আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষার্থীরা হারালো প্রায় দেড়শ’ কোটি শিক্ষাঘণ্টা

পৃথিবীর সকল শাষক গোষ্ঠীকে বুঝাতে হবে বঞ্চীতদের দুনিয়া একটাই,তারা একই স্বরে কথা বলে।

যানজট নিরসনের জন্য সরকার ১৪ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশের সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ দিকে রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুলেই পরীক্ষা শেষে ছুটির পর মাত্র স্কুল খুলেছে। কিছু কিছু স্কুলে দুই-তিন দিন ক্লাস চলেছে।

এমনকি অনেক স্কুল আছে যেগুলো ছুটির পর এখনো খোলেইনি। ঈদের ছুটির পরই আসবে পুজোর ছুটি। তার কদিন পরই আবার পরীক্ষা। স্বাভাবিক কারণেই অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ক্লাস না করে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সিলেবাস শেষ করবে? কীভাবে প্রস্ত্ততি নেবে আসছে পরীক্ষার। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক মহল এবং দেশের বিশিষ্টজনরা।

শিক্ষার্থীরা হারালো প্রায় দেড়শ’ কোটি শিক্ষাঘণ্টা : বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০০৮ সালের রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮২ হাজার ২৮১টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ এক হাজার ৬০৫ জন। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৫৬টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৮ জন। কলেজের সংখ্যা তিন হাজার ২৭৭টি।

শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৩ জন। সারা দেশে মাদরাসা শিক্ষার্থী আছে ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ১১১ জন। কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থী আছে চার লাখ ৫৩ হাজার ৩৭৫ জন। সব মিলিয়ে সারা দেশে মোট শিক্ষার্থী দুই কোটি ৭০ লাখ ২৬ হাজার ৪৭২ জন। এই শিক্ষার্থীদের গড় শিক্ষাঘণ্টা প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা।

সাধারণত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকে ৬০ ভাগ। তাহলে সরকারের এমন আগাম ছুটির সিদ্ধান্তের কারণে নির্দিষ্ট ছুটির দিন বাদেও অন্তত ১৫ দিন থাকে বাড়তি। সে হিসাবে শতকরা উপস্থিতি ৬০ ভাগ ধরে হিসাব করলে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন থেকে হারিয়েছে ১৪৫ কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৮ শিক্ষাঘণ্টা। প্রতিজন শিক্ষার্থী হারাচ্ছে তার জীবন থেকে ৯০ শিক্ষাঘণ্টা। যেভাবে ছুটির ঘোষণা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটির এ সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ রমজান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব দেয়। এর আগে যানজট নিরসনে ব্যবসায়ী ও ঢাকা মহানগর পুলিশ রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই মন্ত্রণালয়গুলো এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অন্যান্য বিভাগকে না জানিয়েই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৪ আগস্ট থেকে এ ছুটি ঘোষণা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসের একেবারেই শেষ থেকে শুরু করে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। সমস্যায় গ্রামীণ স্কুল-কলেজও : ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের দোহাই দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে সারা দেশের সব স্কুল-কলেজ।

বন্ধ হয়েছে গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গ্রামে কোনো যানজট নেই তবুও কেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনিতেই গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার মান কিছুটা নিম্ন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকে। তারপর আবার এভাবে বাড়তি বন্ধের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার রামগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হোসেন সাপ্তাহিক বুধবারকে টেলিফোনে বলেন, ‘আমাদের এখানে এমনিতেই নানা সময় নানা ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে ক্লাস কম হয়।

এখন সরকার ঢাকা শহরের যানজট কমাতে গিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কেমন সিদ্ধান্ত আমরা বুঝি না। এটা করে শুধু শুধু লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতি করার কী দরকার ছিল সরকারের?’ স্কুল-কলেজ বন্ধের প্রতিক্রিয়া : সরকার হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে নানা মহলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম বুধবারকে বলেন, আমরা প্রতিবছরই একটা পরিকল্পনা তৈরি করি বছরের শুরুতে-কীভাবে পড়াবো, কোন সময়ে গিয়ে কতটা পড়ানো যেতে পারে এসব নিয়ে।

কিন্তু সরকার হঠাৎ করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা বেশ বিপাকে পড়েছি। এটা আমাদের কাছে মোটেও সুবিধাজনক মনে হয়নি। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর বহমান বলেন, আমাদের স্কুলের রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিল, আমরা সেটা দিতে পারিনি। কাগজ জমা দেওয়ার কথা ছিল সেটাও করতে পারিনি। এভাবে হঠাৎ করে সরকার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল।

এমন সিদ্ধান্ত সরকার কেন হঠাৎ করে নিল সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যানজট নিরসনের জন্য যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এখনো রাস্তায় যানজট কেন? শিক্ষাবিদ প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, এমন আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়। সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক কিছু বিবেচনা করার দরকার ছিল। শিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এভাবে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে কিছু অসুবিধা তো হয়েছেই। এখন অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে গোলমাল দেখা দেবে।

এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আসলে এত তড়িঘড়ি করে নেওয়া উচিত হয়নি। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো অনেক আগ থেকেই চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল। বন্ধ কোনো সমাধান হতে পারে না : সরকার যানজট নিরসনের জন্য হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রথম সপ্তাহে রাস্তায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। যানজটের চিত্র রয়েছে আগের মতোই।

তাই এই বন্ধ করে দেওয়ার সংস্কৃতিকে স্বাগত জানাতে পারছেন না কেউই। এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা কোনো সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শন হতে পারে না। বন্ধ নয়, সব কিছু খোলা রেখে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে সরকার যানজট নিরসনের জন্য মার্কেট বন্ধ করেছে।

লেন পদ্ধতি চালু করেছে। ছোট ছোট দূরত্বে অটোমেটেড সিগন্যাল সিস্টেম চালু করেছে। কিন্তু এসবের কোনো একটিতেও সফলতা পায়নি সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার রাস্তার পাশের শপিং মল খোলা রেখে যানজট তীব্র করছে, অথচ বন্ধ করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

সূত্র: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.