আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যানজটে আর্থিক ক্ষতি বৃত্তাকার রেলপথ ও নৌপথ তৈরি করুন

No more will my green sea go turn a deeper blue I could not foresee this thing happening to you

যানজটের আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের যদি মাথাব্যথা না থাকে তাহলে যানজট কখনোই নিরসন হবে না। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট নিরসনে কাজ করতে হবে। বৃত্তাকার রেলপথ ও নৌপথ তৈরি করতে পারলে যানজট সত্যিকার অর্থেই নিরসন হবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তিন প্রকৌশলীর গবেষণায় যানজটে আর্থিক ক্ষতি বিষয়ে ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যানজটের কারণে বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীদের বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

এর সঙ্গে পরিবেশ দূষণ, ব্যবসায়িক স্বার্থ সংক্রান্ত ক্ষতি এবং দুর্ঘটনা হিসাবে আনলে বছরে ক্ষতি দাঁড়ায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় ধরনের ক্ষতি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ক্ষতি এড়ানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। অথবা হতে পারে এই ক্ষতিটি দৃশ্যমান নয় বলে এটি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কারো মাথাব্যথা নেই। ১২ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার যে ক্ষতির কথা বলা হয়েছে তা আর্থিক ক্ষতি।

যানজটে আর্থিক ক্ষতির তুলনায় মানসিক ক্ষতির পরিমাণ নিতান্ত কম নয়। যানজটে পড়ে একজন মুমূর্ষু রোগী যদি মারা যান তাহলে সে ক্ষতি কখনোই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য নয়। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে যেতে না পেরে বসের বকুনি খাওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো উপস্থিত না হতে পারা, দূরপাল্লার বাস-ট্রেন-বিমান ধরতে না পারাসহ নানাবিধ কাজ যা যানজটের কারণে বিঘœ ঘটে, তা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য নয়। এরপর আছে পারিবারিক অশান্তি। স্বামী বা স্ত্রী হয়তো যানজটের কবলে পড়ে যানবাহনে বসে ঘামছেন বা ঝিমুচ্ছেন, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই একে অপরের ওপর অন্যরকম সন্দেহ পোষণ করছেন।

তারপর আসে মেজাজ খারাপের অবস্থা। অসহনীয় যানজটে পড়ে যাত্রী কন্ডাক্টর-ড্রাইভারের ওপর, ট্রাফিক পুলিশ হেলপারের ওপর, হেঁটে যাওয়া পথিক হকারের ওপর, রিকশাওয়ালা সিএনজি ড্রাইভারের ওপর অর্থাৎ রাস্তায় চলাচলকারী একজন আরেকজনের ওপর মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ করে তুলকালাম কা- বাধিয়ে ফেলছেন। যানজটের অনিবার্য ফলস্বরূপ একজন কর্মজীবী কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে পারেন না, বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন, সন্তানের দেখভাল ঠিকমতো করেন না। যানজটের আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে এসব ক্ষতি মিলে একজন মানুষকে প্রতিনিয়ত পর্যুদস্ত হতে হয়। অথচ স্থায়ীভাবে যানজট নিরসনে কেন যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

কিছুদিন পরপর একেকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তার সুবিধা-অসুবিধা না দেখেই ওই ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নতুন কিছু গ্রহণ করা হয়। ফলে যানজট যানজটের জায়গায় থাকে। মাস তিনেক আগে যানজট নিরসনে লেন অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের নিয়ম করা হয়। সত্যি কথা বলতে কী, ডিএমপির অনেক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে লেন ব্যবস্থাটি ছিল বৈজ্ঞানিক। কিছুদিন লেন মেনে যানবাহন চলাচল করায় ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে চলেও এসেছিল।

তারপর ধীরে ধীরে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। যানজট পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। জানা যায়, পুলিশের আগ্রহেই লেন ব্যবস্থা প্রবর্তন হয় আবার পুলিশের অনীহায় লেন ব্যবস্থার মৃত্যু ঘটে। পুলিশের অনীহা এজন্য যে, লেন সিস্টেমে যানবাহন চললে নাকি পুলিশ ট্রাকের কাছ থেকে টু-পাইস কামাতে পারে না। সে যাই হোক, যানজটের আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের যদি মাথাব্যথা না থাকে তাহলে যানজট কখনোই নিরসন হবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট নিরসনে কাজ করতে হবে। বৃত্তাকার রেলপথ ও নৌপথ তৈরি করতে পারলে যানজট সত্যিকার অর্থেই নিরসন হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।