নারী শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশেও যে ক'জন হাতে গুনা মহীয়সী নারী স্বীয় সাধনা ও মনোবল নিয়ে এগিয়ে মনুষ্যত্বের স্বাদ অর্জন করেছেন তন্মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর কথা শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করতে হয়।
জন্ম
নবাব ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা জেলার লাকসামের অন্তর্গত পশ্চিমগাঁও গ্রামে ১৮৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জমিদার আহমেদ আলী চৌধুরী এবং মাতার নাম আরফান্নেছা চৌধুরানী। নবাব ফয়জুন্নেছা পিতা-মাতার প্রথম কন্যা সন্তান।
শিক্ষা
লেখাপড়ার প্রতি ফয়জুন্নেছার অধীর আগ্রহ দেখে গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
গৃহ শিক্ষকের সহযোগিতায় পারিবারিক পরিবেশে অন্তঃপুরে থেকে ফয়জুন্নেছা তাঁর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলেন। খুব শীঘ্রই বাংলা, আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন।
জনসেবামূলক কার্যাবলি
পিতার মৃত্যুর পর মায়ের কাছে জমিদারির ভার আসলেও ফয়জুন্নেছাকেই জমিদারির খোঁজ খবর নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। এই সুযোগে ফয়জুন্নেছা জনসেবামূলক বহু কাজ করেন। অসংখ্য মসজিদ, মক্তব, স্কুল, পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন।
কুমিল্লার নানুয়াদীঘির পাড়ের শৈলরানী স্কুলের প্রাথমিক শাখাটি তাঁর প্রতিষ্ঠিত।
১৮৭৩ সালে সর্বপ্রথম মুসলমান মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন কুমিল্লা প্রখ্যাত স্কুল নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
পশ্চিমগাঁও এ নিজ বাসস্থানের পাশে স্থাপন করেন দশ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ।
মহিলাদের চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার চর্থায় ১৮৯৩ সালে ফয়জুন্নেছা জেনানা হাসপাতাল নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। বর্তমানে এটি "ফয়জুন্নেছা ফিমেল ওয়ার্ড" নামে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত রয়েছে।
১৯০১ সালে পশ্চিমগাঁও এ বি.এন.এফ.এন যুক্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে উদার হস্তে দান করেছেন। রাস্তাঘাট, পুল, দীঘি, পুকুর ইত্যাদি কাজেও তিনি স্বতর্স্ফুতভাবে এগিয়ে এসেছেন।
সাহিত্য সেবা
সাহিত্যসেবী হিসাবেও ফয়জুন্নেছা শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি পৌনে পাঁচশত পৃষ্ঠার "রূপজালাল" গ্রন্থটি রচনা করেন।
১৮৭৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় এবং এরই মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম গ্রন্থকর্ত্রী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। "সঙ্গীত সার" এবং "সঙ্গীত লহরী" নামে প্রকাশিত দু'খানা কাব্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। তবে সময়ের স্রোতে উপযুক্ত যত্নের অভাবে এগুলো এখন দুষ্প্রাপ্য।
নবাব উপাধি লাভ
ফয়জুন্নেছা তাঁর দানশীলতা ও জনহিতকর কার্যাবলির জন্য মহারানী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক ১৮৮৯ সালে নবাব খেতাবে ভূষিত হন। আনুষ্ঠানিকভাবে ও জাঁকজমক পূর্ণ পরিবেশে কুমিল্লায় সরকারিভাবে নবাব খেতাব দেওয়ার অভিষেক অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।
পৃথিবীর বুকে একমাত্র মহিলাই ফয়জুন্নেছা, যিনি নবাব উপাধি লাভে অলংকৃত হয়েছেন।
অনাড়ম্বর জীবন
নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদারি পাওয়ার পরও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করেছেন। মোড়ায় বসে জমিদারির কাজ তদারক করতেন আর চটি জুতা পায়ে দিয়ে চলাফেরা করতেন। মাঝে মাঝে প্রজাদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করার জন্য পালকী বা ঘোড়ার চড়ে বিভিন্ন মৌজায় যেতেন।
মৃত্যু
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী প্রায় ৭০ বছর বয়সে ১৯০৩ সালে ২৩শে সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১৩১০ বাংলা সনের ১০ই আশ্বিন ইন্তেকাল করেন।
তথ্যসূত্র- নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।