সব কিছু হেলে পড়ে - ১
মুক্তির ঘুড়িরা হারিয়ে গেছে এ সময়েরই কোন এক পড়ন্ত বিকেলে।
যে করেই হোক রিক্সা চালিয়ে যাওয়া ছেলেটার তাই বয়েস বাড়েনি এখনো।
সব কিছু হেলে পড়ে - ২
আমি জানি, এ পর্যন্ত যা লিখেছি, কিছুই হয়নি।
ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টাটা চেষ্টাই রয়ে গেল আজও।
সময়ের আঘাতে হারিয়েছি নিজস্বতা বলে যা কিছু ছিল।
আজ কল্পনার গতি কখনো সর্পিল, কখনো চক্রাকার,
প্রায়ই পতনোন্মুখ, কখনোই ঊর্ধ্বমুখী নয়।
পতনের ভয়ে হারিয়ে যায় সুর-ছন্দের রেশ,
পরাজিত কাঁধ ভেঙ্গে আসে,
সাথে হেলে পড়ে বোঝা মাথা আর বোকা মন।
কবিতা আর কবিতা হয়ে ওঠে না,
গদ্য হয়ে ওঠে গালিগালাজ।
সুতরাং এর পর যা কিছু লিখবো,
জানি সেটাও কিছুই হবে না।
তাই বুঝি কখনও সুমন-অঞ্জন,
কখনও মার্ক্স-এঙ্গেলসদের খুঁটি করে দাঁড়ানোটা,
আমার অভ্যেসই হয়ে গেল।
তবুও পারি না।
এই হেলে পড়া সময়ে,
দুঃসময়ের ছায়াটা শুধুই দীর্ঘ হতে থাকে।
সব কিছু হেলে পড়ে - ৩
ইতিহাস বলে আমরা খুব লড়াকু জাতি,
বর্তমান বলে আমরা খুব সহজেই বিক্রি হই।
ইতিহাস বলে আমরা মাছে -ভাতে বাঙ্গালি,
বর্তমান বলে আমরা পচা ডালে আর পচা ভাতে।
ইতিহাস বলে আমরা অতিথি পরায়ন,
বর্তমান বলে আমরা উদ্বাস্তু।
শুনেছি ইতিহাসের সবচে বড় শিক্ষা হল,
ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
তাহলে ইতিহাস আসলে কি বলে?
বর্তমান কোন ইতিহাসের ঘাড়ে চেপে আসে?
অবশ্য বিকৃতির সের দর কাগজের ভারে,
আমাদের ইতিহাসই আছে বড় অস্তিত্ব সংকটে,
আমাদের বর্তমানে বাকি আছে শুধু জাবর কাটা।
তাই কেউ উনচল্লিশ, কেউ পঞ্চাশ,
আর কেউ পড়ে আছে চুয়াত্তর বছরের চর্বিত চর্বনে,
তাতে আমাদের বর্তমানটা যতই হেলে পড়ুকনা কেন।
সব কিছু হেলে পড়ে - ৪
তবে ইদানিং আমাদের খুব ট্যাটাস বেড়েছে,
আমরা এখন অনেক এস্মাট।
নতুন কেনা আভিজাত্যকে,
আমরা যত্র তত্র দেখিয়ে বেড়াই অমানবিক ঔদ্ধত্তে।
সে সুবাদে আমাদের কারও পাছায় প্যান্ট সেঁটে থাকতে হয়,
আবার কারও পাছা থেকে খুলে পড়ি পড়ি বলে মনে হয়,
আবার কারও কারও ভন্ডামি মোটরবাইকে চেপে উঠে পড়ে ফুটপাথে।
আমাদের গতি জড়তার সামনে,
মানবিক মূল্যবোধ খেলো হয়ে ওঠে।
আধো বাংলা আর আধো ইংলিশে,
আমাদের ভাষা এমনকি বাংলিশও হয়ে ওঠে না,
বরং আমরা বাংলা, ইংলিশ দুটোই ভুলে যাই।
আহা আভিজাত্য! অনেক মূল্যে কেনা আভিজাত্য!
আমাদের সংস্কৃতি,
আমাদের ভাললাগা,
আমাদের বিকাশ,
আমাদের মৌলিকতার মূল্যে কেনা আভিজাত্য।
সবখানে তাই বারবার নিজেদের প্রমাণ করতে হয়,
নইলে আমাদের ট্যাটাস থাকে না,
বোধহয় আত্মবিশ্বাসের অভাবেই, হেলে পড়ে।
সব কিছু হেলে পড়ে - ৫
এদিকে বর্ষার ঢলে অবাক হয়ে দেখি,
আসলে আমাদের সবকিছুই হেলে পড়ছে।
আমাদের মেধা-মনন,
আমাদের নীতি-নিয়তি,
আমাদের শক্তি-সামর্থ,
আমাদের দক্ষতা-যোগ্যতা,
আমাদের প্রেম-ভালবাসা ছাপিয়ে,
এবার হেলে পড়ছে আমাদের ঘর -বাড়ি -বাসা।
ওপরে ওঠার সিঁড়িগুলো কখনও কখনও একেবারেই আনুভূমিক।
আমরা কিছুদিন এই নিয়ে বেশ ম্যাৎকার করব,
তারপর কিছুদিন পুরোনো গল্পের আড্ডায় জাবর কাটব,
তারপর ক্লান্ত হয়ে বোবা সময়ের স্রোতে ভেসে যাব।
অবশ্য এমনটা আমরা সব সময়েই যাই।
সুতরাং, আমাদের সবকিছু আবারো হেলে পড়বে,
আর চিন্তাগুলো এই একই চক্রে আবর্তিত হবে।
চিন্তাগুলো প্রায়ই পতনোন্মুখ, কখনোই ঊর্ধ্বমুখী নয়।
সব কিছু হেলে পড়ে - ৬
আমাদের সমাজ, রাজনীতি, হেলে পড়েছে আগেই,
অর্থনীতির সূচকটা তবু আয়নায় দেখে শান্তি পাই।
বাকি সব পতন আয়নাতেও দেখা যায় পতনের মত করেই।
অবশ্য হাজারো ব্যস্ততা ছাপিয়ে,
আয়না দেখার সময়টাও আমাদের নেই।
দেখলে আমাদের চোখে পড়ত,
বড় কদর্য, বড় হীন এই হেলে পড়া।
আমাদের সবকিছু হেলে পড়ে,
বহু ব্যবহারে একেবারেই অক্ষম এক নড়বড়ে যৌনাঙ্গের মত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।