আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহেতুক আরো একটি বিরহী কৃষ্ণচূড়া [ছোটগল্প]

মানুষের জীবনে রোগ-শোক-জরা-ব্যাধি-মৃত্যু-হারানো থাকবেই... কিন্তু সবকিছু থেকে বড় হলো 'বেচেঁ থাকা' ... এই বেচেঁ থাকা দিয়ে সব কিছু জয় করতে হবে ।

‘আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেবো স্ট্রেটকাট -- ভালোবাসি/ এরকম সত্য উচ্চারণে যদি কন্ঠ কেঁপে ওঠে, অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়, আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষচিরে তোমার প্রতিমা/ ... এরকম উন্মোচনে যদি ইতুমি অনুরাগে মূর্ছা যেতে চাও, যাবে, জাগাবো না, নিজের শরীর দিয়ে কফিন বানাবো/ ভালোবাসি বলে দেবো স্ট্রেটকাট আবার যখনই দেখা হবে’। বিরহ কিংবা অনুরাগের উপাখ্যান যারা কবিতায় খুঁজে বেড়ান আমি তাদেরই দলে। মাইক্রোফোন কিংবা একান্ত অবসরে যারা কবিতাকে নেশার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেন আমি তাদেরই দলে। নিঃশ্বাসের স্বল্পতম আস্ফালন যদি উচ্চারণ করতেই না পারলো ‘ভালোবাসি’ তবে বড়ো ধূস্র সেই বেঁচে থাকা।

কিন্তু এইসব বুজরুকি কথাবার্তা সব সময় ভালো লাগেনা। বেশী বেশী লিখলে পাঠক খেতেও চায়না। বিশেষতঃ আমি নিজেই যখন পাঠক। মাঝে মধ্যে এইসব ভালোবাসা আর বিরহের তোলপাড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। প্রতিদিন প্রতিদিন প্রতি প্রহরে প্রহরে জীবনের ছোট বড় নানা আয়োজনের মাঝে এ শব্দগুলো অনেক বিরক্ত করে।

এ অনুভুতি গুলোলে ম্লান করতে আমি এ কথা গুলো বলছিনা, সে স্পর্ধাও আমার নেই। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা মনে পড়ে যায় - ‘ভালো জিনিস কম বলেই বোধহয় তা এতো ভালো, নাহলে ভালো তার নিজের ভিড়েই হারিয়ে হয়ে যেতো মাঝারি’। তারপরো বেশ অথর্ব আমার ভাবনাশক্তি। সীমিত গন্ডির মাঝেই আমার লেখাগুলো আটকে থাকে। লিখতে বস্লে পুরোনো ভাবনা আর পুরোনো কিছু শব্দই এসে ভিড় করে।

আমার লেখায় যেসব চরিত্ররা আসেন তাদের কে পেয়ে আমি ধন্য বটে, কিন্তু কখনোই তাদের ফিডব্যাক নেবার সাহস আমার হয়নি। তবে আজ আমি খানিকটা নিশ্চিন্ত। আজ যাদের কথা ভেবে লিখছি আশা করছি এ লেখার জন্মোৎসবের খবর তারা পাবেনা। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। আমার উদ্দেশ্য ১০০% প্রেম বা বিরহের গল্প লেখা।

নাম দু’টো বলে দিতে পারতাম। কিন্তু সবাই জানে এসব সাধারণত ছদ্মনামই হয়। তাই নামের ব্যাপারটা গল্পের শুরুতে অ্যাভয়েড করলাম। একই জায়গায় ওদের বাড়ি। ওরা দু’জনে একসাথে আছে অনেকদিন ধরেই।

কবে থেকে যে আছে আজ জানতে চাইলে ওরা নিজেরাও বলতে পারবেনা। জন্মটা বেশ কাছাকাছি সময়ে। বলতে গেলে এরপর থেকেই ওরা বন্ধু। একসাথে খেলাধুলা। এক সাথে হৈ-হুল্লোড়।

এভাবেই একসাথে বেড়ে ওঠা। শৈশবের স্মৃতিময় অংশটুকু পেরিয়ে যখন কৈশোরের উন্মাদনা ওদের মধ্যে ভর করতে শুরু করেছে তখনো ওরা হরিহর আত্মা। একই সুরে কথা বলে, বসন্তের অবাধ প্লাবণে ভেসে এক্যায় - এমন দু’টো কোমল মন ওদের। দু’টো মন আরো কাছে আসে। রাত ভোর হয় ওদের সীমাহীন কথোপকথনে।

একসাথে রাতের বুকে জায়গা করে নিয়ে ওরা রাতগুলোকে স্মৃতিময় করে তোলে। কতোটা সময় পার হয়ে যায় - অথচ ওরা টেরই পায়না। মেয়েটা কে দেখতে অনেক ভালো লাগে ছেলেটার। কল্পনার সবগুলো ইচ্ছে যেন সৃষ্টিকর্তা একই অঙ্গে ভরে দিয়েছেন। অপূর্ব রূপসী গড়নের চেহারা মেয়েটার।

ঠোঁটের সীমানা জুড়ে মিষ্টি একটা হাসি। অপলকে চেয়ে থেকেও যেন তৃষ্ণা মেটেনা। এতো সুন্দর ও কী করে হলো। ছেলেটা অবাক হয়ে ভাবে। আর ছেলেটা একেবারেই উলটো।

একটু পেটুক টাইপের। পেট ভরে খাতে পছন্দ করে। আর মেয়েটাও তেমনি লক্ষী। এই পেটুকটাকে খাওয়াতে যে বড়ো ভালো লাগে ওর। মাঝে মাঝে নিজের ভাগেরটা পর্যন্ত এনে ছেলেটাকে খাওয়ায়।

ছেলেটা খায় আর মেয়েটা তৃপ্তি ভরা মুখে চেয়ে থাকে। দিন যায় দিন আসে। বেড়ে ওঠে ওরা। আর হাঁটি হাঁটি পা-পা করে বেড়ে ওঠে ওদের ভালোবাসা। একটা সুঠাম দেহ নিয়ে ছেলেটা আর লাবন্যের ঐশ্বর্য্য নিয়ে মেয়েটা - যাপিত জীবনের পক্ক দুজন সৈনিক।

কিন্তু এ জোছনায় গ্রহণ লাগতে দেরি হয়না। গ্রামের চ্যাংড়া বয়সের একদন ছোড়া প্রায়ই মেয়েটাকে জালাতো। পচা পচা কথা বলতো। ‘তৈরী থাকিস রে, ক’দিন পরেই নেবো তোকে’ - এসব শুনে মেয়েটার অনেক কষ্ট হতো। চুপি চুপি একা একা কাদঁতো ও।

ইদানিং এ পথে ওদের আনাগোনা বেড়েছে। এভাবে চলে গেলো আরো কিছু দিন। ইতিমধ্যে বেশ গরম পড়ে গেলো। জৈষ্ঠ্য মাসের বুকে আগুন ধরানো রোদ। মাটির বুক ফাটানো রোদ।

মেয়েটাও বলিহারী। যেই দেখে তাকিয়ে থাকে। লজ্জা লাগে মেয়েটার। এই রূপ মেয়েটার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কে জানতো এমন ভয়াল কোন পরিণতি অপেক্ষা করছে ওর জন্য।

আবার দেখা মিলল ঐ বখাটে ছেলেগুলোর। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ বেলার দিকে একদিন দুপুরবেলা দল ধরে এলো ওরা। একটা লম্বা লাঠির মাথায় দা লাগিয়ে খচ করে মেয়ে আমটাকে বোঁটা শুদ্ধ কেঁটে ফেলল একজন। তারপর একে একে পারলো আরো বেশ কিছু আম। একটা ঝাকা বোঝাই করে আমগুলো তুললো।

আর সবচেয়ে পাকা আর দেখতে সুন্দর ঐ মেয়ে আমটাকে কাগজে মুড়ে রেখে দিলো আলাদা করে। ব্যাস এরপর হৈ চৈ করতে করতে চলে গেলো ছেলেগুলো। গাছে থেকে যাওয়া কাঁচা আমগুলোর সাথে থেকে গেলো আমার গল্পের সেই ছেলে আমটা। এ জনমের তরে সঙ্গী হারিয়ে একা হয়ে গেলো ছেলেটা। আর ওর কেউ নেই।

শীত প্রায় চলে এসেছে। আমি জানিনা ঐ ডালে ছেলে আমটা আজো তার অস্তিত্ব নিয়ে কারো অপেক্ষায় আছে কিনা। পাঠক, এ পৃথিবীর বিকে প্রতি ভোরে প্রতি বিকেলে জন্ম নেয় একেকটি ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসার রঙধনু বেয়ে আসে বিরহ। এই প্রসিদ্ধ সমীকরণগুলোর ভিড়ে আমি এই গল্পটি হারাতে দেইনি।

এটাই আমার আনন্দ। কারণ কিছু হারালে কেমন লাগে আমি জানি। ঋতু বদলাচ্ছে। চারিদিকে লু হাওয়া বইছে। আমি জানি এ বাতাসে কেউ না কেউ ভালোবাসার গন্ধ খুঁজে পাবে।

নতুন কিছু কবিতা জায়গা করে নেবে নগর-সাহিত্যে। আরো কিছু গল্প তৈরী হবে। নতুন দিনের এমনই কিছু গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। আর ভালো থাকুক পৃথিবীর সবগুলো কৃষ্ণচূড়া । - রা জী ব দে স র কা র এ র লে খা


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।