ওরা দিনের আধারে ঘুমায় ওরা রাতের আলোতে হাটে, ইটের দেয়ালে মাথা রেখে ওরা হৃদয় খুলে হাসে । ওরা ভালোবাসা বিলিয়ে যায় ,ওরা কষ্ট লুকিয়ে বাচে ।
পুরুষের সাথে নারীর কমিউনিকেশন গ্যাপ এর একটা বিরাট কারণ হলো তাদের ব্যবহার করা ভিন্ন ধরণের ভাষা। পুরুষশাসিত সমাজে যেখানে পুরুষ লজিক নির্ভর ভাষা ব্যবহার করে অভ্যস্ত সেখানে মেয়েদের বোঝার জন্য কিন্তু তাদের ব্যবহার করা আবেগীয় ভাষা ধরতে পারা অত্যন্ত কঠিন। আগের একটি লেখায় বলেছি যে মেয়েরা আবেগ নির্ভর হওয়ায় তারা একটি আবেগ থেকে অন্যটিতে চলে যেতে পারে কোনরকম লজিকের আশ্রয় ছাড়াই আর পুরুষের কাছে এটা অত্যন্ত দুর্বোধ্য একটা ব্যপার।
এ সময় লজিকের ওপর নির্ভর করে মেয়েদের এই মুডসুইং এর কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজস্ব মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলে তারা আর ফলাফল হয় উভয়ের জন্য খারাপ। আবার পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা তাদের এই আবেগ লুকিয়ে রাখতে শিখেছে তাই তার ব্যবহার করা আবেগীয় ভাষাও পুরুষের জন্য হতে পারে বিভ্রান্তিকর। মজার ব্যপার এটাই যে পুরুষ পুরোপুরি লজিক নির্ভর হওয়ার কারণে মেয়েদের এই আবেগীয় ভাষা তার জন্য একইসাথে সম্মোহণী এবং বিভ্রান্তিমূলক। আর নারীর বলা কথার শাব্দিক অর্থের সাথে তার আবেগের সামঞ্জস্য না পেয়ে পুরুষ নিজেই আবেগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন ধরণের আবেগ-নির্ভর কাজ করে ফেলতে পারে যা পরবর্তীতে সম্পর্কগুলোকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর আজকে এই বিষয়েই হাল্কা আলোচনা করা যাক।
তবে তার আগে একটা কথা।
প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে নারীর এই ভাষা ব্যবহার কোনভাবেই খারাপ কিছু নয়, বরং আধুনিক সমাজের শুরু থেকে নারীকে পুরুষ শাসন করে এসেছে এবং দমিয়ে রাখতে চেয়েছে- তাই এমন ভাষা মূলত আজকের পুরুষের প্রাপ্য। এটাকে মূলত হাজার বছরের পুরুষ শাসনের একটা ফলাফল বলা যায়।
পুরুষের চরিত্রের লিডারশীপ অ্যাবিলিটি যে মেয়েদের একটা চাহিদা সেটাও আমার লেখায় বিভিন্ন সময় উঠেছে। তাই মেয়েদের যে কোন আবেগীয় জটিলতা থেকে ঠান্ডা মাথায় যে পুরুষ হ্যান্ডেল করতে পারে মেয়েরা তাকে বিশেষভাবে পছন্দ করে।
যাই হোক, মেয়েদের এই বিশেষ ব্যবহারকৃত ভাষা বুঝতে পারাটা একটা বিশেষ ক্ষমতা, যেটা প্লেবয়দের মাঝে বিশেষভাবে দেখা যায়। আর এটা বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই নারীকে বোঝবার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন যে কেউ, এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। আর অবচেতনে নারীর পুরুষকে পরীক্ষা করবার কথাও নিশ্চয়ই মনে আছে?
সিদ্ধান্তহীনতা এমন একটা ব্যপার যেখানে নারী তার আবেগীয় ভাষার ব্যবহার করে পুরুষের এই লিডারশিপ গুণটি পরীক্ষা করবে। এটা এক ধরণের সিগনাল যেখানে সে আসলে তাকে পরিচালনা করবার ভার তার জীবনের পুরুষের কাছে ছেড়ে দিচ্ছে, যেটা পুরুষকে বুঝে নিতে হবে। এই সিচুয়েশন সাধারণত এমন কোন সময়ে তৈরি হতে পারে যখন তার জীবনের পুরুষটির নেতৃত্ব সম্বন্ধে তার কোন সন্দেহ মনের অজান্তেই দেখা দিয়েছে অথবা তার জীবনে নাটকীয়তার অভাব রয়েছে।
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ – চলো না, আজকে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।
আপনি- শিউর, কোথায় যাবে ?
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- উমমম। জানিনা।
আপনি- হাউ এবাউট কেএফসি ?
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- নাহ, বেশি লোক/ দু-দিন আগেই অমুক বান্ধবীর সাথে গিয়েছি।
আপনি- ওকে।
তাহলে চলো কোন চাইনিজ/ইটালিয়ান/অমুক থেকে খেয়ে আসি।
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- উমমমম {সিদ্ধান্থীনতা} নাহ, জাস্ট ২ সপ্তাহ আগেই চাইনিজ/ইটালিয়ান/অমুক এ গিয়েছিলাম, ওখানে একে/ওকে দেখেছিলাম যাতে আমার দিনটাই মাটি হয়ে গিয়েছিল। [ খেয়াল করবেন- তার আবেগের জন্য সে ঐ পার্টিকুলার জায়গাটির পরিবেশকে দোষারোপ করছে। ]
আপনি- ধৈর্য হারাতে শুরু করে – [ মেয়েরা যে আসলে কি চায় ভাবতে ভাবতে ] – জাস্ট বলোতো কোথায় যেতে চাও তুমি ?
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- [মুখ গোমরা করে ] তুমি যদি এরকমই করো তাহলে আর আমারও কোথাও যাবার ইচ্ছা নেই।
অদ্ভুত, তাই না।
উপরোক্ত অবস্থায় যদি কোনভাবে নিজেকে উপলব্ধি করে থাকেন, তবে আপনি জানেন যে এখনই শুরু হবে নাটক, সেরকম কোন কারণ ছাড়াই। তর্কাতর্কি হবে, খারাপ মন্তব্য হবে একে অপরকে নিয়ে এবং পুরোনো ক্ষত খুলে যাবে, হিসাবের খাতার একদম প্রথম পাতা থেকে শুরু হবে। আর ভাগ্য বেশি খারাপ হলে, এরকম ছোট্ট একটা ব্যপার থেকেই অনেক বড় কোন অঘটন ঘটে যাওয়াটাও যে মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
আসুন, আরেকবার ট্রাই করা যাক।
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ – চলো না, আজকে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।
আপনি- শিউর, কোথায় যাবে ?
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- উমমম। জানিনা।
আপনি- হাউ এবাউট কেএফসি ?
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- নাহ, বেশি লোক/ দু-দিন আগেই অমুক বান্ধবীর সাথে গিয়েছি।
আপনি- ওকে। তাহলে চলো কোন চাইনিজ/ইটালিয়ান/অমুক থেকে খেয়ে আসি।
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- উমমমম {সিদ্ধান্থীনতা} নাহ, জাস্ট ২ সপ্তাহ আগেই চাইনিজ/ইটালিয়ান/অমুক এ গিয়েছিলাম, ওখানে একে/ওকে দেখেছিলাম যাতে আমার দিনটাই মাটি হয়ে গিয়েছিল।
আপনি- যাই হোক, আমার খিদে পেয়েছে এবং আমি পিৎজা খেতে চললাম। চাইলে আমার সাথে আসতে পারো নয়ত নাও আসতে পারো। আমি বের হচ্ছি। [ গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ুন]
এখন সবথেকে বড় ব্যপার হলো আপনার নিজের সিদ্ধান্তে অবশ্যই অটুট থাকা।
তাহলে খুব সম্ভব একদম শেষ মুহুর্তে মেয়েটি আপনার সাথে যাওয়ার জন্য রওনা হবে। যদি তা না হয় তবে ব্লাফ করবেন না। বাইরে গিয়ে কোন ভাল রেস্টুরেন্ট থেকে তার পছন্দের পিৎজা নিয়ে আসুন। তাকে দেখে যদি দুঃখিত মনে হয় তবে আপনি একদম সঠিক ট্র্যাকে আছেন। একসাথে বসে এখন আপনারা খেতে পারেন।
তবে কোনভাবে যদি মেয়েটি আপনাকে এবং সুস্বাদু পিৎজাটিকে অসম্মান করে তবে আর কোন ঝামেলা না করে নিজের দিকে মনোনিবেশ করুন, তাকে তার মত ছেড়ে দিন।
খুব সম্ভব একটু পর সে পিৎজার ব্যপারে জানতে চাইবে। বলুন আপনি খেয়ে ফেলেছেন অথবা কাজের ছেলেটিকে দিয়ে দিয়েছেন [ যে কোন কিছু হতে পারে ]। আপনাকে অবশ্যই সচেতনতার সাথে নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে এই সময়ে। হটাৎ করে সে খুব ক্ষুধার্ত অনুভব করলে তাকে বলুন কিছু তৈরি করে খেতে।
আর নয়তবা আপনার পিৎজার ওপর একটি প্রাইজ ট্যাগ লাগান। একটি সুন্দর এবং জেনুইন সরির জন্য একটা মাশরুম পিস, সুন্দরী হাসির জন্য একটা বড় পিস। কল্পনাশক্তি ব্যবহার করুন। এই পর্যায়ে আপনি রাগান্বিত এবং আপনার রাগ ভাঙ্গাতে তাকে খাটতে দিন।
খুব বেশি কঠিন মনে হচ্ছে ? হুমমমম।
তাহলে আসুন, আরেকটু অন্যভাবে চেষ্টা করা যাক।
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ – চলো না, আজকে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।
আপনি- বাহ, সুন্দর আইডিয়া, লাইক দিলাম। স্টপ ওয়াচ চালু করছি, ২০ মিনিটের মধ্যে রেডি হবে। আজ কিন্তু তুমি ড্রাইভ করবে।
[ মন দিয়ে তার নেতৃত্বগুণ খেয়াল করুন ]
গার্লফ্রেন্ড/ওয়াইফ- কৌতুহলী চোখে- কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
আপনি – হাত ধরে নাচের ভঙ্গিতে মেয়েটিকে একবার ঘুড়িয়ে আর সাথে রহস্যে ভরা একটা হাসি যোগ করে – “গেলেই বুঝতে পারবে। ” [ এই নাচটা আসলে আমার ব্লগের ট্রেডমার্ক সল্যুশন, একই কাজ বারবার করতে গেলে ধরা খেতে পারেন, তার থেকে এটাকে প্রতীকী ভাবে নিয়ে নিজের মত ইমপ্রোভাইস করতে শিখুন, সেটাও মেয়েদের কাছে আকর্ষনীয় একটা গুন ]
প্রথম উদাহরণের ব্যক্তির সাথে কেন এমনটা হলো ? কারণ সে বেশ বড় কয়েকটা ভুল করেছিল। প্রথমত সে তার গার্লফ্রেন্ড/স্ত্রীর ওপর নেতৃত্ব দিয়ে দ্বায়িত্ব নিতে অস্বিকৃতী জানায়। দ্বিতীয়ত, সে মেয়েটির আবেগকে লজিক দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে। মেয়েটির কথার অর্থ ছিল যেখানে – “চলো, একটু মজা করি” এবং/অথবা “আমি ক্ষুদার্ত” সেখানে প্রথম ব্যক্তি মেয়েটির আবেগীয় অস্থিতিশীলতা নিয়ে ঝগড়া করা শুরু করে দেয়।
আর লোকটি কেন তাকে বুঝেনা সেটা মেয়েটির আবেগকে আরো অস্থিতিশীল করে দেয়।
দ্বিতীয় উদাহরণে, যদিও লোকটি তার স্ত্রীকে সুন্দর/ ভালো ইমোশনগুলো দিতে ব্যর্থ হয়েছে [ যা সে চাচ্ছিলো ], কম সে কম সে যুক্তি ব্যবহার করে মেয়েটির আবেগকে দমাতে চেষ্টা করা থেকে বিরত থেকেছে যেটা এসব ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। আর মাঝে মাঝে এরকম রাগ-অভিমানও যে সম্পর্কে দরকার সেটাও মনে হয় কম-বেশি সবারই জানা আছে। তাছাড়া মেয়েটির নাটকীয়তার চাহিদাও এতে পূর্ণ হয়েছে।
খেয়াল করলেই বুঝবেন যে এসব ক্ষেত্রে পুরুষটির কাছে থাকা দুটো অপশনই মেয়েটি আবেগের বশবর্তী হয়ে বাতিল করে দিচ্ছে, তাই পুরুষটি যুক্তি খাটানো মাত্র তাদের যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন গ্যাপ সৃষ্টি হচ্ছে, আর ফলাফল হিসাবে কমিউনিকেশন সিস্টেমে তৈরি হচ্ছে বিপর্যয়।
একজন পুরুষ যখনই সচেতন ভাবে বুঝতে শিখবে যে, “চলো না, আজকে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি” এই কথাটির অর্থ হলো আসলে – ‘আমি বিষণ্ণ/ উদাস – আমাকে এন্টারটেইন করো’ তখনই এরকম পরিস্থিতিগুলো হয়ে ওঠে উপভোগ্য কারণ যে কোন সম্পর্কগুলোকে আরোও মজবুত করে তোলে একটা সুন্দর কমিউনিকেশন। একইসাথে তাকে বোঝার ক্ষমতা আর আপনার নিজের প্রতি আস্থা দেখে মেয়েটি আপনার প্রতি আরো মুগ্ধ হবে। আর ধীরে ধীরে এ ব্যপারগুলো যখন আপনি নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসবেন তখন মেয়েটি যখন বলবে - “চলো না, আজকে বাইরে কোথাও খেয়ে আসি”, আপনি শুনবেন – “লেটস প্লে” ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।