আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যানজটে জানজট!

!!!

যানজটে জানজট! সকাল ছয়টা । গিন্নি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলেন-উফ্‌ সীট আজকেও দেরি হয়ে গেল। কর্তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার অফিসে যাওয়ার সরঞ্জাম রেডি করতে। কর্তাও ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনকার মতো টুথ ব্রাশ- পেস্ট, রেজার সব কিছু ব্যাগে নিয়ে বের হলেন-‘কৈ গো আমার জিনিসপত্র দাও, অফিসের দেরি হয়ে গেল’। গিনি এক হাতে বিশাল এক স্যুটকেস আর অন্যহাতে বিশ লিটারের একটি পানির ড্রাম ধরিয়ে দিলেন।

কি গো স্যুটকেসটি আজকে বেশি ভাড়ী মনে হচ্ছে! ‘না মানে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই নাস্তাটা তৈরি করতে পারিনি। স্যুটকেসের ভিতের একটি কেরোসিনের স্টপ আর সিদ্ধ আটা দিয়ে দিয়েছি তুমি রাস্তায় বসে নাস্তা বানিয়ে খেয়ে নিও! আর শোন নাস্তা খাওয়ার আগে অবশ্যই ড্রামের পানি দিয়ে গোসল করে নিবে, ঠিক আছে? ...সাজানো গল্পটি পড়ে হয়তো আমাকে সেমি পাগল ভাবলেও ভাবতে পারেন কিন্তু দিনদিন জ্যাম যে হারে বাড়ছে তাতে আর কিছুদিন পরে আপনি নিজেই যখন মহাখালী ফ্লাইওভারের উপর দাঁড়িয়ে গোসল করবেন সেদিন হয়তো আমাকে ভবিষ্যৎ বক্তাই বলবেন। আমাদের যতরঙ্গের অনুসন্ধান টিম ঠিক এমনই কিছু নমুনা খুঁজে বের করেছে। এর একটি হলো, মোবাইল টয়লেট। এটি একটি আধুনিক যান যা ঈদানীং রাস্তায় দেখা যায়! দীর্ঘ সময় জ্যামে থাকলে প্রকৃতি ডাকতেই পারে।

কিন্তু সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের সদয় দৃষ্টি না পড়লেও সাবেক কয়েক ভ্যান চালক নিজস্ব উদ্যোগে তাদের ভ্যানকে পরিণত করেছেন ভ্রাম্যমান টয়লেটে। এটি জনসেবার অনন্য বাহন হলেও এতে গমনকারীদের কাছে থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। যেখানে এক গ্লাস ফিল্টার পানি পান করতে লাগে মাত্র এক টাকা সেখানে ঐ সমপরিমাণ পানি বিসর্জন দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে পাঁচ টাকা। শুধু মোবাইল টয়লেটই নয় জ্যামের সুযোগে রাস্তার আশেপাশে খাবার থেকে শুরু করে শপিং সহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে। আর বেশিক্ষণ জ্যামে বসে থেকে যদি বিরক্ত হন তবে আশেপাশে তাকালেই দেখবেন গানের আসর বসেছে যা আপনাকে বিনোদন দিবে।

জ্যাম এখন আমাদের জীবনের সঙ্গী হলেও যতরঙ্গের বিশেষজ্ঞ টিম মনে করে সৃষ্ট যানজটই আমাদের জানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যতরঙ্গের গবেষণা টিম ঢাকা শহর ঘুরে যানজটের কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ ও এর সমাধান খুঁজে বের করেছে। কারণ-১: কর্তারা বাসায় ফিরতে দেরি করেন এজন্য তাদের ঘুমাতেও দেরি হয়। আর দেরিতে ঘুমান বলে ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়। আবার দেরিতে ঘুম থেকে উঠেন বলে অফিসে যেতেও দেরি হয়।

তাড়াহুড়ো করে অফিসে যেতে গিয়ে রাস্তায় জ্যাম বাধান। সমাধান: ঢাকা শহরের সব স্ত্রীদের উচিত কারফিউ জারি করা। রাত আটটার পরে যেমন সকল বিপনীবিতান বন্ধ হয়ে যায় তেমনি তারা রাত আটটার পরে ঘরের দড়জাও বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ-২: ঈদানীং রিকশা ও সিএনজি পাইলটদের লজ্জা পায়ে নিচে চলে এসেছে। কারণ রিকশা কিংবা সিএনজিতে কোন কপোতকপোতি উঠলেই ঐ সব পাইলটদের নজর থাকে পিছনের দিকে।

রিকশার জন্য লুকিং গ্লাস অপরিহার্য না হলেও ঈদানীং অনেক রিকশাতেই তা লক্ষ করা যাচ্ছে। আর সিএনজির পাইলটের সামনের আয়নাটির আকারও ঈদানীং বেশ বড় লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে গাড়ী চালানোর সময় এসব পাইলটদের চোখ থাকে আয়নার দিকে যার ফলে গাড়ি চলে এলোপাতারি। সমাধান: এর সমাধান হচ্ছে সমঝোতা। হয় রিকশা-সিএনজির পাইলটদের লজ্জা বাড়াতে হবে নয় কপোতকপোতিদের লজ্জা বাড়াতে হবে।

কিন্তু প্রেম ভালোবাসা লজ্জা দিয়ে ঢেকে রাখা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য লজ্জা না বাড়িয়ে পাইলট ও যাত্রীর মাঝামাঝি স্থানে হার্ডবোর্ডের পার্টিশন তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। কারণ-৩: সাধারণত ছোটদের স্কুলের সামনে বেশি জ্যাম লক্ষ করা যায়। বাচ্চাকে স্কুল থেকে নেওয়া-আনার ছুতোয় বাচ্চার মা-রা পুরোনো বন্ধুর সাথে রাস্তা মাঝখানে দাঁড়িয়েই চুটিয়ে আড্ডা মারেন। ইহা শুধু রাস্তাতেই যানজট ঘটায় না পাশাপাশি সংসারেও জটের সৃষ্টি করে।

সমাধান: সব স্ত্রীর ¯^vgx‡`i‡K কঠোর হস্তে এর সমাধান করতে হবে। ¯^vgxiv তাদের স্ত্রী নিয়ে নিয়মিত ঘরে আড্ডা মারবেন যাতে আর বাহিরে গিয়ে আড্ডা মারার প্রতি আগ্রহ না থাকে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। স্কুল ও এর আশে পাশে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ছেলেদের জন্য কারফিউ জারী করা যেতে পারে। কারণ-৪: বাসের পাইলটরা চান একজন আরেকজনের আগে যেতে।

এভাবে দাপাদাপি করতে গিয়ে তারা জ্যামের সৃষ্টি করেন। সমাধান: প্রত্যেক বাসের ইঞ্জিন খুলে তাতে বাইসাইকেলের মতো প্যাডেল সিস্টেম করে দেওয়া যেতে পারে। অথবা যে সব ড্রাইভার প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে গাড়ি চালায় তাদেরকে কিছুদিনের জন্য নৌকা চালনায় নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এতে করে ধীর গতি সম্পর্কে তাদের ধারণা জন্মাবে। কারণ-৫: আয় বেড়েছে তাই রাস্তায় গাড়িও বেড়েছে।

সমাধান: এখনও দেশের আকাশ পথ ফাঁকা। তাই সবাইকে প্লেন কিংবা হেলিকাপ্টার কেনায় উৎসাহিত করা যেতে পারে। যান থাকলে জট থাকবেই। তাই এই যানজট যাতে আমাদের জীবনে জানজটের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য জ্যামের সময় বিরক্ত না হয়ে বরং মেজাজ ঠান্ডা রাখুন। তা ছাড়া চিন্তা কি মোবাইল কোম্পানীগুলো তো ওয়ান টু ওয়ান সুবিধা দিচ্ছেই।

জ্যাম তো থাকবেই তাই বলে আপনার নেটওয়ার্কেও জ্যাম থাকবে নাকি? জ্যামে বসে মোবাইলে অফিসের সুমনা আপা কিংবা ডাক্তার ডালিয়ার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিন। মাছের আড়তদার, কাচা তরকারি বিক্রেতা, মিষ্টির দোকানদার আর রহমত চাচার সাথেও গড়ে তুলুন আপনার নেটওয়ার্ক। দৈনিক ডেস্টিনি; ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।