সুনীল শুভরায়:
হাইকোর্টের রায়ে সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এই রায়কে স্বাগত জানালেন কিংবা খুশি হলেন কীভাবে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। হিসাবটা খুবই সহজ। সপ্তম সংশোধনীতে সংবিধান কাটাছেঁড়া করা হয়নিÑযা জেনারেল জিয়া করেছিলেন পঞ্চম সংশোধনীতে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু নিজের কর্মকাণ্ডকে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছেন সংসদের মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত মামলার রায়ে সামরিক আইন অবৈধ ঘোষিত হয়েছেÑ স্বাভাবিক নিয়মেই।
কিন্তু ওই সময়ে জনস্বার্থে গৃহীত কর্মকাণ্ড (১৯৮২ থেকে ১৯৮৬) মার্জনা এবং বৈধতা পেয়েছে। বাকি সময় সম্পর্কে রায়ে যেহেতু কিছু বলা হয়নি সেহেতু এই সময়টা বৈধ বলে বিবেচিত। সুতরাং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৯ বছর অবৈধ শাসক ছিলেনÑ এ কথা বলার আর কোনো সুযোগ থাকল না। ফলে এই রায় পরোক্ষভাবে এরশাদ সাহেবের পক্ষে গেছে বলেই তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
বিচারের বিষয়টা আরো সহজ।
ক্ষমতা দখল করে দেশ চালানোর জন্য সহযোগী দরকার হয়। মোশতাক-জিয়া-সায়েম মারা গেছেন তো কী হয়েছে। তাদের সহযোগীরা তো আছেন। পারলে তাদের বিচার করা হোক। তারপর তো এরশাদ।
তাঁর বিচার যদি করতে হয়Ñ সেই সঙ্গে সহযোগীদেরও বিচার করতে হবে। বিচারপতি থেকে শুরু করে আইজীবী, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সমাজসেবীÑ পর্যন্ত সামরিক শাসনের সহযোগিতায় ছিল না কারা? যে ২২৩ জন সাংসদ সপ্তম সংশোধনী পাস করেছিলেনÑ তারাও নয় কি! সুতরাং বিচারের প্রসঙ্গ এলেÑ ‘লোম বাছতে কম্বল খালি’ হয়ে যাবে। তাতে যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে সে বিবেচনাতেই বিজ্ঞ আদালত ভবিষ্যতে এ ধরনের অসাংবিধানিক তৎপরতা প্রতিহত করার জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন।
রায় সম্পর্কিত আলোচনায় নিউজিল্যান্ড থেকে ড. কালাম আজাদ (আমাদের সময় ৩০ আগস্ট) কিছু খোলা বক্তব্য রেখেছেন। এর উপযুক্ত জবাব যদি দিতে হয়Ñ তাহলে কিছু কঠিন কথা এসে যাবে।
সে দিকে যেতে চাই না। সংক্ষেপে কিছু বলি। জোটগত রাজনৈতিক কালচারে এক দল আর এক দলকে কাছে টানতে চাইবেÑ এটাই স্বাভাবিক। এর একটা ভালো দিকও আছে। ভিন্ন নীতি, আদর্শ ও মতের মধ্যে সমন্বয় ও সম্প্রীতি ঘটে।
তবে আমাদের দেশে জোট রাজনীতির অবস্থা বুঝতে ড. আজাদকে ’৯০-পরবর্তী নির্বাচনগুলোর দিকে তাকাতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পার্টি একবার মাত্র জোটগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ’৯১-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে ৩৫ আসন পেয়েছে বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে। ৯৬-এর নির্বাচনে পেয়েছে ৩২ আসন। দুই নির্বাচনেই সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ জেলে থেকে ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
জনগণকে যদি সকল শক্তির উৎস মানেন তাহলে তাদের রায়কে সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত। আর গত নির্বাচনে বিএনপি জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির একক দুইটি নির্বাচনে বিজয়ী আসনের চেয়ে কম অর্থাৎ ২৯টি আসন লাভ করেছে। ফলে ’৯০-পরবর্তী রাজনীতিতে এরশাদ সাহেবের পার্টি সব সময় ভারসাম্যের অবস্থানে রয়েছে। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসনের জন্যও এর প্রয়োজন আছে। রাজনীতির কিছু নিজস্ব ভাষা আছে।
যে ভাষা মানুষকে আকৃষ্ট করে। রাজনীতিতে ‘প্লে-বয়’ শব্দের প্রয়োগটা অশালীন। কোনো ডক্টরেটধারীর কাছে এটা আশা করা যায় না। রাজনীতির আলোচনায় রাজনীতির ভাষায় কথা বলুন। বাক-স্বাধীনতা মানে বল্গাহীনতা নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।