। শোবার ঘরে কখনও পোশা প্রাণীকে ঢুকতে দেবেন না। নিয়মিত বিরতিতে ঘর পরিষ্কার করুন। মেঝে মোছার সময় স্যাঁতস্যাতে ও তৈলাক্ত কাপড় ব্যবহার করবেন না।

ঘর পরিষ্কারের সময় মুেখ মাস্ক ব্যবহার করুন। শোবার ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করাই উত্তম। ব্যবহার করলেও এমন ধরনের কার্পেট নেবেন যে গুলোর আঁশ সুবিন্যস্ত। যেসব জিনিস ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলো বেডরুমে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে ফেলুন। এমন ধরনের এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন যার দ্বারা ঘরের আর্দ্রতা শতকরা ৫০ ভাগের নিচে রাখা সম্ভব।

এসি-র ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ঘন ঘন ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে। তবে মনে রাখবেন যে ধুলোর জীবাণু বেশিক্ষণ বাতাসে থাকতে পারে না। তাই মেঝে ও দেয়াল পরিষ্কারের দিকেই আপনাকে বেশি নজর দিতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.