আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারের চাপ ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় দিশেহারা বিএনপি

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের দুই বছরের মাথায় এসে অনেকটাই দিশেহারা অবস্থায় পড়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটি দাবি আদায়ে কয়েক দফা সময় বেঁধে দিলেও সরকারের ওপর কার্যকর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। উল্টো একের পর এক মামলা ও ধরপাকড়ের কারণে বিএনপি নিজেই এখন চাপে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেকটা পথহারা পথিকের মতো বিএনপি কখনো বিদেশি কূটনীতিকদের পেছনে দৌড়ঝাঁপ, কখনো জোটের শরিক জামায়াতের ওপর ভরসা করে আন্দোলন, আবার কখনো ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছে।

কিন্তু কোনোটাতেই সুবিধা করতে পারেনি। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় দলীয় কার্যালয়ের সামনেও সমাবেশ করতে পারছে না। পুলিশের অনুমতি উপেক্ষা করে সভা-সমাবেশ করার মতো সাংগঠনিক শক্তি-সামর্থ্যও দেখাতে পারছে না দলটি। নতুন কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। সাংগঠনিক দুর্বলতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠায় বিএনপির সঙ্গে সরকারও কঠোর আচরণ শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে চলেছে। এমনকি জামিনে মুক্তির পর কারা ফটক থেকে আবার আটক করা হচ্ছে। বিএনপির পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সরকারকে বাধ্য করতে পারছে না বিএনপি। এটা দলটির জন্য একটা সংকট ও সমস্যা। এ জন্য বিএনপিকে পুরোপুরি দায়ী করা যাবে না।

কেননা, ক্ষমতাসীনদের হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। তা ছাড়া সরকার প্রচণ্ড বেপরোয়া। তারা হয়তো যেকোনো সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করতেও পিছপা হবে না। তিন দফা সময় বেঁধে দেওয়া: বিএনপির রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন একজন বিশ্লেষক বলেন, বিএনপির অনেক সাধারণ সমর্থক রয়েছেন। তার প্রমাণ, খালেদা জিয়া সমাবেশ ডাকলে যানবাহন বন্ধ করাসহ সরকারের অনেক বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও বিপুল মানুষ জমায়েত হয়।

কিন্তু সেই জনতা কী নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়? সেটা হলো ‘আলটিমেটাম’। এ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকারকে তিন দফা আলটিমেটাম (সময় বেঁধে দেওয়া) দিয়েছেন খালেদা জিয়া। প্রথম দফায় ২০১২ সালের মার্চে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেন। এ সময় শেষ হওয়ার পর ১১ জুন দাবি আদায়ে আবারও সময় দিয়ে বলেন, রোজার ঈদের (২০১২) পর কঠোর আন্দোলন করা হবে। সর্বশেষ ৪ মে শাপলা চত্বরে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলেন।

সে সময়সীমা অতিক্রম করে আরও ১১ দিন পার হয়েছে। এরপর নতুন কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি দলটি। এর আগে গত মার্চে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তা কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও এখনো একটি কমিটিও গঠিত হয়নি। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জেলা, উপজেলায় ১৮ দলের শরিকদের নিয়ে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলেও শুধু খুলনা জেলায় তা করা হয়। কেন সংসদ বর্জন: যেকোনো সংকটে জনগণকে দলের সঠিক অবস্থান জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।

দলটি কেন সংসদে যাচ্ছে না, তা মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। একেকবার একেক দাবি বা অজুহাতের কথা বলা হয়েছে। কোনোটাই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। অথচ সাংসদ হিসেবে তাঁরা সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। আর সদস্যপদ রক্ষায় মাঝে মাঝে সংসদে যান।

একই কারণে আগামী ৩ জুন শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে দলটি যে সংসদে যাবে, সেটা কয়েক দিন ধরেই গণমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ গতকাল শুক্রবার সংসদে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। সাংগঠনিক ব্যর্থতা: এক-এগারোর ধাক্কায় বিপর্যস্ত বিএনপি গত চার বছরেও সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও দলের কাউন্সিল পর্যন্ত করতে পারেনি। মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে জেলা সদরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরসহ অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে চার বছরে।

কিন্তু কোনোটাই ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ১৮-দলীয় জোটে রূপান্তরিত হলেও সাংগঠনিকভাবে এর শক্তি-সামর্থ্য সামান্যতম বাড়েনি। কারণ, এ জোটের শরিকদের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব দল। বিএনপির বাইরে একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত জনবল বা রাজনৈতিক পেশিশক্তি রয়েছে। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখে জামায়াত নিজেই বেকায়দায় আছে।

নেতৃত্বের আস্থাহীনতা: বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার এ মুহূর্তে বড় সমস্যা হলো, নিজ দলের কোন কোন নেতাকে তিনি বিশ্বাস করবেন বা করবেন না, সেটা ঠিক করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে তিনি যেভাবে রাজপথে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার চেষ্টা করেছেন, দলের নেতা-কর্মীদের সেভাবে নামাতে পারেননি। ওই সূত্রটি বলছে, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির এক সভার শুরুতে খালেদা জিয়া সব নেতার মঠোফোন জব্দ করেন, যাতে সভার তথ্য পাচার না হয়। কিন্তু ফোন জব্দ করার এ খবরও সভা শেষে ফাঁস হয়ে যায়। নেতৃত্বের মধ্যে আস্থাহীনতার এটা একটা উদাহরণ।

হরতালনির্ভর রাজনীতি: বিএনপি এ অবস্থায় অনেকটা সহজ কর্মসূচি হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘হরতাল’। সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল ডেকেই শেষ। আগের দিন সন্ধ্যায় দু-চারটা গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। কিন্তু হরতালে নেতা-কর্মীরা কেউ আর মাঠে থাকেন না। এ অবস্থার জন্য দলটির সাংগঠনিক ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, বিভিন্ন সময়ের ভুল সিদ্ধান্ত, জনসম্পৃক্ত সমস্যা-সংকটকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কাজে না লাগাতে পারাকে বড় কারণ বলে মনে করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

বিএনপি ও ১৮-দলীয় জোট এ আমলে এখন পর্যন্ত ৩১ দিন হরতাল করেছে। এতে বিএনপির কোনো লাভ বা সরকারি দলের কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে দেশের ও সাধারণ মানুষের। অবশ্য দলটির নেতাদের অভিযোগ, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তাঁরা স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও তৎপরতা চালাতে পারছেন না। সমাবেশ ডাকলে অনুমতি হবে কি না, আগের দিন বিকেল পর্যন্ত জানা যায় না।

মিছিল করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এম ইলিয়াস আলীকে গুম এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতার মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বিচক্ষণতার অভাব: বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও স্ববিরোধিতা নিয়েও বিরূপ আলোচনা আছে। শাহবাগের আন্দোলন নিয়েও একেক সময় একেক বক্তব্য ও দলীয় অবস্থান জানিয়েছে বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়েও বিএনপি তাদের অবস্থান মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে পারেনি।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়েও নানা মত আছে দলের মধ্যে। কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, কখনো নিচ্ছে না। এতে তৃণমূলের নেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি নতুন রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হলেন। এই দুই পদে নিয়োগকে বিএনপি সমর্থন করে কি না, এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব কী, দলীয় কর্মী-সমর্থক ও জনগণ জানে না।

যদি এ দুটি পদে নির্বাচন সঠিক বলে বিএনপি মনে করে, সেটিও পরিষ্কার করে বলা উচিত। সঠিক মনে না করলে, সে যুক্তিও তুলে ধরা উচিত। দলের নির্দিষ্ট কোনো মুখপাত্র নেই। কোনো বিষয়ে কার কাছ থেকে দলের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যাবে, সেটাও পরিষ্কার নয়। এ সরকারের শুরুর দিকে একবার নজরুল ইসলাম খানকে মুখপাত্র করা হয়েছিল।

এরপর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন। তিনি তিন দফায় কারাগারে যান। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলাম। তৃতীয় দফায় ফখরুল কারাগারে গেলে তরিকুল আর সমন্বয়ক হতে রাজি হননি। এরপর অগত্যা গণমাধ্যমের কাছে দলের বক্তব্য তুলে ধরার দায়িত্ব দেওয়া হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামানকে।

তিনি এখন অঘোষিত মুখপাত্র। উপদেষ্টাকে দিয়ে দলের মুখপাত্রের কাজ করানো বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকটের আরেকটি উদাহরণ। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মহাসচিব হওয়ার জন্য বিএনপিতে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গ্রেপ্তার হলে তখন দলের সমন্বয়কারী হতে কেউ রাজি হন না মামলা ও গ্রেপ্তারের আশঙ্কায়। ছাত্রদল ও যুবদলের অবস্থা আরও খারাপ।

সম্প্রতি বিবাহিত, বয়স্ক ও অছাত্রদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার পর ছাত্রদলের বিভক্তি আরও বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েকবার ছাত্রদল আলোচনায় এসেছে, তা এসেছে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে। যুবদলেও নেতৃত্বের মধ্যে বিভক্তি ও অবিশ্বাস প্রকট। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেছিল বিএনপি।

সর্বশেষ বিএনপি ভরসা করেছিল হেফাজতে ইসলামের ওপর। হেফাজতের লংমার্চ ও সর্বশেষ ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সমর্থন দেন খালেদা জিয়া। হেফাজতের ৫ মে ঢাকা অবরোধের দিন দুপুর থেকেই স্রোতের মতো হেফাজতের কর্মীরা নগরে ঢুকছিলেন। রাজধানীর কেন্দ্রস্থল জ্বলছিল। সংঘর্ষে মারা যাচ্ছিল মানুষ।

সারা দেশের মানুষ ছিল উদ্বেগের মধ্যে। ওই রকম পরিস্থিতিতেও দলের করণীয় ঠিক করতে সারা দিন বৈঠক করতে পারেনি বিএনপি। সারা দিন এ নিয়ে বিএনপির কোনো বক্তব্যও ছিল না। খালেদা জিয়া রাত সাড়ে আটটায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন। রাত সাড়ে নয়টায় তিনি ঢাকাবাসী ও দলের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন হেফাজতকে সহায়তা করা হয়।

যে হেফাজতের কর্মসূচিকে সামনে রেখে আগের দিন মতিঝিলের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, সেদিন রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি ও তাঁর দল করণীয় ঠিক করতে একসঙ্গে বসতেও পারেনি। এটাও বিএনপির সাংগঠনিক এক বিরাট সংকট। ওই রকম পরিস্থিতিতেও অন্য ৮-১০ দিনের মতোই সন্ধ্যার পর দলীয় নেত্রীর কর্মদিবস শুরু হয়। এমনকি দলটিতে কোনো ‘কোর কমিটি’ নেই, যারা এমন জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক বসে করণীয় ঠিক করবে। সর্বশেষ ১৫ মে হরতাল ডাকা নিয়েও বিএনপির লেজে গোবরে অবস্থার সৃষ্টি করে।

সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে ওই দিন বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ মে হরতাল ডাকা হয়। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বল হয়, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ কারণে জোট নেত্রী খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ এর দুই দিন আগে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর দেশবাসী জানে।

গণমাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে এর গতিপথ ও সম্ভাব্য আঘাত হানা নিয়ে খবর প্রচার হচ্ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এটা প্রতীয়মান হয় যে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি রাজনৈতিক কার্যক্রমে কোনো প্রজ্ঞা বা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-পরিকল্পনার ছাপ রাখতে পারেনি। অবশ্য এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু সীমাবদ্ধাতা হয়তো আছে। তবে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞা বা বিচক্ষণতা দেখাতে পারেনি, এটা বলা যাবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এখন দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু সরকার কাউকে কেয়ার করছে না। তারা প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক। ’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিভ্রান্তি: বিএনপির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক চিন্তা কী, সেটাও পরিষ্কার নয়। আবার ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নীতি কী হবে? চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগের মতো তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে কি না? এ দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ নিয়ে পশ্চিমাদের উৎকণ্ঠা আছে।

এ ক্ষেত্রে আগামী দিনে বিএনপির ভূমিকা কী হবে? বিএনপি দাবি করে, তারাই জঙ্গিবাদ দমন এবং শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ শীর্ষ জঙ্গিনেতাদের গ্রেপ্তার ও বিচার সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার যেভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীকে দমন করেছে, সেটা নিয়ে বিএনপির মূল্যায়ন কী, এ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। বরং ৪ মের সমাবেশে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, দেশে কোনো জঙ্গি নেই। অতীতের মতো আবার এই যে অস্বীকার, সেটাও প্রশ্ন তৈরি করেছে। হেফাজতের ১৩ দফা বিএনপির সমর্থন করা নিয়েও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা নানা মহলে বুঝতে চাইছেন।

যদিও কোনো কোনো নেতা বলেছেন, তাঁরা ১৩ দফা নয়, আল্লাহ ও মহানবীর (সা.) অবমাননার বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। আবার ৭ মে গায়েবানা জানাজায় সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে হেফাজতকে ঢাকায় ডেকে ১৩ দফা বাস্তবায়ন করে খুশিমনে ফেরত পাঠাব। ’ বিএনপির অবস্থান কোনটা, তা পরিষ্কার নয়। খালেদা জিয়া গত বছরের অক্টোবরে ভারত সফর করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে চিরাচরিত ভারত বিরোধিতা থেকে সরে আসেন।

তখন বিএনপির নেতারাও বলেন, ভারত বিরোধিতা বলে কোনো অবস্থান তাঁদের নেই। ওই সফরে প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এর কয়েক মাস পর ঢাকায় আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। কিন্তু খালেদা জিয়া একপক্ষীয়ভাবে তাঁর সাক্ষাৎ বাতিল করলেন। এটাকে খালেদা জিয়ার ‘গুরুতর রাজনৈতিক বোকামি’ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

কারণ খালেদা জিয়ার সম্মতিতেই প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হয়েছিল। নেতৃত্ব সংকট: খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা নিয়েও আছে নানা শঙ্কা। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা-ও নির্ধারণ করা নেই। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পাঁচ বছর বেশি সময় ধরে লন্ডনে। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।

কবে দেশে ফিরবেন, তা কেউই জানে না। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদে কাউকে উপনেতা করতে পারেননি। এখন বিরোধী দলে গিয়েও সংসদ উপনেতা করতে পারেননি কাউকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, শুধু চেয়ারপারসন স্থায়ী কমিটির সভা ডাকতে পারেন। খালেদা জিয়া কোনো কারণে গ্রেপ্তার হলে (ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিত আছে) দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাও কেউ ডাকতে পারবেন না।

মাঠপর্যায়ে রয়েছে নেতৃত্বের সংকট ও বিভাজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে দলটি এ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আরেকটি বড় সংকট হলো, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ঠিক করার জন্য সময় আছে খুব কম। যা করার তা হয়তো চার-পাঁচ মাসের মধ্যে করতে হবে।

এ জন্য দুই পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে। যেটা বিএনপি ও সরকার কেউই দেখাচ্ছে না। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.