আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার জীববৈচিত্র্য: (উল্লুক পর্ব)

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
দেশের ১০ প্রজাতির বানরের মধ্যে ৮টিই কোনো না কোনোভাবে হুমকির সম্মুখীন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন উল্লুক। আকার, আকৃতি ও আচরণের কারণে সহজে দৃষ্টি কাড়ে গরিলা কিংবা শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লেজহীন এই উল্লুক। তবে আশঙ্কার বিষয়- উপযুক্ত আশ্রয় ও খাদ্যাভাবে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির তালিকায় থাকা উল্লুকের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। গত দুই দশকে এর সংখ্যা তিন হাজার থেকে কমে নেমে এসেছে ৩০০-এ।

পরিবেশ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে বিদ্যমান ১০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবের মধ্যে বেশিরভাগই হুমকির সম্মুখীন। দেশের প্রায় সোয়া ৯ শ' প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে দেড় শ' প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে। স্তন্যপায়ী, পাখি, উভচর ও সরীসৃপ প্রজাতির এসব বন্যপ্রাণীর বেশিরভাগ এখন অতিবিপন্ন, বিপন্ন ও তিগ্রস্তের তালিকায়। এছাড়া প্রায় আড়াই শ' প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সঠিক অবস্থান সম্পর্কে রয়েছে যথার্থ তথ্যপ্রমাণের অভাব। অন্য সব বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লুকের আকার, আকৃতি ও আচরণে বেশ উন্নত হওয়ায় সহজে মানুষের দৃষ্টি কাড়ে গোরিলা, শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লেজহীন এই উল্লুক।

সোজা হয়ে দাঁড়ালে উচ্চতায় তিন ফুটের মতো হয় উল্লুক। লম্বা হাত আর পায়ের সাহায্যে এক ডাল থেকে আরেক ডালে এমনকি এক গাছ থেকে আরেক গাছে দ্রুত চলাফেরা করতে পারে এরা। উল্লুক জোড়া বেঁধে থাকে। কখনো সঙ্গে বাচ্চাকাচ্চাও থাকে। উল্লুক দিবাচর, রাতে গাছের উঁচু ডালে ঘুমায়।

বিভিন্ন ধরনের ফল ও ডুমুর খায়, তবে কচিপাতা, ফুল, পোকামাকড়ও এদের অনেক প্রিয়। তবে পাখির বাচ্চা আর ডিমও খেতেও দেখা যায়। সকালের দিকে হা-হু শব্দ করে দলগত অবস্থান জানান দেয় এরা। বাচ্চা দেয় দুই তিন বছর পরপর। শীত ঋতুতে।

বাচ্চা উল্লুকের রঙ দুধের মতো সাদা। ছয় মাসের মধ্যেই রঙ বদলে হয়ে যায় কালো। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে (৬/৭ বছর) পুরুষ কালোই থেকে যায়। আর স্ত্রী উল্লুক হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই দীর্ঘদিন টিকে থাকার মতো যথেষ্ট সংখ্যায় উল্লুক নেই।

এদের প্রায় সবগুলোই খণ্ড খণ্ড বনাঞ্চলে ছোট ছোট দলে বসবাস করছে। সারাবিশ্বেই উল্লুক একটি বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে এ প্রাণীটি এখন অতি বিপন্নের তালিকায়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশে উল্লুকের সঠিক সংখ্যা নিয়ে কোনো জরিপ না হলেও এদের সংখ্যা বর্তমানে দুইশ থেকে তিনশ' বলে দাবি করা হয়। খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য উল্লুক সম্পূর্ণভাবে বৃরে উপর নিভশীল।

উল্লুক যে বনভূমিতে বাস করে তার কোনো অংশ বৃহীন হয়ে পড়লেই এদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশেরর উত্তর-পূর্ব (বৃহত্তর সিলেট) ও দণি-পূর্ব (চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম) এলাকার বন ছাড়াও ভারত (উত্তর-পূর্বাংশ), মিয়ানমার (পশ্চিমাংশ) এবং চীনে উল্লুক দেখা যায়। উল্লুকউল্লুক দেখতে চাইলে যেতে হবে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া। বনটা বেশি বড় নয়। সে তুলনায় উল্লুকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

আর একবার ডাকাডাকি শুরু করলে বনের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন টের না পেয়ে উপায় নেই। একটা উল্লুক হু-হা হু-হা করে ডাক দিলে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরো কয়েকটা। এদের ডাকই ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে গোটা বনে ছড়িয়ে পড়ে মনে হয় কয়েক শ উল্লুক জড়ো হয়েছে। এছাড়া সিলেটের বড়লেখা, লাঠিটিলা, সাগরনাল, গাজীপুর টি স্টেট, চাউতলি, আদমপুর, হরিণছড়া, রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের দিঘিনালা, বাঘাইছড়ি (সাজেক, শিজক), পাবলাখালী অভয়ারণ্য, করেরখাট, হাজারিখিল অভয়ারণ্য, বাইশারি, ব্যাঙডোবা, কর্ণফুলী, রামপাহাড় (কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান), রামু, থানচি, সাতঘর, ফাসিয়াখালী, দোপাছড়ি, সাঙ্গু, আলিকদম, রাজঘাট, ভোমারিয়াঘোনা, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, ইনানি, উখিয়া (থানখালি), টেকনাফ ও আপার রিজু এলাকায় উল্লুক দেখা যায়।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.