এই রাতের বেলা আর বাস টাস পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। হেঁটেই যাই। একটা সিগারেট ধরিয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম। শীত মোটামুটি পড়েছে। এতো রাত হবে ভেবে সোয়েটার নিয়েই বেড়িয়েছিলাম।
সারাদিন জিনিসটাকে ঝামেলা মনে হলেও এখন খুব উপকারী লাগছে। ও কি ? সামনে একটা জটলা কেন? অ্যাকসিডেন্ট নাকি? কেউ মরেছে? না আহত?
তেমন কাজ নেই। বাসায় ফেরারও তাড়া নেই। সিগারেটে একটা টান দিয়ে এগিয়ে গেলাম। ভিড় তেমন জোরালো না।
একটু পাতলা। দুএকজনের পায়ের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে রক্ত। এক্সিডেন্ট হবে বোধহয়। নাকি মার্ডার। এখানেই মেরেছে নাকি মেরে এখানে ফেলে রেখে গেছে? যাই হোক গেলেই ঘটনা জানা যাবে।
কাছাকাছি হতেই দেখলাম একটি ছেলে পাগলের মত হাত নাড়িয়ে গাড়ী থামানোর চেষ্টা করছে। আহতকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য হয়তো। তাই কি হয় রে পাগল, কেউ এতো রাতে থামে নাকি?
ভিড় ঠেলে একটু এগিয়ে গেলাম। একটা উলঙ্গ মেয়ে শুয়ে আছে। গায়ে এখানে সেখানে আঁচড়ের দাগ।
বেশ কিছু কামড়ের দাগ ও আছে। সেসব থেকে বেরোনো রক্ত অনেক আগেই থেমে গেছে। নিঃশ্বাস এখনও নিচ্ছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুক ও ওঠানামা করছে। দেখতে খারাপ লাগছে না।
ভিড়ের অনেকে সেটাই দেখছে। কিছু ইস আহ এসব বলছে। কেউ জানতে চাইছে কি ভাবে হল। কয়জন ছিল। আহা রে, এভাবে কেউ করে? সঙ্গের ছেলেটার তখন উদ্ভ্রান্ত অবস্থা।
গাড়ী দেখলেই থামানোর চেষ্টা করছে। আর ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে দেখছে মেয়েটা বেঁচে আছে কি না।
কিছু সাহায্য করা উচিৎ? কিন্তু কি করব? গায়ের সোয়েটার খুলে দিলে আমার ঠাণ্ডা লাগবে। তাঁর চেয়েও বড় কথা হাজার টাকা দিয়ে কেনা সোয়েটারটা যাবে। সত্যি কথা বলতে কি আমার এখান থেকে সরতে ইচ্ছা করছে না।
ঐ যে বললাম নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুকের ওঠানামার দৃশ্য। আড় চোখে দেখে নিলাম কেউ আমার এই তাকিয়ে থাকা লক্ষ্য করছে কি না। নাহ, সবাই আমার ই মত। একদৃষ্টি তে দেখছে। এমন সুযোগ কি সবসময় পাওয়া যায় বলেন?
দু পায়ের মাঝ দিয়ে রক্ত বয়ে যাচ্ছে।
এই ঠাণ্ডায়, এভাবে উলঙ্গ থাকলে তো কিছুক্ষণ পরে এমনিই মরবে। এমন সময় একটা পুলিশ ভ্যান আসলো। নেমে পরিস্থিতি দেখল। সাহায্য করবার খুব একটা ইচ্ছা আছে বলে মনে হল না। কি হয়েছিল, কখন ঘটেছে, কয়জন ছিল, বাড়ী কোথায়—শুরু হলে টিপিক্যাল পুলিশি জেরা।
ছেলেটা একটা কাপড় চাইছিল। মেয়েটাকে ঢাকবার জন্য। সেদিকে কোন পুলিশেরই নজর নেই। নিজেদের মধ্যে আলাপ চলছিল। অপেক্ষাকৃত বিজ্ঞ একজন হিসেব করে জানাল ঘটনাটা তাঁদের থানার আওতায় পরে না।
বাকীরা হাফ ছেড়ে বাঁচল। সবাই গাড়ীতে উঠে তাঁদের দৈনন্দিন টহলে বেড়িয়ে পড়ল।
এ ব্যাপারটা আমার মাথায় প্রথমে আসে নি। যদি এই নিয়ে কেস হয়? তখন সাক্ষী হিসেবে ডাক পরে? সর্বনাশ। প্রতিদিন কোর্টে হাজিরা দেয়া।
যাও বা একটু ভেবেছিলাম গাড়ী থামাতে ছেলেটার সাহায্য করব, বাদ দিলাম। উকিলি জেরায় কে পড়তে চায় বলেন। দেখা যাবে প্রমাণ করে দিবে কিছুক্ষণ আগে আমিই রেপ করে ফেলে রেখে গিয়েছি, আর এখন দেখতে এসেছি মরে গেছে কি না। পুলিশি ব্যাপারে জড়ানো মানেই জীবন ছারখার। তাঁর চেয়ে সার্টের কলার উঁচু করে যতটা সম্ভব কান মুখ ঢেকে নিঃশ্বাস দেখতে থাকলাম।
এমন সময় আরও একটা পুলিশ ভ্যান আসলো। পাশের জন বলল এটা চার নম্বর। মানে আগের তিনটি ভ্যান একই গল্প শুনিয়ে কেটে পড়েছে। এই গ্রুপের নেতা বোধহয় একটু গবেট প্রকৃতির। সাহায্য করতে রাজী হল।
বোধহয় ভ্যানে একটা চাদর ছিল। এনে ঢেকে দিল মেয়েটাকে। চলমান নিঃশ্বাস দেখায় বাঁধা পড়ল। অনেকেই হয়তো অসন্তুষ্ট হল। বিশেষ করে যারা খুব বেশীক্ষণ দেখতে পায় নি।
আমি অবশ্য মাঝামাঝিদের দলে। আরও একটু দেখতে পারলে মন্দ হত না। তারপরও অনেকক্ষণ সুযোগ পেয়েছি।
উৎসাহী জনতা ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগলো। কেউ আবার শোনার অপেক্ষায় থাকল।
যদিও পুরো ঘটনা সংক্ষেপে প্রতিটা পুলিশ ভ্যানের পুলিশ কর্মকর্তা কেই বলেছে। পুরনো যারা আছে তাঁদের মুখস্থ। তারপরও শুনতে ভালোই লাগছে। ছয়জন ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে নাকি ঘটনা।
আর বেশীক্ষণ থাকা ঠিক না। কখন আবার সাক্ষী হিসাবে নাম লিখে নেয়। ধীরে ধীরে পিছিয়ে আসলাম। অনেক তো হল দেখা। আর কত।
যা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বাসায় যেয়ে এখন আবার সেটা থামাতে হবে। নতুন একটা সিগারেট ধরালাম। দিনটা যেমন ই যাক, রাতটা বোধহয় খারাপ গেল না, কি বলেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।