কোরান পোড়ানোর ঘোষণায় উত্তর আমেরিকায় উত্তেজনা
নতুনদেশ ডটকম
৯/১১তে টুইন টাওয়ার হামলার বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে উত্তর আমেরিকার মুসলমানরা ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। ফ্লোরিডার একটি চার্চে প্রকাশ্যে কোরান পোড়ানোর ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গ্রাউন্ড জিরোতে ইসলামী সেন্টার নির্মাণ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের জের ধরে ওই দিন দেশটির বিভিন্ন মসজিদে হামলার আশঙ্কা করছেন মুসলমান নেতারা।
এদিকে ৯/১১ হামলার বর্ষপূতিতে কোরান পোড়ানোর ঘোষণার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রবল প্রতিবাদ শুরু হলেও ফ্লোরিডার ডোভ ওয়ার্ল্ড আউটরিচ সেন্টারের যাজক টেরি জোনস পিছু হটবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এ নিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
কোরান পোড়ানোর ঘোষণায় অস্থিরতা : দ্যা ডোভ ওয়ার্ল্ড আউটরিচ সেন্টার নামের ওই চার্চটি ফ্লোরিডার গেইনসভিল এলাকায় অবস্থিত। তারা ইসলামকে ধর্মকে একটি প্রতারক ও শয়তানের ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করে সকলকে ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে দাড়ানোর আহ্ববান জানাচ্ছেন। তারা ৯/১১ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থতের এবং নিহতদের স্বরনে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন বলে জানান। ইতিমধ্যে এর পক্ষে প্রচারণা চালনার জন্য তারা ওয়েব সাইটে আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি ফেসবুকের মাধ্যমেও খ্রিস্টানদের কোরান শরীফ পোড়ানোর আহ্ববান জানাচ্ছেন।
কোন সময়ে কোরান শরীফ পোড়ানো হবে তার সময়সূচিও তারা নির্ধারন করে দিয়েছে। সময় সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত্র ৯ টা পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা এ সময়ের মধ্যে তাদের চার্চে এসে খ্রীস্টান ভাই ও বোনদের মুসলামানদের কোরান শরীফ পুড়িয়ে নিজেদের ঘৃণা প্রকাশ করে যেতে বলেছেন।
বার্তা সংস্থা সিএনএন এর সাথে ওই চার্চের ধর্মযাজক টেরি জোনস বলেন, “ আমরা মনে করি ইসলাম একটি মূর্তমান শয়তান, কোটি কোটি লোককে এ ধর্ম জাহান্নামে নিয়ে যাবে, এটি একটি প্রতারণামূলক ও বঞ্চনামূলক ধর্ম, এটি একটি সহিংস ধর্ম যা লোককে শুধু হিংসাই শিখায় অতীতে ও বর্তমানে বহুবার তারা নিজেদের এসব হিংসাত্বক কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ করেছে। জোনস নিজেও ইসলামের ওপর একটি বই লিখেছে বলে জানায়।
তার বইয়ের নাম “ইসলাম ইজ অব দ্যা ডেভিল”।
এদিকে কোরান পুড়ানোর ঘোষনায় আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কমান্ডার ডেভিড পেট্রাউস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কুরআন পোড়ানোর এ ঘটনাকে তালেবান ও আলকায়েদা নিশ্চিতভাবে ব্যবহার করবে। ফলে পুরো বিশ্বে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠবে এবং সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পি জে ক্রাউলি বলেন, কোরান পোড়ানোর এ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের ধারার সাথে মেলে না। আর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকেরই প্রতিনিধিত্ব করছে না।
তবে চার্চের যাজক জোনস জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে শতাধিক মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। আর এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য তিনি একটি ৪০ ক্যালিবারের পিস্তল সাথে রাখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্নিবিভাগ তার এ কাজের ব্যাপারে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করলেও তার আইনজীবী জানান, রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী তার এ অধিকার রয়েছে, চাই তাতে শহর তাকে অনুমতি দিক বা না দিক।
ঈদ নিয়েও আতংক : ১১ সেপ্টেম্বরেই ঈদ হওয়ার সম্ভাবনায়ও মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মুসলিম নেতাদের আশঙ্কা, ঈদের আনন্দ নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে ভুল ধারণার তৈরি হতে পারে।
বিষয়টিকে তারা ৯/১১-র উদ্যাপন হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।
টুইন টাওয়ার হামলার সঙ্গে ইসলামপন্থী জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে প্রতিবছরই এ ঘটনার বর্ষপূর্তির সময়টা যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের জন্য সংবেদনশীল। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি নানা কারণেই আরো খারাপ। গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ ও ইসলামী সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই বিতর্ক চলছে। ইহুদি ও খ্রিস্টান কট্টরপন্থীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ইসলামবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।
টেনেসি ও ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েকটি ইসলামী সেন্টারে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ইসলামবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবেই ৯/১১তে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কর্মসূচি দিয়েছে ওই কট্টরপন্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে হামলার আশঙ্কা করছেন নেতারা।
মিশিগানে ইসলামিক কাউন্সিলের সদস্য ভিক্টর বেগ বলেছেন, 'উচ্ছৃঙ্খল কেউ কেউ এ সুযোগে আক্রমণাত্মক কাজ করতে চাইবে। তারা মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে চায়।
'
৯/১১তে মুসলমানদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে ঈদ উদ্যাপনের বিষয়টি। মুসলমান নেতারা আশঙ্কা করছেন, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা ঈদের আনন্দকে ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে। অ্যারিজোনার ইসলামী সেন্টারের চেয়ারম্যান উসামা শামি বলেন, 'একই সময়ে আমাদের সামনে অনেক সমস্যা চলে এসেছে। ঈদের দিনে কোনো মুসলমান নতুন কাপড় পরে উৎসব করলে হয়তো কেউ ভেবে বসবে, সে টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি উদ্যাপন করছে। '
এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকানদের ভুল ভাঙার জন্য ঈদের দিনে বেশি বেশি মানবিক ও সামাজিক কাজ করার জন্য মুসলমানদের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।
শিকাগোর বাসিন্দা ও ইসলামী গবেষক জিনাত রহমান বলেছেন, 'ইসলাম সেবার ধর্ম। ঈদের দিনে সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনা করলে আমাদের সম্পর্কে কেউ ভুল ধারণা করতে পারবে না। ' এমন অনুরোধে সাড়া দিয়ে কয়েকটি রাজ্যে মুসলমানরা ঈদের দিনে হাসপাতাল ও বৃদ্ধ নিবাসগুলোতে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেউ কেউ আবার পার্ক পরিষ্কার, গৃহহীনদের জন্য ভোজ ও অসুস্থ শিশুদের খেলনা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে। এ ছাড়া ইসলাম ধর্মের সত্যিকার পরিচয় তুলে ধরতে বিজ্ঞাপন, পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে ইসলামী সেন্টারগুলো।
এমন বিপদের সময়ে মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্য ধর্মের নেতারাও। ধর্মীয় সহনশীলতা সম্পর্কে সাধারণ আমেরিকানদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আন্তধর্মীয় সভার আয়োজন করা হচ্ছে। ঈদের আগেই এসব সভা অনুষ্ঠিত হবে। নিজেরা পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ থাকার পাশাপাশি ৯/১১তে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে কট্টরপন্থীদের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা করেছেন মুসলমান নেতারা। বিভিন্ন শহরে মসজিদ ও ইসলামী সেন্টারগুলোতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এসব ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।
http://www.notundesh.com/shirshokhobor.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।