আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিল্লীর সেই ঘটনা আর আমাদের অবস্থান

স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাই।

দেশের এবং বিশ্বের নানান আলোচনার মাঝে আমি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই যা মোটামোটি পুরোনো একটি তর্কের বিষয়। প্রায়ই আমরা পেপার পড়তে বসলে কোন না কোন ধর্ষণের খবর পড়ে থাকি, কিন্তু পুরো দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ছিল দিল্লীর সেই বাসে একজন মেডিক্যাল ছাত্রিকে ধর্ষণের ঘটনাটি। নিশ্চয় আপনাদের সবার মনে আছে ঘটনাটি??? এই ঘটনার পরে নানা রকম বিক্ষোভ, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন, মেয়েদের নিরাপত্তা, মেয়েদের চলাফেরা, আরও অনেক কিছু নিয়ে আলাপ আলোচনার অন্ত ছিলনা। Facebook এ একটা ছবি কম বেশি অনেকেই share করেছিলেন, আর সেই ছবিটা ছিলঃ একটা মেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং তাতে লেখা “Don’t teach me what to wear, teach your son not to rape.” মেয়েটা ভুল কিছু বলেনি, কিন্তু তারপরেও এই কথাটা নিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষ তির্যক মন্তব্য কিন্তু ঠিকই করেছেন।

তাদের ভাষ্যমতে, আজকাল মেয়েরা অতিরিক্ত খোলামেলা এবং উত্তেজক পোশাক পরে যা ছেলেদের প্রলুব্ধ করে যার ফলস্বরূপ নাকি এত এই ধরনের ঘটনা বেরে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা নিয়েই আসলে আমার কিছু বলার আছে। আমরা ছেলেরা বা পুরুষরা মেয়েদের পোশাক নিয়ে যার পর নাই চিন্তিত সবসময়। মেয়েরা পোশাক কেন এত টাইট পড়ছে, পোশাক খোলামেলা নাকি বেশি পর্দার, তা নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই। মেয়েদের এইসব বেলজ্জ পোশাক পড়ার এবং চলাফেরার কারনে তারা যে দোজখে যাবে এইটা নিয়েও আমরা Fully Concerned!!!!!! কিন্তু ভাই, আমরা নিজেদের নিয়ে কেন concerned হচ্ছিনা??? হ্যাঁ আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাক কোরআনে বলা আছে মেয়েদের শালীন ভাবে চলার ব্যাপারে, কিন্তু আমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছি যে এই কথাটাও বলা আছে পুরুষ যেন তার দৃষ্টিকে অবশ্যই সংযত করে চলে এবং তাকে তার হিসাবও দিতে হবে।

তাহলে এইযে আমরা এইভাবে বাজ পাখির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে পর নারীদের শরীরের প্রতিটি বাঁক আবিষ্কার করে বেড়াচ্ছি এতে আমরা কি খুব পুণ্য করে বেড়াচ্ছি?? এতে কি আমরা দোজখের অংশিদারীত্ব নিচ্ছিনা??? ছোটবেলাতে একটা কবিতা পড়েছিলাম আশা করি আপনাদের সবারই মনে আছে কোথায় আছে স্বর্গ, নরক কে বলে তা বহুদূর মানুষের মাঝেই স্বর্গ, নরক মানুষেতেই সুরাসুর... হ্যাঁ ভাই, আমাদের মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক নিহিত আছে। আমরা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলা, ব্যবহারের মাধ্যমে, আমাদের আচার আচরন, চলাফেরা, আমাদের সকল কাজের মাধ্যমে তা ঠিক করে নিতে পারি। এইগুলো আমরা সবাই জানি তারপরেও আমরা ঠিক হইনা। শুরুতে প্ল্যাকার্ড হাতে যেই মেয়েটার কথা বলেছিলাম, তার প্ল্যাকার্ড এর কথাটাকে আমি একটু অন্য ভাবে বলতে চাই। আমরা আমাদের সন্তানদের তা সে ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক শেখাবো ভাল একজন মানুষ হতে এবং তার কোন কাজের মাধ্যমে কোন মানুষকে কষ্ট না দিতে।

তখনি আমরা একটা ভাল ফলাফল পাব আমাদের এই ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকা সমাজে। একটা মেয়েকে বা একজন নারী কে ধর্ষণের পরে তার জীবনে যে ভয়াবহতা নেমে আসে, যদি যে ঘটনার পর বেঁচে থাকে তাহলে তাকে সারাজীবন কি পরিমান যে ভয়াবহ দগদগে ঘা অন্তরে বয়ে নিয়ে চলতে হয় তা শুধুমাত্র সেই বলতে পারে। আমরা শুধুমাত্র তার কষ্টটা কিছুটা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে পারি। এই কিছুটা অনুধাবন করতে পারলেও তো গা শিউড়ে উঠে। এটাই যদি আমরা আমাদের ছেলে সন্তান কে শেখাতে পারি যে এই যন্ত্রণা অনেক ভয়াবহ, এই কষ্ট ভোলার নয়, এবং এই কথাটি যদি তার অন্তরে গেঁথে দিতে পারি তাহলে সে আশা করি কোন মেয়ের দিকে তার লোলুপ দৃষ্টি দেয়ার আগে অন্তত একবার হলেও ভাববে।

ভাই, এই জিনিসটা শেখানর জন্য খুব বেশি শিক্ষিত বা ভাল পরিবারে জন্ম নেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি মা যেহেতু তিনি একজন নারী তিনি তার ছেলেকে মেয়েদের প্রতি এই সম্মান শেখাবেন। বাবারও দায়িত্ব যেহেতু তিনিও একজন নারীর পেট থেকেই জন্ম নিয়েছেন। পাশাপাশি আমরা আমাদের মেয়েদের দিকেও নজর দিব কারন যেহেতু রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছেনা বা যাবেনা। আমরা আমাদের কন্যা সন্তানদেরও অবশ্যই ভালভাবে চলতে পরামর্শ দিব।

তবে ভাই কেউ দ্বিমত পোষণ করলে করতে পারেন আমি অন্তত এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ছেলেদের দোষটাই বেশি খুঁজে পাই। আমাদের অস্থি মজ্জার মধ্যে যেন ঢুকে গেছে যে মেয়েরা হচ্ছে “মাল” একটা পণ্য, নিজের মা বোন এবং কাছের আত্মীয় ছাড়া অন্য সব মেয়েকে যেভাবে ইচ্ছা দেখা যায়, যা ইচ্ছা বলা যায়, রাস্তায় চলতে চলতে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়া যায়, মার্কেটের ভিড়ের মধ্যে সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমত গায়ে হাত রাখা যায়......। আপনাদের ছোট্ট একটা সত্য ঘটনা বলে শেষ করতে চাই, ঘটনাটা একদম সত্য ঘটনাঃ এক ছেলে তার মোবাইলে রাস্তায় চলার পথে লুকিয়ে মেয়েদের নানান রকম ছবি তোলে মাঝে মাঝে ভিডিও করে এবং পরে সেটা তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে। তার ভাষ্যমতে তার কাছে আছে নিত্যনতুন কালেকশান এর ছবি। একদিন তার এক বন্ধু তাকে বলল যে নতুন একটা ছবি আছে, যথারীতি তারা ছবি শেয়ার করে নিল, ছবিটা দেখা মাত্র ছেলের মাথায় বাজ পড়ল যেন, কারন সেটা যে ছিল তার নিজের ছোট বোনের ছবি।

ছেলেটা তার বন্ধুর মোবাইল থেকে ছবিটা ডিলিট করে দিতে পারলেও ছবি ততক্ষনে অনেক হাত ঘুরে অনেকের কাছেই পৌঁছে গেছে। ছেলেটা একদিন বাসায় গিয়ে দেখে তার আদরের ছোট বোন ফুঁপিয়ে কাঁদছে, কারন জানতে চাইলে তার বোন তাকে জানায় যে তার ছবি এখন অনেকের কাছে এবং কেউ সেটা ইন্টারনেটে দিয়ে দিয়েছে। ভাইটা শুধু বোকার মত বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল কিছু সে বলতে পারেনি, পারেনি বোন কে সান্ত্বনা দিতে। ছেলেটি পরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় এবং অনেকদিন লাগে তার স্বাভাবিক হতে। আশা করি এর পরে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনা।

তবুও আবার বলতে চাই, কিছু করার আগে একবার ভেবে দেখতে হবে যে আমার বা আমার পরিবারের সাথে সেরকম হলে সেটা কেমন হবে। হে আল্লাহ, আমাদের শক্তি দাও ভাল মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.