"বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র" দিল্লীর গনধর্ষণের শিকার মেডিক্যাল ছাত্রী আমানত এর ধর্ষনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের বেশ আলোচিত একটি ঘটনা। এটি আমি প্রথম পড়েছিলাম ফেসবুক এর একটি পেজ এর লিঙ্ক থেকে। পরবর্তীতে পত্রিকায়। এরপর ব্লগে। যখন প্রথমে এই ঘটনা আমাদের ব্লগার/অনলাইন এক্টিভিস্টরা ফলাও করে লিখে গেছেন তখন সত্যিই খুব ভাল লেগেছে।
ভাল লেগেছে এই ভেবে যে আমাদের দেশ নৈতিকতার দিক থেকে ভারতের চেয়ে শত গুনে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে অন্যায় হলে আমরা তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করি। মানবতা বিরোধী কিছু ঘটলে (তা যে দেশেই ঘটুক না কেন) আমরা কি বোর্ডে প্রতিবাদ এর ঝড় তুলি। গোপাল কৃষ্ণ গোখাল এর সেই অমর উক্তি, “What Bengal thinks today, India thinks tomorrow” অর্থাৎ “ যা (যাহা) বাংলাদেশ আজকে ভাবে ভারত তা ভাবে আগামীকাল” তখন ভীষণ সত্যি বলে মনে হয়।
কিন্তু ভারতের এই “আমানত” ঘটনার জন্য অপসংস্কৃতি আর নগ্নতায় ছেয়ে যাওয়া ভারতের মিডিয়া কি তাদের দায়ভার এড়াতে পারে? যৌনতা যাদের দেশে একটা ফ্যাশন, সানি লিওন এর মত পর্নস্টার রা যে দেশের টপ নায়িকা/মডেল, যে দেশের অবাধে যৌন উত্তেজক প্রডাক্টগুলো তরুনদের হাতে তুলে দেয়া হয়, যে দেশে পর্ণ ওয়েবসাইটগুলোর বিজ্ঞাপনগুলো সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়,যে দেশের সিনেমাগুলো শিলা কি জাওয়ানি আর মুন্নি বদনামের মত সুড়সুড়ি আইটেম গান ছাড়া চলেনা, যে দেশের একটা ক্রিকেট চ্যানেল পর্যন্ত ওভারের মাঝখানে "Get ready for the naughty world" শ্লোগানে কনডমের বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটবে এটা কি খুবই অস্বাভাবিক কিছু? অবশ্যই অস্বাভাবিক নয় বরং তাদের তৈরি Naughty World এ তারা এরকম Naughty Problem এ পড়বেন এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
এই রকম একটা কালচার, যেখানে ধর্ষণ কে উস্কে দেয়া হয় সেখানে ধর্ষণ হওয়া টা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। ভারতের সুশীল সমাজপর্যন্ত এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন ভারতের মিডিয়ার নোংরামীকেই ।
আগেই বলেছি আমি আমানত এর খবরটি প্রথমে পেয়েছিলাম ফেসবুক এর একটি ফ্যান পেজ থেকে। লাইক দিতেও কুণ্ঠিত হই নি। ধর্ষকদের বিচারের দাবীর সাথে একাত্মতা জানিয়েছি মন্তব্যের ঘরে।
সাধুবাদ জানিয়েছি পেজ এডমিনকে।
কিন্তু নিচের ঘটনাকে কি বলবেন? আমাদের কালচার নিয়ে যে গর্ববোধটুকু ছিল তা কি কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করে না এই ঘটনাটি? যৌনতা যে দেশে একটা ফ্যাশন সেই দেশের মেয়ে যখন ধর্ষনের শিকার হয় এ দেশী ভাইদের/পেজ এডমিনদের তখন কষ্টে বুক ফেটে যায় আর এ দেশের একজন তরুনী যখন শারিরিক লাঞ্ছনার শিকার হয় তখন সেই সকল ভাইদের/পেজ এডমিনদেরকেই দেখা যায় শারিরিক লাঞ্ছনার শিকার মেয়েটিকে নিয়ে উপহাস/রসিকতা করতে। পেজে ফ্যান বাড়ানোর জন্য এ কোন পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন আপনারা?
ভিডিওটি বোধহয় অনেকেই দেখেছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ভিডিওটি এ পেজ থেকে ও পেজে শেয়ার হয়েছে হাজারবারেরো বেশি। আমার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুকে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখলাম।
কৌতূহল নিয়ে ভিডিও টা নিজেও দেখলাম। বিষয়বস্তু অনেকটা এরকমঃ একটা ছেলে একটা মেয়েকে কোন একটা ক্লাসরুমে (কোচিং কিংবা কলেজ হবে) হাতে একটি গোলাপ ফুল নিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছে। মেয়েটি ভেবেছিল তাকে হয়ত ছেলেটি রোমিও স্টাইলে প্রেম নিবেদন করতে যাচ্ছে। কিন্তু হায়! অভাগী তখনো জানা ছিল না যে আর কয়েক মুহুর্ত পড়েই তার জন্য গোলাপ নয় বরং গোলাপের কাটা অপেক্ষা করছে। মেয়েটির চোখেমুখে কিশোরী সুলভ চঞ্চলতা।
খানিকটা লজ্জাও তার মধ্যে স্পষ্ট। ছেলেটি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে আই আই করে কিছু একটা বলতে যায়, শেষে মেয়েটির গালে সজোরে চড় মারে এবং বলে, আই স্লাপ ইউ (I Slap You)! বোঝাই যায় যে এই অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের জন্য মেয়েটি একদমই প্রস্তুত ছিল না। সে হয়ত তার দুঃস্বপ্নেও এরূপ কিছু আশা করে নি। যদিও লো-রেজুলেশনের ক্যামেরা থেকে ভিডিওটি করা হয় কিন্তু কারো বুঝতে বাকি থাকে না কেমন হতে পারে তার লজ্জায় বিবর্ন হয়ে যাওয়া মুখখানি। ঠিক ঐ মুহুর্তে মেয়েটির মনের অবস্থা কি হতে পারে তা আমাদের অনুমানের ও বাহিরে।
তার এই পরিস্থিতি দেখে ছেলেটির বন্ধুবান্ধরা বেহায়ার মত হাসাহাসি করে। বুঝতে কারো বাকি থাকে না যে পুরো ব্যাপারটিই সাজানো। মেয়েটিকে শিক্ষা(!) দেয়ার জন্য কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে এই রকম কাপুরুষের মত কাজটি করেছে।
আচ্ছা মেয়েটির কি দোষ ছিল? সে কি ঐ ছেলেটার প্রেমে প্রথমে সারা দেয় নি নাকি অন্য কিছু (এটাকেই যথাসম্ভব কারন মনে করা হচ্ছে)? সে যাই হোক, এভাবে একটা মেয়েকে অপদস্ত করা আর তার ভিডিও প্রকাশ করার মাঝে পুরুষত্ব বলতে কি কিছু আছে? গতকাল এক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস এর লাইনগুলো খুব মনে পড়ছে এখন - "কোনো ছেলে যদি তার আশেপাশের মেয়েগুলোকে রাণীর মতো সম্মান করে তবে বুঝতে হবে সেই ছেলে নিজেও কোনো রাণীর হাতেই লালিত পালিত হয়েছে। "
যারা এই ঘটনার মূল হোতা, আপনাদের সবাইকে ছাত্র(!) বলেই মন হল।
দিনে দিনে আপনারা এই শিখছেন? আপনার বাসায় কি আপনার মা আপনাকে কখনই শেখায় নি কি করে নারীদের সম্মান দিতে হয়? নাকি আপনি আপনার মাকেও সম্মান দেন না? আপনার কি বোন আছে? তার সাথে যদি এমন একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে আপনি কি পারবেন সেই ঘটনা পেজে পেজে, জনে জনে ছড়িয়ে দিতে?
ঘৃণা হচ্ছে আপনাদের জন্য যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন আর ধিক্কার সেই সকল হীন মানুষিকতার পেজ এডমিনদের যারা নারীর শ্লীলতাহানির মত ঘটনাকেও পেজ প্রমোট করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। যখন দিল্লীর ঘটনা ঘটেছে তখনো আপনারা ফলাও করে শেয়ার করেছিলেন। সেটা পজেটিভলি নিয়েছিলাম। কিন্তু এবার কেন করলেন? পেজে ফ্যান বাড়ানোই কি আপনাদের কাছে এতটাই মুখ্য? মেয়েটাকে নিজের বোন ভাবতে পারলেন না একবারো? আপনারা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নামের কলঙ্ক। থুঃ ... .. .
(ফেসবুকে দুজনের দুটি মন্তব্য থেকেই মূলত এই লেখার অনুপ্রেরনা পেয়েছি।
এখানে নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিতভাবে পুরো ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যারা ভিডিওটি দেখেন নি তাদের জন্য মিডিয়াফায়ারে আমি ভিডিওটি আপলোড করেছি। আমি ফেসবুক এর কোন নষ্ট পেজকে প্রোমোট করতে চাই না। এখান থেকে নামিয়ে দেখতে পারেন ভিডিওটি (দৈর্ঘ্যঃ ৫৬ সেকেন্ড, সাইজঃ১MB)। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল দয়া করে নোংরা উদ্দেশ্যে এটি শেয়ার করবেন না।
ধন্যবাদ। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।