মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
কী বিচিত্র ই-দুনিয়া!
ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোন থাকলেই শুধু চলে না, প্রযুক্তির এসব মাধ্যমে দরকারি বিষয়ের নানা রকম তথ্য, সমাধানের সমাহার (কনটেন্ট) থাকতে হয়। তবেই তো তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তিকে (আইসিটি) দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজে লাগানো যায়। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে বাড়ছে স্থানীয় তথ্য, উপাদান ইত্যাদি ই-কনটেন্টের পরিমাণ। ই-কনটেন্টের নানা রকম প্রকল্প নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেওয়া হলো ৯ আগস্ট রাতে, ঢাকার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে।
জাতীয় ই-কনটেন্ট ও উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি পুরস্কার ২০১০ নামের এ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক (ডিনেট)। সহযোগিতায় ছিল বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়।
এ প্রতিযোগিতায় ১৩টি বিভাগে পুরস্কৃত করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পকে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা ‘ওয়ার্ল্ভ্র সামিট অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।
যা ছিল প্রতিযোগিতায়
প্রতিযোগিতার শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগেই।
নানা বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল বিভিন্ন প্রকল্পের। ৯৩টি প্রকল্প অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয় ৪৮টি। সবশেষে বিজয়ী হয়েছে ৩২টি প্রকল্প। পুরো প্রতিযোগিতায় বেসরকারি খাতের ৫১টি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আটটি, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ১৭টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাতটি এবং আলাদাভাবে ১০টি প্রকল্প অংশ নেয়।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রতিটি বিভাগের পুরস্কার সংশিষ্ট ক্ষেত্রে দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নামে উত্সর্গ করা হয়।
সেরা প্রকল্পগুলোর কথা
ই-গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন
এ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেডের চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস স্বয়ংক্রিয়করণ প্রকল্প। ‘কাস্টমস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে সফল একটি ই-গভর্নেন্স প্রকল্প, যার মাধ্যমে কাস্টমস কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ৪২টি ধাপ থেকে কমে পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে।
ই-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড লাইভলিহুড
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ চিনি এবং খাদ্যশিল্প সংস্থার ডিজিটাল কেইন প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি। ডিজিটাল কেইন প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমের তৈরি এ পদ্ধতিতে আখচাষিরা মোবাইল ফোনের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে কী পরিমাণ আখ কখন মিলে আনতে হবে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারেন।
ই-এডুকেশন
এ বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ইন্টার-অ্যাকটিভ মাল্টিলিঙ্গুয়াল মাল্টিমিডিয়া এডুকেশন সফটওয়্যার ফর ক্লাস ওয়ার অ্যান্ড টু অব এনসিটিবি।
আনন্দ মাল্টিমিডিয়া, রাঙামাটির তৈরি এ শিক্ষা সহযোগী সফটওয়্যার দিয়ে শিশুরা সহজে পড়তে ও শিখতে পারে। বাংলা ভাষাসহ বেশকটি আদিবাসী ভাষায় এটি তৈরি করা হয়েছে। এ সফটওয়্যারটি জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠক্রম অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে।
ই-লোকালাইজেশন
কম্পিউটার ইন বাংলা ফর অল প্রকল্প চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এ বিভাগে। অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তৈরি বাংলা ভাষায় কম্পিউটার ব্যবহার জনপ্রিয় করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ।
কম্পিউটারের জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলো বাংলা ভাষায় রূপান্তের ফলে তৃণমূল এলাকায় কম্পিউটার ব্যবহারের বিষয় অনেক সহজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে উদ্যোক্তারা অফিস, ইন্টারনেট, ই-মেইল, মেসেঞ্জার ব্যবহারের সফটওয়্যার ইত্যাদির ভাষান্তর ও রূপান্তরের কাজ করে ফেলেছেন।
ই-হেলথ
চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমাদের গ্রাম ব্রেস্ট কেয়ার প্রকল্প। আমাদের গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রকল্পের স্তন ক্যানসার নির্ণয়, চিকিত্সার কাজে সহায়তা করে ব্রেস্ট কেয়ার নামের এ প্রযুক্তিগত সমাধান। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে রোগীদের পরামর্শ, চিকিত্সকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সেবাকেন্দ্রের ঠিকানা ইত্যাদি সেবাও দেওয়া হয়।
ই-কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ
এ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ। বাংলাদেশ জোনোসাইড আর্কাইভটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যাবিষয়ক একটি অনলাইন আর্কাইভ। এখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি-সংবলিত দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এ আর্কাইভে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন খবরের কাগজের কাটিং, গুরুত্বপূর্ণ দলিল, মাল্টিমিডিয়া এবং অন্যান্য ইতিহাসনির্ভর তথ্য।
ই-নিউজ
কম্পজগত ডট কম (http://www.comjagat.com) জিতেছে চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার।
এটি ওয়েবে সরাসরি সম্প্রচার ও খবর প্রকাশের একটি ওয়েবসাইট। কমপিউটার জগৎ ডট কম বাংলা ভাষায় একটি অন্যতম বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ ওয়েব পোর্টাল। এই ওয়েবসাইটে রয়েছে বিগত ১৯ বছরের প্রযুক্তিসংক্রান্ত খবরের আর্কাইভ।
মোবাইল কনটেন্ট
এ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেপারলেস ভর্তি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ভর্তি-ইচ্ছুরা তাঁদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিবন্ধন এবং ভর্তি ফি জমা দিতে পারেন।
একটি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ণয় ও প্রকাশ করা এবং সফল শিক্ষার্থীদের কাগজবিহীন ভর্তির ব্যবস্থাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
ই-ইনক্লুশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন
চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ডেইজি ফর অল। ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) তৈরি ডেইজি হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি মুক্ত সফটওয়্যার। এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইপসা প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রায় ৪৫৫ ধরনের বাংলা ও ইংরেজি ডেইজি প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। এখানে প্রকাশনাগুলো বড় ও রঙিন অক্ষরে প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ক্ষীণদৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজে পড়তে পারে।
ই-এন্টারটেইনমেন্ট
অনলাইন রেডিও লেমন২৪ ডট কম (http://www.lemon24.com) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এ বিভাগে। এমসিসি লিমিটেডের তৈরি করা এই সাইটটি বাংলা ভাষায় একটি বিনোদনমূলক ইন্টারনেট রেডিও। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসে বাংলা ভাষায় বিনোদনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও এ রেডিও শোনা যায়।
ই-সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বিজ্ঞানী (http://www.biggani.com)।
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চাকে জনপ্রিয় করাই বিজ্ঞানীর উদ্দেশ্য। এ পোর্টালে সংরক্ষিত রয়েছে গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা, প্রবন্ধ, শিক্ষামূলক পাঠপ্রণালি, বই ইত্যাদি। যে কেউ তাঁর নিজের লেখা এখানে আপলোড করতে পারেন।
ই-স্পোটর্স
এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বিডি প্লে ডট কম (http://www.bdplay.com)। বাংলাদেশিদের উপযোগী একটি অনলাইন গেমস খেলার ভুবন।
বিভিন্ন রকমের খেলার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন কারিগরি বিষয় যেমন হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার নামানো, গেমিং কৌশল ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য। এ সাইটে এক হাজার ৫০০-এর বেশি গেম রয়েছে।
সহযোগীরা
প্রতিযোগিতার সহযোগী হিসেবে ছিল ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো। মিডিয়া সহযোগী হিসেবে ছিল চ্যানেল আই এবং রেডিও এবিসি। আন্তর্জাতিক সহযোগী হিসেবে ছিল ডিজিটাল এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়া; জ্ঞান সহযোগী এবং ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড, অস্ট্রিয়া।
মানুষের জন্য, মাইক্রোসফট, ইনটেল এবং বিডিজবস.কম পৃষ্ঠপোষক এবং কমপিউটার জগৎ অনলাইন সহযোগী। লেমন ২৪ ডট কম ইন্টারনেট রেডিও সহযোগী।
ই-কনটেন্ট পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য প্রকল্পগুলো
ই-গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন
http://www.bangladesh.gov.bd (মিলেনিয়াম ইনফরমেশন সলিউশন লিমিটেড)। http://www.hajj.gov.bd (বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড)। মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা (এমআইএস ডিজি অব হেলথ সার্ভিস)
ই-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড লাইভলিহুড
http://www.byabsahrkhobor.com (বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক)।
http://www.ekrishok.com (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউিট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্ট)। শিপ ব্রেকিং ইন বাংলাদেশ (ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন শিপ ব্রেকিং ইন বাংলাদেশ)। জিজ্ঞাসা ৭৬৭৬ (উইন ইনকরপোরট)। তথ্যতরী (কেয়ার বাংলাদেশ)।
ই-এডুকেশন: কম্পিউটার টিচেস এভরিডে ইংলিশ (এমসিসি লিমিটেড)।
প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ (ইংলিশ ইন অ্যাকশন)। http://www.varsityadmission.com (সোলার সফট লিমিটেড)।
ই-লোকালাইজেশন: সামহয়্যার ইন বাংলাদেশ (সামহোয়্যার ইন নেট লিমিটেড)। ই-অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ লার্নিং সফটওয়্যার (ত্রিমাত্রিক)
ই-কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ: অমর একুশে (বিআরটি গ্রুপ)। http://www.biplobiderkotha.com
ই-নিউজ: http://www.techzoom24.com
মোবাইল কনটেন্ট: এসএমএস আইডি (আই-ইনফোমিডিয়া)
ই-ইনক্লুশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন: http://www.msme.com.bd (বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক)।
http://www.goldenbusinessbd.com (গোল্ডেন বাংলাদেশ)
ই-এন্টারটেইনমেন্ট: পিক্কু (ত্রিমাত্রিক)
সূত্র দৈনিক প্রথম আলো ১৩ আগস্ট ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।