আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় বন্ধু - আদনান

I will CHOOSE the TRUTH I BELIEVE . . . .

আদনানের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় । একটু ভুল হল, পূনর্পরিচয় বলা যেতে পারে । যখন আমরা দুই জনেই ‘শিশু’ তখন আমাদের দেখা হয়েছিল, আমরা একই বিল্ডিং-এ থাকতাম । সে যাই হোক , স্কুলে ওর সাথে আমার পরিচয়ের শুরুটা খুব একটা শুভ ছিল না । স্কুলে তখন ভীষণ ‘মাইন্ড গেম’ চলত ।

এক্কেবারে সাইকোলজিকাল ওয়্যারফেয়ার । আদনান ছিল অন্য দলে । প্রথমেই বুঝতে পারলাম , ও ভিন্ন ‘জিনিস’ । বিন ক্লিনটনের একটা সাক্ষ্যাৎকার পড়েছিলাম, ‘যে জিনিস কে আমি জয় করতে পারি না, তাকে বন্ধুতে পরিণত করার নীতিতে আমি বিশ্বাসী’ । কথাটা আমার ভাল লেগেছিল ।

কিছুদিনের মাঝেই ওর সাথে আমার খাতির হয়ে গেল । আর কিছুদিন যেতেই আবিষ্কার করলাম আমাদের মাঝে অমিলের চাইতে আসলে মিল-ই বেশি । বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমার সেরা বন্ধুদের একজন হয়ে উঠল আদনান । খুব জোরে বল করতে পারত ও । ফুটবলও ভাল খেলত ।

আমার মতই বই পড়তে ভালবাসত , যদিও বই নিয়ে আমার মত ‘ফ্যানাটিক’ ছিল না ও । আমরা দুই জনেই হাঁটতে আর আড্ডা দিতে ভালবাসতাম । লম্বা আর ফিজিক্যালি অনেক শক্ত হওয়াতে ওকে আশে পাশে পাওয়াটা অনেক কাজেও দিত [ কি কাজে দিত, সে আর না বলি ] । আমরা তখন তিন গোয়েন্দার অন্ধ ভক্ত । আদনান আমাদের চোখে ‘মুসা আমানে’র বাস্তব চরিত্র ।

সেদিন গ্যালারীতে বসে আড্ডা দিচ্ছি দু’জনে । হঠাৎ ও বলে উঠল, ‘তুই অনেক বড় হবি, অনেক দূর যাবি । you have a shine inside.’ তখন পড়ি বড়োজোর ক্লাস সেভনে । ওকে ছেড়ে আসি SSC এর পরে । কিন্তু ওর কথাটা মনের ভিতরে এক্কেবারে গেথে গিয়েছিল ।

I have a shine inside ~ ঠিক এভাবে ওর আগে কেউ বলে নি । হয়ত আদনানও অত ভেবে কিছু বলে নি । অথচ ওর ওই কথাটা আমার সারা জীবনের inspiration হয়ে থাকল । বুয়েটে চান্স পাবার পরে সবার আগে যাদের ফোন করি তাদের মাঝে আদনান একজন । ওকে ফোন করে বললাম, Yes, I have reached someplace! I am home! উচ্ছসিত হয়ে আমাকে শুভকামনা জানাল আদনান ।

খুব স্বাভাবিক কিছু কথা হল । ওকে জানালাম, তন্ময় [আমাদের mutual বেস্ট ফ্রেন্ড ] – আমার সাথেই আছে, ইলেক্ট্রিকাল – বিপুও [ আমরা তিন জন স্কুল থেকে নটরডেম পড়তে এসেছিলাম ] চান্স পেয়েছে বুয়েটে । বার বার congratulate করে ফোন রাখল ও । এখানে একটু বলে রাখি । ইন্টারে আদনানের রেজাল্ট ভয়াবহ রকমের খারাপ হয়েছিল ।

বুয়েটে-কুয়েটের পয়েন্ট আসে নি । চুয়েটে পরীক্ষা দিবে – বলেছিল আমাকে । মাঝে ওর সাথে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ হয় নি । শেষ পর্যন্ত জানলাম, ও SUST এ ভর্তি হয়েছে , প্রশাসন বিভাগে । মনটা খারাপ হল, ও এর চাইতে অনেক ভাল কিছুর যোগ্যতা রাখে ।

সিলেটে আমরা বুয়েটের ১১ জন । SUST এ গেলাম । ওখানে স্কুলের আরো বন্ধুরা আছে । অসাধারন একটা ভার্সিটি । শহীদ মিনার টা তো সেরকম ।

সন্ধ্যার পরে সেখানে বসে আদনানের কাছে জানলাম ওর ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা । ওর তো বুয়েট –কুয়েট এর পয়েন্ট আসেনি । হাতে ছিল চুয়েট আর ঢাকা ভার্সিটি । কিন্তু কপাল এত খারাপ, সেবার ঢাকা ভার্সিটি ক ইউনিট আর চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে । সে জন্যে আদনান চুয়েটের ফর্ম-ই তুলে নি , ঢাকা ভার্সিটির ক ইউনিট টার্গেট ।

ফর্ম জমা দিতে গিয়ে আদনান shock-of –his-life দশা । ২০ তারিখে আসলে গ ইউনিটের ফর্ম জমা দেবার শেষ দিন, ক-ইউনিটের সময় শেষ আরো ৯ দিন আগেই । ও দিশা হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে । কি করবে বুঝতে না পেরে এলোমেলো হাটতে শুরু করল ও রাস্তায় । ঠিক তখনি , এক্কেবারে তখুনি আমি ওকে ফোন করে জানাই আমি বুয়েটে চান্স পেয়েছি ।

সেদিন রেজাল্ট জানাতে গিয়ে কত কথা হল - ও আমাকে একটুও বুঝতে দেয় নি , কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে । আমাদের বন্ধুদের মাঝে একটা বিষয় খুব মিল – আমদের কষ্ট গুলো আমরা লুকোতে পারি খুব সহজে । SUST এর শহীদ মিনারে বসে ওর কষ্টটা অনুভব করলাম । বললাম, আমাকে কেন বলেনি তখন । বলল, আমার এই আনন্দের সময়ে ওর কষ্টের কথা বলে আমার আনন্দ মাটি করতে চায় নি ।

এই বন্ধুত্বের ঋণ কি কোন দিন শোধ করতে পারব ! অফ-টপিকঃবন্ধুত্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.