আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান ঃ একটি রম্য পোস্ট

শিক্ষা যেখানে অসম্পূর্ণ, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

কয়েকদিন ধরে আমাদের ব্লগের মহান হিজবুতী এক্স তথা হাইড্রোর লাফালাফি দেইখা মনে একটু দ্বন্ধ লাগতেছিল। অরণ্য সৌভিকের জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার প্রতিবাদে করা এই পোস্টেও তার কোরান এবং খিলাফত নিয়ে মাতামাতি দেখে মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছিল। এবার তার আসল কারণ খুঁজে পাওয়া গেল। ১৬ আগস্ট হিজবুত তাহরীর তাদের সংবিধান প্রণয়ন করেছে।

তাদের সংবিধানের মূল বিষয়বস্তু হল কোরান হাদিসের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা তথা জিহাদ। সংবিধানে (ধারা-১৯) বলা হয়, 'শাসক কিংবা শাসকের পদে আসীন যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম, পুরুষ, স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী, দায়িত্ব পালনে যোগ্য ও সক্ষম এবং ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। ' যে সংগঠনের সুত্রপাতই কিছু অসুস্থ মস্তিস্কের চিন্তাকে সম্বল করে সেখানে শাসকের পদে সুস্থ মস্তিস্কের লোক কোথায় পাবে বুঝতে পারছি না। আসেন আমরা দলে দলে হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশে যোগ দিই তাদের সংগঠনের এমন দুর্যোগে আমরা হাল না ধরলে বাংলাদেশে কোনদিনই খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবে না। জিহাদকে ফরজ করে হিযবুত তাহরীর দেশের সব মুসলিম নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে।

বলা হয়, 'জিহাদ সব মুসলিমের জন্য ফরজ। সুতরাং সব মুসলিম নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। ১৫ বছর বয়স্ক বা তদূর্ধ্ব প্রতিটি মুসলিম পুরুষের জন্য জিহাদের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে (ধারা-৫৬)। ' আমরা এমনিতেই অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে খেলতে ভালবাসি। ক'দিন আগে নাকি এক সাংসদের পিস্তল নিয়ে খেলতে খেলতে এক ব্যাটা মইরা গ্যাছে।

আমাদের প্রত্যেক মুসলমান ভাই সামরিক প্রশিক্ষন পাইয়া এইরকম ভুল আর করবে না। তাদের অস্ত্র বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান হইবে। তাছাড়া অস্ত্র দিয়ে শুধু জিহাদ নয়, খুন-ডাকাতি-ছিনতাইও চাইলেই করতে পারব। ১৫ বছর বয়স থেকেই এটা জায়েজ হইবে। "আপনার শিশুকে টিকা দিন" কিংবা "আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান" শ্লোগাণের পরিবর্তে আমরা নতুন শ্লোগান পাব "আপনার শিশুকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিন"।

'প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই জিহাদ ফরজ'-সুতরাং আর দেরী না কইরা দলে দলে হিজবুতে যোগ দিন এবং তাদের ইউটোপিয়াকে বাস্তবায়ন করুন। খিকজজজজজজজজজ। 'একজন নারী প্রধানত মা ও গৃহবধূ। তিনি একজন মর্যাদার পাত্র এবং তাঁকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখা বাধ্যতামূলক। ... একজন নারীর জন্য শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করার অনুমতি নেই।

সুতরাং একজন নারী খলিফা, মত্তুয়াউয়িন, ওয়ালি কিংবা আমির পদ গ্রহণ করতে পারবেন না। ' ব্লগের জামাতী ভাইবোনেরা (থুক্কু বোনেরা নন সাইয়ারা) আসেন হিজবুতীদের সাথে হাত মিলান। ওরা আপনাদের ভাল চোখে দেখেনা তাতে কী? ওদের আর আপনাদের চাওয়া তো একই। নারীরা হেরেমে বন্দী থাকবেন তাতে কী? আল্লাহ আপনাদের পাঠিয়েছে তো পুরুষদের সুখ দেয়ার জন্য। দোজাহানের অশেষ নেকী হাসিল করার জন্য আমাদের বোনেরা দলে দলে হিজবুতে যোগ দিন এবং হেরেমে বন্দী হোন।

তাদের রাষ্ট্রের মুদ্রা হবে স্বর্ণ বা রৌপ্যের। এ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ধাতবমুদ্রা ব্যবহার অনুমোদিত হবে না। তবে রাষ্ট্র প্রয়োজনবোধে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে অন্য কোনো ধরনের মুদ্রা প্রস্তুত করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সমপরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা থাকতে হবে। স্বর্ণ ও রৌপ্যের মুদ্রা! আহ! কী শান্তি! আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের এতদিনের স্বর্ণ-রূপার বাসনার পরিতৃপ্তি হবে।

হিজুরা নিশ্চয়ই বেহেশত থেকে প্রচুর স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রা তৈরীর জন্য আল্লাহর নিকট অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসবে। অথবা 'গারিনের মারন রশ্মি'র মতো পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে প্রচুর স্বর্ণ উত্তোলন করে দেশ ভরে তুলবে। আহ! বড়ই সৌন্দর্য হবে দেশ। রাবনের স্বর্ণলংকা! সংগঠনটি দেশে বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করবে এবং বিদেশিদের বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধার অধিকারও নিষিদ্ধ করবে। এমনকি রাষ্ট্র ছাড়া বাইরের দেশের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী বা সংগঠনের সম্পর্ক থাকাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রাখবে।

জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও আরব লিগের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্নের কথা বলা হয়েছে তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে। বলা হয়েছে, 'ইসলামী ভিত্তির ওপর গঠিত নয় কিংবা অনৈসলামিক বিধিবিধান সংবলিত কোনো সংগঠনে যোগ দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ' কথিত সংবিধানে আরো বলা হয়, 'খিলাফত রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ হবে দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে এ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান বাণীকে পেঁৗছে দেওয়া। এটিই খিলাফত রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। ' বিদেশী ইহুদী-নাসারা-মালাউনরা আমাদের দেশে এসে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

আমরাও বিদেশে কোন সাহায্যের হাত বাড়াবো না। আমাদের দেশের যেসব লোক তাদের বউ-বাচ্চা ছাইড়া বিদেশে থাকে তাদেরকে দেশে নিয়ে আসব। ইহাতে আমাদের স্ত্রীগণ পরকীয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারলে মাটি-গাছ-পানি এগুলো খাব। তারপর জিহাদী জোসে মালাউন ইহুদীগুলোরে মেরে তাদের ........ খাব।

পৃথিবীতে আমরাই আবার ক্যানিবলিজমের পূনরুত্থান ঘটাবো। আমরা ইসলাম কায়েম করবো। খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো। আসুন দলে দলে হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশে যোগ দিই। **অফিসে তাড়াহুড়া করে লেখা।

উপরের লিংকটায় খোঁচা দিয়ে পুরোটা দেখে নিয়েন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.