মানুষ পরাজিত হতে পারে কিন্তু কখনো ধ্বংস হয় না। - আর্নষ্ট হেমিংওয়ে
সুজাতা আমার সাথে পড়তো, শুধু সুজাতা নয়-রমা, ওই যে রমা রায় শহীদ মিনারের পথ নাটকে থুতনিতে দাড়ি পড়ে রাজাকার সাজতো। লোকজন প্রাণ ভরে গালি দিত আমিও দিতাম, সেও আমার সাথে ছিলো। একসাথে ক্লাশ, টিএসসিতে দই ফুচকা, বিট্রিশ কাউন্সিলে হাইথট সিনেমা দেখতে দেখতে একসাথে হাই তুলতাম। সুজাতা বলতো, আমরা দু জন হচ্ছি লরেল আর হার্ডির মতো।
কারণ নাদুস নুদুস ছোট খাট আমার পাশে, টিঙ টিঙে লম্বা রমাকে লাগতো ঠিক সেরকমই।
জার্নালিজমের মইদুল, এনথ্রোর অমল, ও হ্যা অমল না দারুন কবিতা লিখতো। আজিজের অনেক লিটল ম্যাগাজিনে ওর কবিতা ছাপা হতো। আর ভার্সিটির সকলের আদুভাই যীসুদা বাজাতো গিটার। অসাধারণ বাজাতো।
এমনও দিন গেছে শহিদুল্লা হলের সামনে পুকুরে ধারে বসে ডিসুদা গিটার বাজাতো আর আমরা গলা ছেড়ে গাইতাম। চা-সিগারেট চলতো আর মাঝ রাতের শেষে চান-খাঁর পুল গিয়ে ঠান্ডা পরাটা, বুটের ডাল আর ডিম গিলতাম গোগ্রাসে।
সেই সুজাতা ডাবল ডেকারে বসে বাড়ি যেত, দুহাতে দড়জা ধরে কখোনো দাড়িয়ে। তার দুটো দু পাশে ঝুলিয়ে রাখা বেণী দেখেই কিনা রমা তার প্রেমে পরলো। আমাদের আড্ডায় আর ওদের দেখা যায় না।
বরং শিশু একাডেমি, কার্জনের চিপায় ওদের আবিষ্কার করা গেল। বাসে সুজাতার সাথে মিরপুরের দিকে রমাও যাত্রী হলো। রিকশায় আর তিনজন উঠি না। ওরা দুজন উঠে আর আমি পিছনে দাড়িয়ে চশমার কাঁচ মুছি।
ক্লাশের গুন্জ্ঞন-সিনিয়রদের ভ্রকুটির-আর আমাদের নিয়মিত পচাঁনির মাঝে ওরা ভালোই ছিলো।
আমাদের সাথে নিয়মিত আড্ডা হতো। সুজাতা বসতো রমার গা ঘেষে। পিঠে দুটি বেনী,ফর্সা গোলগাল মুখের সুজাতা আর রোদে পোড়া রমা, তার এলোমেলো চুল, মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি আমার আজো চোখের সামনে ভাসে। যীসুদার গিটার, মইদুলের ভাঁড়ামী- সুজাতার বাসায় বানানো আচার নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে করতে আমাদের চলে যেত সকাল থেকে সন্ধ্যা।
শেষ বর্ষে এসে অমলের ক্যান্সার ধরা পড়লো।
ডোনেশনের জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। গলায় ধুলানো প্লাকাডে প্রতিভাবান কবি আর মেধাবী ছাত্র লেখা দেখে অনেকে টিটকারী দিয়ে দশটি টাকার বাক্সে দিয়ে যেত। সুজাতা ছিলো অমলের পাশে, হাসপাতালে, ও যখন ইন্ডিয়া গেল চিকিৎসার জন্য এয়ারপোর্টে সুজাতা ভেউ ভেউ করে কেঁদেছে।
পাশ করেছি আমি আর রমাও চাকরী পেয়েছি একটা যেনতেন। রমা নাটক পাড়ায় যেতে ছাড়তো না।
সেই থুতনীতে দাড়ি লাগানো রাজাকার-এর পার্ট। যীসুদাকে কবরে নামিয়ে একদিন শুনলাম সুজাতা নেই। কানাডার কোন পাত্রের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গ্যাছে। মধ্যবিত্ত পরিবার এমন ভালো পাত্র হাতছাড়া করেনি। আমি আর মইদুল নিমন্ত্রন পেয়ে গিয়েছিলাম।
কথা হয়নি। শুধু প্রথম ব্যাচে বসে ধুমসে রেজালা খেয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম।
অফিসের পিসি থেকে সুজাতার সাথে ফেসবুকে চ্যাট হয় মাঝে মাঝে, ও ছবি আপলোড করে, আমি দেখী। মোটা হয়ে গেছে খুব। চুল খাট হয়েছে, দুপাশের সেই বেণী নেই।
মইদুল মাঝে মাঝে গালি দেয় শালী..........। কিন্তু আমি কখনো সুজাতাকে বকি না। রমার সাথেও আলাপ হয়, মাদক নিবারণের এক কেন্দ্রে। গেলেই টাকা চায়-কাঁদে।
আমি জোর করে হাত ছাড়িয়ে চলে আসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।