আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাহাজ, না ভাসমান শহর!

আমি অতি সামান্য.... আমাকে HELPকরুন

বিশাল এক সাগর, তার বুকে ভাসছে আস্ত একটি শহর। নিশ্চয় ভাবছেন কোনো দ্বীপে গড়ে ওঠা শহরের গল্প বলছি। না, বিশাল এক জাহাজে গড়ে উঠেছে ভাসমান এ শহর। আট হাজার ৬০০ জনের থাকার ব্যবস্থা, ২৪টি রেস্তোরাঁ, থিম পার্ক, একটি সেন্ট্রাল পার্ক, ১৮টি মহাতৎপর রোবট_কী নেই। ভাসমান এই শহরেই বৃত্তান্ত জানাচ্ছেন আশফিয়া আহমেদ ক্যারিবিয়ান সাগরে ভাসমান এই শহর তথা জাহাজটির নাম ওয়েসিস অব দ্য সিজ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী এই জাহাজ টাইটানিকের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়, পাঁচটি ৩৮০-এয়ারবাসের সমান দীর্ঘ কিংবা বলা যেতে পারে প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান। এ ধরনের একটা জাহাজ তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক ক্রুজ লাইন রয়াল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের। ২০০৬ সালে ফিনল্যান্ডের এসটিএক্স ইউরোপ নামের জাহাজ তৈরির কারখানাকে এটি তৈরির অর্ডার দেয় তারা । জাহাজটি তৈরি করতে সময় লাগে তিন বছর। এত বড় একটা জাহাজ তৈরি চাট্টিখানি কথা তো আর নয়।

অর্থাৎ এর নির্মাণ শেষ হলো ২০০৯ সালে। এ বছরেরই ২৮ অক্টোবর অনানুষ্ঠানিকভাবে রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের কাছে হস্তান্তর করা হয় এটিকে। এর দুদিন বাদে ফিনল্যান্ড থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করে ওয়েসিস অব দ্য সিজ। এরপর বাদবাকি সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সাগরে ভাসে জাহাজটি। এত বড় একটা জাহাজ।

তারপর আবার ভেতরে-বাইরে এলাহি কারবার। তৈরি করতে নিশ্চয় কম খরচ গুনতে হয়নি। হ্যাঁ, তা কিছুটা হয়েছে বৈকি। এই ধরুন, ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের টাকায় হিসাব করলে অঙ্কটা দাঁড়াবে সাত হাজার কোটির বেশি।

জাহাজটির ওজন এক লাখ টন। এর ছয়টি মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন, তিনটি ১৬ সিলিন্ডারবিশিষ্ট সাধারণ রেইল ডিজেল ইঞ্জিন এবং আরো তিনটি ১২ সিলিন্ডারের ইঞ্জিন মোট ৯৭ হাজার ২০ কিলোওয়াট জ্বালানি উৎপাদন করতে সক্ষম। এই জ্বালানি বিদ্যুতে পরিণত করে ব্যবহার করা হচ্ছে জাহাজের প্রতিদিনকার বিভিন্ন কাজে। ভাসমান এই শহরের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে দুই হাজার ১৬৫ জন ক্রু। এর বর্তমান ক্যাপ্টেন রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের প্রধান উইলিয়াম এস রাইট।

অবশ্য শুধু প্রথম দিকের সফরগুলোতেই থাকবেন ভদ্রলোক। এর পর থেকে স্থায়ীভাবে এ দায়িত্ব পালন করবেন নরওয়ের টর আইজাক ওলসেন ও থোরে থোরভলসেন। কী আছে এই শহরে শহরের বিশালত্ব সম্পর্কে আর কোনো দ্বিধা সম্ভবত নেই আপনাদের মনে। কিন্তু এর অন্দরমহল তথা ভেতরকার খবর জানতে নিশ্চয় উতলা হয়ে উঠেছেন। ওয়েসিস অব দ্য সি'জে রয়েছে ১৬টি প্যাসেঞ্জার ডেক।

ব্যালকনিতে অভিজাত স্যুইট। সাগরে ভেসে থাকতে থাকতে একঘেয়ে লাগলে যাত্রীরা যেতে পারেন ক্যাসিনোতে। আরো আছে জিপ- লাইন, সুইমিং পুল, ছোট্ট একটি গলফ, ভলিবল ও বাস্কেটবল কোর্ট। সেখানে ইচ্ছামতো খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারেন তাঁরা। আছে বেশ কয়েকটি নাইট ক্লাব, বার, লাউঞ্জ ও কারাওকে ক্লাব।

যাত্রীরা গাছপালার সানি্নধ্য চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সবুজে ঘেরা সেন্ট্রাল পার্ক থেকে। বাচ্চাদের জন্য আছে থিম পার্ক, নার্সারি এমনকি একটি কমেডি ক্লাবও। এসব কিছুর পাশাপাশি রয়েছে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, স্পা, ট্যাটু পার্লার, সায়েন্স ক্লাব ইত্যাদি। চমৎকার, আধুনিক জীবনযাত্রার জন্য যা প্রয়োজন, সে ধরনের সব সুযোগ-সুবিধা। এখানেই শেষ নয়।

নাচ-গান, অ্যাকোয়া শো, আইস স্কেটিং পারফরমেন্সসহ রকমারি সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নিয়মিতই। জাহাজের মেরিন অপারেশনের তদারকিতে আছেন ম্যানেজার ক্রিস ভ্যান রালটেন। তিনি জানান, প্রতিদিন শুধু জানালা ধোয়ার কাজেই নিয়োজিত আছেন কয়েক ডজন কর্মী আর ১৮টি রোবট। ৩৪ জন ক্রু নিয়োজিত আছেন লন্ড্রির কাজে। যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনো ধরনের বিপাকে পড়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

কারণ শুধু এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থাকে ২৬টি রান্নাঘর। এ শহরে রোগবালাই হলেও চিন্তা নেই, আছে তিনজন অভিজ্ঞ ডাক্তার। আছে একটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, যেখানে একজন মানুষকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার সব ব্যবস্থা আছে। জাহাজের সিনিয়র ডাক্তার ক্রিস টেইলর জানান, 'যেকোনো সময় যেকোনো যাত্রীর হার্টঅ্যাটাক হতেই পারে। সে জন্য সব সময় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রস্তুত রাখতে হয়।

' রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের চেয়ারম্যান ও চিফ এক্সিকিউটিভ রিচার্ড ফেইন বলেন, 'এত বড় জাহাজের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও ব্যবস্থা রাখতেই হয়। এতে যাত্রীরা সন্তুষ্ট হবে এবং বড় অঙ্কের টাকা গুনে এখানে বেড়াতে আসতেও রাজি হবে। ' সেই বড় অঙ্কের পরিমাণটা কেমন? ধরুন, এই জাহাজে করে ক্যারিবিয়ান সাগরে এক সপ্তাহ ঘুরবেন আপনি। যদি ভেতরের কেবিনে থাকেন, ভাড়া গুনতে হবে এক হাজার ৪৫৮ ডলার, বাইরের কেবিনের বেলায় পরিমাণটা গিয়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ২০০ ডলারে। ভাসমান জীবন এই জাহাজে বেড়িয়ে এসে ৫৯ বছরের লিন স্কট একে আনন্দময় এক অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অন্য এক যাত্রী জানান, এই জাহাজে কাটানো সময়টা দারুণ উপভোগ করেছেন তিনি। এখানকার খাওয়া-দাওয়ার প্রশংসাও করেছেন উচ্ছ্বসিতভাবে। যাত্রাটা যে আসলেই তিনি খুব উপভোগ করেছেন, তার প্রমাণ খুব শিগগির আবারও এতে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ওয়েসিস অব দ্য সি'জ নিয়ে কিন্তু একসময় বেশ সমালোচনাও হয়েছিল। রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কার্নিভাল করপোরেশন বলেছিল, এই জাহাজটিকে তারা মল অব আমেরিকার মতো মনে করে।

কার্নিভালের চেয়ারম্যান মিকি অ্যারিসন বলেছিলেন, অনেক মানুষ এই জাহাজ শুধু দেখতেই আসবে। ট্রাভেল গাইড ফ্রমার এর প্রতিষ্ঠাতা আর্থার ফ্রমার মন্তব্য করেন, ওয়েসিস অব দ্য সিজ সমুদ্রযাত্রাকে অনেকটাই অনাকর্ষণীয় করে তোলে। কারণ তাঁরা শুধু নির্দিষ্ট কিছু বন্দরেই থামেন। ভেনিস বা বারমুডার মতো পোর্টে জাহাজটি এর বিশাল আকৃতির জন্য ভিড়তেই পারে না। কিন্তু নিন্দুকদের এসব সমালোচনায় সাগরের এই ভাসমান শহরটির যে খুব একটা কিছু আসছে-যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়।

এর প্রমাণ টিকিটের চাহিদা। জাহাজের মালিক কম্পানি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী দুই বছরের জন্য বাইরের কেবিনগুলো ইতিমধ্যে বুক হয়ে গেছে। বুঝুন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.