আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৃশ্য খন্ড খন্ড / সকাল অনন্ত



এক. আয়নায় চোখ পড়তেই থমকে যায় মন ও চোখ । আয়না বলে, একি চেহারা হয়েছে রে তোর ! ঘাবড়ে যাই । সত্যিই তো একি চেহারা হয়েছে আমার! আমার সমস্ত কিছুই এক প্রানহীন নির্জনতায় ভরা । চোখ দৃষ্টিহীন । ঠোঁট পান্ডুর এবং মৃত ।

বাথরুমে যাই । চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেই । সাথে মনেও । দেড়টি বছর পড়ে থাকা মৃত শরীরে যেন প্রান এলো। দুই. চলছে গাড়ি, চলছি আমি ।

স্মৃতির টুকরো টুকরো দৃশ্য গুলো টুকরো মনে টুকরো টুকরো টোকা দিয়ে যাচ্ছে । মেঘলা আকাশ । সেই সাথে আমার মনও কি মেঘলার সাথে আটকে আছে ? প্রকৃতি ও আমি এক ও অবিচ্ছেদ্য । প্রকৃতির নানা রং ও মাত্রা আমার শরীর ও মনের সাথে লেপটে থাকে । জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই ।

মেঘলা এক ভেজা ভেজা সবুজের সমারোহ । ঠিক আমার এখনকার মনের মতো । মনে পড়ে পিতা মাতার মুখ, বন্ধু সুহৃদদের মুখ । জীবনের বাঁকে বাঁকে এই মনে অসংখ্য মানুষের সমাবেশ ঘটেছে এবং তাদের কাউকেই আমি ভুলিনি । ভুলবোও না ।

এরকম বিষন্ন মেঘলা মনে তাদের অস্তিত্ব আমি প্রবল ভাবে টের পাই । ওরা এই ভুবনের, অন্য ভুবনের বাসিন্দা । ওদের সাথে আমার কথা হয়, ভাল লাগে। কখনও প্রচন্ড কান্না পায়, কখনও বা সুস্থির বোধ হয় । প্রথমে পিতামহ আসেন, জাফলং এ জন্ম গ্রহন করেছিলাম বলে আমার নাম রেখেছিলেন সুরমা ।

মেয়েবেলা হলেও কফিনে ঢাকা তাঁর মুখ এখনও মনে পড়ে । তাঁর যখন ছয় মাস তখন তিনি তাঁর মাকে হারিয়ে ছিলেন । আমার মাকে তিনি তাঁর মা’র করা নকশী কাঁথাটি দিয়েছিলেন আর আমার মা সেই কাঁথাটি আমাকে দিয়েছিলেন । আমি সেটা পরম যতনে রেখে দিয়েছি । পিতামহ চলে যেতেই আসেন মাতামহী, তিনি বলেন, “শিলি তুই কি আমার করা নকশী কাঁথা খানি গায়ে দেস ? নামাজ পড়স ? তোর বাবা, মা, দাদা,চাচা এবং আমরা যারা অন্য ভুবনের বাসিন্দা তাদের জন্য দোয়া করিস ? তোর যদি দুধ কদু খেতে মন চায় তবে তোর বেলা ফুফুমাকে কবি।

ওতো তোর কাছাকাছিই থাকে । ভাল থাকতে চেষ্টা করিস । ” আমার দাদি আমাকে সব সময় নামাজ পড়ার জন্য তাগাদা দিতেন । কিন্ত আমার সাথে তিনি পেরে উঠতেন না । মাতাময়ী অপসৃয়মান হন ।

এবার আমার ভাবনায় পিতার প্রবেশ । বলেন, “তে্াদের যোদ্ধা হতে দেখে আমার ভাল লাগছে । যুদ্ধ চালিয়ে যা । কখোনই যুদ্ধ হতে হটবি না। আল্লাহ তোদের সঙ্গে থাকবেন ”।

আমাদের বংশের প্রায় সবাই কোরান খতম দিয়েছিলেন একমাত্র আমি ছাড়া । আমার মা খ্রীষ্টীয় ধর্মীয় হলেও আমার দুই ভাই ও আমাকে আমার বাবার ধর্মে দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন । সেই জন্য আমাদের জন্যে মৌলবী রেখে দিয়েছিলেন । কিন্তু কোন মৌলবী আমায় বাগে আনতে পারেনি । একবার এক মৌলবী আমায় বাগে আনতে না পেরে বেতের কঞ্চি দিয়ে মেরেছিলেন ।

আমার মুখে দাগ পড়ে গিয়েছিল । মা সেই মুহুর্তে মারের দাগ দেখতে পেয়ে তাকে পত্র পাঠ বিদায় করেছিলেন। আমার দুই ভাই ছেলেবেলায় অসম্ভব শান্ত ও সুবোধ ছিল। লেখায় পড়ায় দুইজনেই মনোযোগেী ছিল । বাবা মা যা ই বলতেন তাই তারা শুনতো ।

কিন্তু আমি ছিলাম বিপরীত। পড়াশুনা তো করতামই না বরং নানা বিষয়ে তাদের সাথে তর্কে করতাম । শুধু তারা কেন প্রায় সবার সাথেই । বই খাতা বিক্রি করে স্কুলে হাওয়ার মিঠাই,শন-পাপড়ি,কটকটি. চানাচুর-মুড়ি ভাজা,আইসক্রীম খেতাম । হরলাল রায়ের বইতে পড়া সেই শৈশব স্মৃতি রচনার দুষ্ট বালক কিংবা বালিকার “দুষ্টের শিরোমনি লংকার রাজা, চুপি চুপি খাও তুমি চানাচুর ভাজা” এই কথার সাথে মিলে মিশে যায় ।

আমাদের বাসাটি ছিল বেশ বড়সড় একটি পাঠাগার । সেখানে ছিল নানা ধরনের বইয়ের সমাহার । এছাড়া ছিল স্কুলের পাঠাগার এবং আমার বাবা যেখানে চাকরী করতেন বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানী সেখানে ও ছিল বিরাট পাঠাগার । সেখান থেকেও বই নিয়ে আসতেন । এ ছাড়া বাবা বিভিন্ন পত্র পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন।

যেমন- দেশ, প্রসাদ,উদয়ন,উল্টোরথ,বিচিত্রা রিডার ডাইজেস্ট ইত্যাদি । এগুলো পড়াতেই মগ্ন থাকতাম । এছাড়া সিনেমা নাটক গান কবিতা আমায় বেশি টানতো । সিনেমা পত্রিকা গুলো রীতিমত গোগ্রাসে গিলতাম । পড়ার বই না পড়ে অন্যান্য দিকে বেশী মনোযোগী থাকতাম বলে পরীক্ষার ফলাফল নঞার্থক হতো ।

বিশেষ করে অংক ইংরেজী বিজ্ঞান এবং ভূগোল এ । ফলে আমার পিঠে উত্তম মধ্যম পড়তো । তর্ক করলে মা আমার মুখ চেপে ধরতেন। যার ফলে মুখে মায়ের নখের আঁচড় পড়ে যেত । মা ছিলেন ধৈর্য ও সহ্যের দিঘল মূর্তি।

অনেক ঝড় ঝাপটায়ও এত টুকু বিচলিত হননি । সুদৃঢ়তায় সমস্ত প্রতিকুলতাকে কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছেন । তিনি আমাদের মনের দিক থেকে মানুষ হতে প্রেরণা,শিক্ষা ও দীক্ষা দিয়েছিলেন । তিন.[/sb একটা ছবির দিকে আচানক দৃষ্টি আটকে যায় । একটা মেয়ে ও একটা কাঠবিড়ালি ।

ঠিক যেন খুকি ও কাঠবিড়ালি । তবে দৃশ্যটি একটু অন্যরকম । মেয়েটি কাঠবিড়ালিকে খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে,আর কাঠবিড়ালি তার লম্বা লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে ঠোঁটে তুলে নিচ্ছে খাবার । মেয়েটির সমস্তটা জুড়ে আনন্দের প্রভা। চার. মন্টরয়্যাল পার্ক ।

জুনের একটা উজ্জ্বল বিকাল । দুটি মেয়ে দুটি ছেলে পার্কে বসে আছে । এর মাঝে একটা ছেলে একটা মেয়ে যুগল । অন্য ছেলে মেয়ে দুটো আলাদা । আলাদা ছেলে মেয়ে দুটো’র আজই প্রথম পরিচয় ।

যুগলের সাথেও মেয়েটির পরিচয় সাত আট দিনের বেশী নয় । পার্কের ঘাস বিছানো কার্পেটে ওরা বসে । ওরা কথা বলছিলো । হঠাৎ আলাদা মেয়েটি দেখে আলাদা ছেলেটি বিয়ার টেনে চলেছে । অন্য মেয়েটি একটু থমকেই সটান উঠে দাঁড়ায় ।

চোখে মুখে রাগের ঝাপটা । যুগলটিকে মেয়েটি দ্রুত বলে :আচ্ছা চলি । ওদের বিমূঢ় চোখের সামনে দিয়ে মেয়েটি পাহাড় ভাঙ্গে । গটগট করে চলে আসে । পাঁচ. বৈশাখী মেলা,অসংখ্য মানুষের ভিড়ের বুননে চারিদিকটা ঠাসা ।

অসংখ্য মুখের ভীড়ে মাত্র কয়েকটা চেনা মুখ । হঠাৎ দেখি একটা হাসি উজ্জ্বল মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার মন আনন্দে ভরে উঠলো । উনার কথা আমায় অসম্ভব আনন্দ দেয় । উনার ছোঁয়া আমার আব্বুর স্নেহ স্পর্শ মনে করিয়ে দেয় ।

দেয় আমাকে এক গভীর উপলব্ধি । আমার আব্বু ও আমার বাবা দুজনেরই আদ্যক্ষর ম। আমার আব্বুর নাম মুহাম্মদ আবদুল মতিন এবং আমার বাবার নাম মীজান রহমান যাকে আমি সম্বোধন করি মীজান বাবা। দুজনেরই জন্ম এই মাসে সেপ্টেম্বরে, আব্বুর ১লা ও বাবার ১৬ তারিখ এবং দুজনের জন্ম দুই সালের ব্যবধানে । বাবা ১৯৩২ এবং আব্বু ১৯৩৪ ।

বাবার সাথে আমার পরিচয় তাঁর সুস্পষ্ট লেখার মাধ্যমে আব্বু মারা যাবার পর । উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর সরল সহজ ভাষায় লেখা দিয়ে আমার শুধু আমার কেন উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে বাঙ্গালী পাঠকদের মনে বিপুল সাড়া জাগিয়েছেন । মাসিক বাংলাদেশ, দেশেবিদেশে,দেশদিগন্ত, অবিনাশী শব্দরাশি,পড়শী, বার্লিংটন থেকে প্রকাশিত আমরা-এইসব পত্র পত্রিকায় তাঁর নিয়মিত কলামের সাথে আমার মাঝে মাঝে লেখা ছাপা হতো । তবে দেশদিগন্ত এ আমরা (আমি ও অপরাহ্ণ সুসমিতো) দুজনেই নিয়মিত থাকতে চেষ্টা করতাম সদেরা সুজনের তাড়ায় । সদেরা সুজনের কাছে আমরা সে জন্য ঋণী।

মীজান রহমান এর লেখা এতই আবিষ্ট রাখতো আমায় যে ওনার সাথে দূরালাপনীর মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করি । এই যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন দেশেবিদেশের নজরুল ইসলাম মিন্টু ভাই । সে এক দূর্লভ আনন্দ মূহুর্ত । কল কল করে আমিই কথা বলছি,ওনাকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি কম । তিনি শুনলেন, অসম্ভব ধৈর্য্যের সাথেই শুনলেন ।

এরপর পরিচয় ঘটলো পারুল- পারুল রহমান মার সাথে । আমি জানতাম না তিনি অসুস্হ । তাঁর সাথেও কথা হলো সেই মাধ্যমেই । অসুস্হ শরীর নিয়েও তিনি আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললেন । মিজান বাবার অংক ও সাহিত্যের মেধা এবং তাঁর ভালবাসা ও একই সাথে তাঁর দায়িত্বশীলতার কথা বললেন ।

কিন্তু মানুষটি ২০০২ তে তাঁর ৪১ বছরের সঙ্গীকে ছেড়ে অকষ্মাৎ তিরোহিত । এত বছর সঙ্গপ্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে মীজান বাবা কেমন আছেন জানতে ইচ্ছে করে । ২০০৪ সালে আমরা তাঁদের বাড়ি গিয়েছিলাম । বাবা ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখাচ্ছেন । সারা বাড়ি জুড়ে পারুল মা’র স্মৃতি।

পারুল মা যেভাবে তাঁর শাড়ি সাজিয়ে রেখে গিয়েছেন সে ভাবেই শাড়িগুলো ওয়াড্রবে সযতনে গোছানো । এ এক অনন্ত ভালবাসা যা শেষ হবার নয় । মীজান বাবার সাথে আমার স্বচক্ষে দেখা মেলে সম্ভবত ২০০১ সালে আলম খোরশেদের পূর্ব-পশ্চিম আয়োজিত “লাল নদী” বই এর প্রকাশনার উৎসবে । তাঁর গড়নের সাথে আমার আব্বুর অনেক অনেক মিল । কর্মের প্রতি দুজনেরই মিল ।

দুজনেই কর্মের প্রতি নিবেদিত । শত সমস্যায়ও ঋজু নির্ভীক। তাদের মাঝে অমিলও আছে । সে প্রসঙ্গ এখন থাক । মনে হয় তখন থেকেই আমি তাঁকে বাবা বলে সম্বোধন করি ।

তিনি শিক্ষায় মেধাবী, সাহিত্যে মেধাবী, তিনি মানবতার দিক দিয়েও প্রচন্ড প্রচন্ড মেধাবী । তাঁর ভিতর এসব গুনের সমন্বয় ঘটেছিলো তরুন বয়স থেকেই। তিনি কবি শামসুর রাহমান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক,কবি শহীদ কাদরী প্রমুখ সাহিত্যিক লেখকদের সম সাময়িক । তিনি সেই সময় থেকেই আনোয়ার মিজান নামে গদ্য ও পদ্য লেখালেখি করেন। তারপর অনেক দিন লেখা লেখির সাথে বিযুক্ত ছিলেন ।

১৯৯০ সালে বাংলা লেখালেখির সাথে সম্পৃত্ত হলেন । তাঁর বাংলায় লেখা উল্লেখিত প্রকাশনা হচ্ছে-১৯৯৪ সালে তীর্থ আমার গ্রাম, লাল নদী ২০০১ সালে, ২০০২ সালে প্রসঙ্গ নারী। একই বছরে আরও একটি বই প্রকাশিত হয়, সেটি হচ্ছে এ্যালবাম । প্রতিটি বইয়ের বিষয়গুলো নিগূঢ় ভাবনা যোগায় । শিক্ষার কথা লিখতে গেলে লিখতে হয়, তিনি হচ্ছেন অংকবিদ ।

অংক নিয়ে খেলা করেন । বিলেতের কেমব্রিজ ও কানাডার ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ১৯৬৫ সালে অটোয়ায় কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন । ৩৩ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। গনিত শাস্ত্র এর পন্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সঙ্গ নিয়ে রচিত তাঁর গণিত বিষয়ের গ্রন্হ basic hyper geometric series (১৯৯০) আধুনিক গণিতের একটি উল্লেখযোগ্য ও অপরিহার্য গ্রন্হ ।

শারিরীক ভাবে আমার আব্বু নেই মনে আছেন । বাবা শারিরীক ও মানসিক দুই ভাবেই আছেন । উনি আমার মনের প্লাবনতাকে তাঁর অসম্ভব স্নেহ দিয়ে রুদ্ধ করেন । এ আমার এক অসীম পাওয়া । আজ আমি বহুদিন পর নিমগ্ন হলাম নিমগ্নতার সৌন্দর্যতায় ।

বৃষ্টির লোনা জলে ভাসছি আমি ও আমার চারিপাশটা । আমার ভিতরের এক আত্মমগ্নতা আমায় অভিনন্দিত করে । বৃষ্টি ভেজা পথ,রাত্রি ভেজা নিসর্গ আমায় আলিঙ্গন করে । বহুদিন পর এ আমার এক অমলিন প্রাপ্তি । ছয়. ফ্রান্সিন ট্রুসো ।

ফরাসী ভাষী মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় চাকুরীর দ্বিতীয় দিনেই । আমি বাংলাদেশের মেয়ে শুনে ও তো আবেগে আপ্লুত । আনন্দে আত্মহারা । ১৯৬৭/১৯৬৮ তে ওর বাবা মা আর ও বাংলাদেশে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) ছিলো । তখন ওর বয়স বিশ/একুশ ।

পরের দিনেই ফ্রান্সিন বাংলাদেশে তোলা ওর কতগুলো স্মৃতিমাখা ছবি নিয়ে এলো । বেশীরভাগই আর্ট কলেজে পড়াকালীন ওর বন্ধুদের সাথে তোলা । ও বাদে আর সবার পরনেই শাড়ি । ফ্রান্সিন ট্রুসো ওর বন্ধুদের মধ্যে নাসরিনের নামই মনে রাখতে পেরেছে । বাংলাদেশ,বাংলাদেশের মানুষ ওকে আজও উদ্বেলিত করে,উচ্ছ্বসিত করে ।

রিক্সায় তোলা ছবিটি ওকে এখনো রিক্সায় ওঠার জন্য লোভী করে তোলে । ও আমায় জানালো ওর কাছে বাংলাদেশ থেকে আনা একটা বই আছে । পড়তে পারে না,কিন্ত পরম মমতায় স্যুভেনির হিসেবে রেখে দিয়েছে । আমাকে বইটা দেখাতে নিয়ে আসবে। সাত. পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে টরন্টো থেকে আসা কবি ফেরদৌস নাহার এর সাথে পরিচয় ।

প্রচন্ড মানসিক শক্তিতে ভরপুর একটা মেয়ে । যে দুটো দিন ওর সাথে কাটিয়েছিলাম এক ধরনের ভালোলাগায় আচ্ছন্ন ছিলাম । ওর লেখার মতোই ওর আবৃত্তিও ভালো । ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পরিচালিত শিশু কলা কেন্দ্রের ছড়া ও আবৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ফেরদৌস এখলাস উদ্দিন সম্পাদিত বিভিন্ন ছড়াকারদের নিয়ে রচিত ‘ছড়ায় ছড়ায় ছন্দ’ বইটির কথা উল্লেখ করলো । তৎক্ষণাৎ ‘পূর্ব পশ্চিম’ এর কর্ণধার লেখক আলম খোরশেদ এর কাছে বইটি আনিয়ে দেবার অনুরোধ জানিয়ে রাখলাম।

আট. পরের দিন ফ্রান্সিন ট্রুসো পলিথিন মোড়ানো অনেক যত্নে মমতায় রাখা বইটি আমার হাতে তুলে দিলো । পলিথিনের মোড়ক খুলতেই আমার চোখকে বিস্মিত করে বেরিয়ে এলো ‘ছড়ায় ছড়ায় ছন্দ’। হাতের মুঠোয় চাঁদ পাবার আনন্দে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । নয়. মোসিয়্যে রিসা । হাসি খুশি সৌম্য চেহারা ।

ভদ্রলোককে আমি চিনি যখন উনি তিনশত পনের হাজার ডলার ৬/৪৯ এ পেয়ে যান । লটারী পাবার পরও কি সাধারন ও সুন্দর । কাজে কি নিয়মিত । সত্তর পচাঁত্তরের মতো বয়স অথচ কি প্রানবন্ত,দ্যুতিময় । এমন মানুষদের ভালোবাসা এমনি দিতে ইচ্ছা করে ।

কাজের স্বল্পতার দরুন অন্যান্য অনেকের মতোই গ্রীষ্মকালীন স্বল্প ছুটি উনিও পেয়ে যাচ্ছেন। শীতের কর্মময় আনন্দে আবার ওনাকে দেখব এই অপেক্ষায় রইলাম । দশ. আর দশজন মানুষের মতোই কর্ম ব্যস্ততা আমার আনন্দের উৎস। তবে সেই কর্ম ও মানুষ থেকে আমি আনন্দ খুঁজে পাই যার মাঝে বিভিন্ন মাত্রা আছে। কাজের বিভিন্ন তাল,মাত্রা,লয় নিয়ে কাজ করতে আমার আনন্দ।

তাল লয়ের একঘেয়েমিতে পেলেই আমি ঝিমাতে শুরু করি আর একসময় খেয়াল করি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।