আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসপাতালে পৌঁছাতে পারল না শিশুটি



রাজধানীর জয়কালী মন্দিরে যানজটে আটকা পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। অ্যাম্বুলেন্সের চালক জুলহাস মিঞা প্রাণপণে বাজিয়ে যাচ্ছেন হর্ন। সামনের রাস্তা বন্ধ, বেরোনোর কোনো পথ নেই। তাঁর গাড়িতে চার দিনের একটি ফুটফুটে ছোট্ট শিশু একটু পর পর কেঁদে উঠছে। শিশুটির সঙ্গে সঙ্গে তার মা-ও কাঁদছেন।

কখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, কখনো উচ্চ স্বরে। আশা-নিরাশার দোলায় দুলছে মায়ের মন। একেওকে জিজ্ঞাসা করেন, বাঁচবে তো তাঁর নাড়িছেঁড়া ধন? একমাত্র এবং প্রথম সন্তান? নামটাও রাখতে পারেননি। তবে সুস্থ হলেই...। শিশুটি সুস্থ হয়ে আর বাড়ি ফিরতে পারেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে শিশুটি মারা গেল। থেমে গেল অ্যাম্বুলেন্সের হর্ন, ট্রাফিক সার্জেন্টের যানজট ছোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা। মৃত শিশুকে বুকে চেপে ফিরে গেলেন মা আমেনা বেগম আর বাবা হারুন অর রশীদ। গতকাল রাতেই শিশুটিকে দাফন করা হয়েছে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার শাহাপুর গ্রামে। শিশুর মামা মোক্তার আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার রাতে শিশুটির খিঁচুনি হচ্ছিল।

সকালেই গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় আত্মীয়স্বজন। চিকিৎসকেরা ফিরিয়ে দেন। বলেন ঢাকার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেতে। পেশায় মুটে বাবা হারুন অর রশীদ পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স চালকের প্রশ্ন দেড় হাজার টাকা খরচ করার সামর্থ্য আছে তো! হারুন অর রশীদ জানান, সন্তানের জন্য সর্বস্ব দিতে তিনি প্রস্তুত।

কিন্তু মহাসড়কের যানজটে বারবার থেমে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স। অস্থির বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা পৌঁছালেন মাতুয়াইলে। কিন্তু হাসপাতালে আসন না থাকায় শিশুটিকে ভর্তি করা যায়নি বলে তিনি জানান। শেষ পর্যন্ত উদ্বিগ্ন-উদভ্রান্ত বাবা-মা এবার ছোটেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে।

কিন্তু সেখানে আর পৌঁছুতে পারেননি। যানজটের এই নিষ্প্রাণ ঢাকা শহর সন্তানকে গিলে ফেলেছে—এই বলে বারবার বিলাপ করছেন বাবা-মা। সান্ত্বনা দিচ্ছে কেউ কেউ, আয়ু কম নিয়ে শিশুটি এসেছিল পৃথিবীতে। যা-ই হোক না কেন, বাবা-মাকে বোঝাতে পারছে না কেউ। এদিকে মাতুয়াইল হাসপাতালের চিকিৎসক নাসিরউদদীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন না থাকায় শিশুটিকে ভর্তি করা যায়নি—এমন তথ্য সঠিক নয়।

হয়তো শিশুটির পরিবার দালালের খপ্পরে পড়েছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।