প্রতিদিন ঘুমের আগে ও পড়ে আড্ডা খাই
শিরোনামটি দেখে কেউ হয়তো চমকে ওঠছেন,আবার কারো কারো কপালের চামড়ায় ভাজ পড়েছে যে লেকটা বলে কী!
হ্যাঁ ভাই, আমি মনে হয় ভুল কিছু বলিনি। কারণ যুগ যুগ ধরে মানুষ বেহেস্তে যাওয়ার জন্য- বেহেস্তের পথ পাওয়ার জন্য পীর আউলিয়াদের দরবারে যাতায়াত করে আসছে। উদ্দেশ আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ করে বেহেস্তের উপযোগী হওয়া।
দু:খজকন হলেও সত্য যে, বিগত দুই তিন দশক যাবত বিভিন্ন দরবার শরীফে মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলের যাতায়াতও পরিলক্ষিত হয়ে আসছিলো। গত কয়েক বছর যাবত তা ব্যাপক আকার ধারণকরে মানুষের পাশাপাশি গরু- ছাগলও সমানতালে চলছে।
সমানতালে কথাটা পুরোপুরি ঠিক হলো না, বরং বলতে হবে পাল্লা দিয়ে চলছে।
আর এই পাল্লায় দিন দিন মানবসমাজকে পরাজিত করে গরু সমাজ বিজয়ের মাল্য ছিনিয়ে নিতে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। তাইতো বিভিন্ন দরবারের ওরশ শরীফে দেখা যায়- মানুষের প্যান্ডেলের চেয়ে গরুদের প্যান্ডেল অনেক বড় করে তৈরি করা হচ্ছে।
তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, বর্তমান আত্মশুদ্ধি মানুষের চেয়ে গরুদের বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে? না কি তধাকথিত এসব দরবার শরীফে পীর মুরীদি ও আত্মশুদ্ধির আড়ালে পেট পূজার জমজমাট ব্যবসা চলছে।
আমার এই লেখা প্রকাশের উদ্দেশ কারো অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া নয়, বরং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধর্মের নামে যে অধর্ম, ওরস-মাজার আর ইসালেসওয়াবের নামে যে ধান্ধাবাজি চলছে এবং যার কারণে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে- তার কিঞ্চিত পরিমাণ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া।
আমি নিজ চোখে এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেইটের একটি বিবরণ উল্লেখ করছি। এইতো কিছুদিন পূবেূর কথা, সেখানে দেখলাম বার্ষিক ওরস শরীফের নামে বিশাল প্যান্ডেল ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার মাধ্যমে অসংখ্য বড় বড় রাজকীয় গেইট তৈরি করা হয়েছে । যেখানে ন্যূনতম পনের থেকে বিশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে । আমার মধ্যে কৌতুহল জন্ম নিল যে, লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করে এসবের মানে কী! আর এতো টাকার যোগানই বা কীভাবে হয়?
আমার এই কৌতুহলের জবাব পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না ।
সামান্য অগ্রসর হয়ে মানিক মিয়া এ্যভিনিউ মাঠে দেখলাম বিশাল এক প্যান্ডেল । যা পূর্বের প্যান্ডেল থেখে কোনোক্রমেই ছোট হবে না । মজার ব্যাপার হলো এখানে কোনো মানুষজন নেই, শুধু গরু আর গরু। তবে সান্ত্বনার কথা হলো গরুদের সঙ্গে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়নি, বরং গরুদের প্যান্ডেলও মানুষের প্যান্ডেলের মতোই জাকজমকপূর্ণ করা হয়েছে ।
প্রশ্ন হলো আত্মশুদ্ধি ও ইসালেসওয়াবের অনুষ্ঠানে এতো আলোকসজ্জা আর আড়ম্বরতা কেন? এসব অনুষ্ঠানতো যতো অপচয়মুক্ত অনাড়ম্বর পরিবেশে হবে ততোই উত্তম।
হেদায়েতের আলোকবর্তিকা লক্ষাধিক নবী-রাসূল (সা.) তো অনাড়ম্বর পরিবেশেই দীনের দাওয়াত দিয়েছেন । নবী-রাসূলগণের সুন্নত তরিকা বর্জন করে সওয়াবের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয়ের উদ্দেশ কি সওয়াব অর্জন না অন্য কিছু ? পবিত্র কুরআনে তো অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে । আত্মশুদ্ধির নামে কি তাহলে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে শয়তানের ভাই বানানো হচ্ছে ?
যাহোক গরুর আধিক্য দেখে মনে মনে বললাম, মানুষের প্যান্ডেল খালি আর শত শত গরু এসেছে পীরের দরবারে আত্মশুদ্ধির জন্য । আজকের সমাজের মানুষগুলোর উপলব্ধি যদি এই গরুগুলোর মতোও হতো তাহলেও মনে একটু শান্তি পেতাম! আচ্ছা আল্লাহ তায়ালা এই গরুদেরতো আর বেহেস্ত দান করবেন না। এমন টিহলোতো অবশ্যই গরুর বেহেশ্ত নামে কোন বেহেস্ত থাকত।
একজন ওয়াচ ব্লগারের লেখা হুবহু কপি করে দেওয়া হল
লেখকের অনুমতি নিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।