আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন আজমান আন্দালিব এবং একদল প্রান্তিক মানুষের স্বপ্ন

জগৎ সংসারে কত ক্ষয় হলো সুগন্ধি সাবান। ঘ্রান তো মিলিয়ে গেলো নিমিষেই। bbl_bu@yahoo.com

একটা স্কুল। একদল স্বপ্নহীন মানুষের দাঁড়াবার জায়গা কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক টুকরো পৃথিবী গড়ে দেবার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন একজন মানুষ। তিনি আজমান আন্দালিব ।

নিজে দীর্ঘ দিন শিক্ষা বিভাগে কাজ করে বুঝতে পেরেছেন শিক্ষার মর্মার্থ এবং তিনি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পান। তাই নিজের উদ্যোগে তিনি একদল স্বপ্নহীন প্রান্তিক মানুষের জন্য করে ফেলেন একটা স্কুল। নাম "মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন। " কিন্তু সেটা করে তো বসে থাকলে হবে না, তার জন্য পুঁজি লাগে, জায়গা লাগে এবং লাগে আরো নানা রকম সরঞ্জামাদি। তিনি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন স্কুলটি নিয়ে।

অনেক প্রতিবন্ধকতা পায়ে মাড়িয়ে তাকে যেতে হচ্ছে প্রতিদিন। মেঘনা পাড়ে যারা নৌকায় জীবন যাপন করে তার সংখ্যা কম নয় মোটেও। তিনি বেছে নিলেন এরকম একটা এলাকা যারা কোনদিন স্কুলে যেতে পারেনি আর শিক্ষা তো দূরের কথা। নৌকায় বসবাসকারী একদল মানুষকে তিনি তুলে আনলেন ডাঙ্গায়। তাদের বাচ্চাদের জন্য গড়ে তুললেন মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন।

যার বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ১৪০ জন। জায়গার অভাবে আরো অনেক ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে নেয়া যাচ্ছে না। কারণ এক রুমের একটা ঘরে গাদাগাদি করে চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং মাটির মধ্যে চটেতে বসা একদল শিক্ষার্থীর এমনিতেই জায়গা হয় না। তার উপর আবার নতুন ছাত্রছাত্রী নেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেও যদি ঠিকমত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত না করা যায় সেই লজ্জাও কম নয় আমাদের।

২০০৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে তিনি একাই হাল ধরে আছেন কারণ আর কেউ এগিয়ে আসেনি তার সাথে। অনেকেই তাকে আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত তিনি একাই টেনে নিচ্ছেন স্কুল তথা একদল প্রান্তিক মানুষের স্বপ্নকে। জানি না কত দিন তিনি আর টেনে যেতে পারবেন। তবে তিনি হাল ছেড়ে দেননি , ধৈর্য্য ধরে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোতে অনেকেই হয়তো আনন্দ পান। স্কুলে যারা পড়ে তারা সবাই নদী ভাঙ্গনের শিকারে ভিটে-মাটি হারা মানুষদের সন্তান, যাদের পেশা মাছ ধরা এবং কয়েক পুরুষ ধরে ওরা তাই করে আসছে।

কিন্তু ওদের চোখের দিকে তাকালে যে কোন বিবেকবান মানুষের অন্তর একবার হলেও কেঁদে উঠবে। আমরা নিজেকে বলি যে আধুনিক মানুষ অথচ আমাদের দেশে এরকম হাজারটা মেঘনার চর রয়েছে এবং যারা কোনদিনও নিজেদেরকে এবং তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার সুযোগ পায়নি। আমরা ডিজিটাল যুগে আছি। আমাদের মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়গণ স্বগর্বে বলে থাকেন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের মানুষ, অথচ আমাদের দেশে হাজার হাজার জনপদ এখনো অন্ধকারের গুহায় পরে আছে, যারা তিন চার পুরুষ থেকে শিক্ষা বঞ্চিত। আর কে না জানে শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি তথা একটা দেশ কোনদিনও আগাতে পারে না।

সেক্ষেত্রে আমরা তো আরো পিছিয়ে আছি, কারণ আমাদের বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষই এখনো শিক্ষার পুরো ব্যাপারটা থেকেই বঞ্চিত। আমাদের সরকার কতটা দূরদর্শী ! শিক্ষা ছাড়াই ডিজিটাল বাংলাদেশ বানাচ্ছেন ! মেঘনাপাড় মজু চৌধুরীহাটে অবস্থিত "মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন" একটা জনপদের স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ করুক এই কামনা আমাদের সকলের। আমি নিজে ওখানে আজমান ভাইয়ের সাথে গিয়ে দেখেছি কি অমানুষিক জীবন যাপন ওরা করছে। আশেপাশে দুই কিলোমিটারের মধ্য কোন স্কুল নেই। কোন সভ্য দেশে এরকম একটা জনপদ আছে, এরকম মানুষের জীবন যাপন আছে, নিজ চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করাই যাবে না।

হায়রে বাংলাদেশ, তুমি বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে আছো আজকে চল্লিশ বছর ধরে অথচ তোমার নাগরিক এখনো বুঝে না স্বাধীনতা মানে কি। নিজের দেশ মানে কি। মৌলিক চাহিদা মানে কি। ভৌগলিক সীমারেখা কিংবা সার্বভৌমত্ব কি। সারা বাংলাদেশে এরকম হাজার হাজার মেঘনার চর আছে।

আমাদের সরকারের উচিৎ এইসব জায়গায় সাধারণ মানুষের জীবন মানকে উন্নতির দিকে নিয়ে আসা। মানুষের শিক্ষা তথা সকল মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করা। তা না হলে কিন্তু সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং বিশ্বের দরবারে নিজেদের আধুনিকতার লেবাস খুলে যাবে অচিরেই। মানুষ এখন অনেক বেশী সচেতন। বিশেষ করে মিডিয়া।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এরকম যে একটা ছাত্র বা ছাত্রীকে শুধু স্কুলমূখী করে দিলেই কিন্তু তার শিক্ষা শেষ হয়না। কারণ আমাদের মত একটা গরীব দেশে যেখানে প্রাথমিক শিক্ষাটুকু সরকার দয়া করে দিলেও, তারপর থেকে নিজেই বহন করতে হয় শিক্ষার পুরো খরচ। আজমান আন্দালিব ভাই অনেকদিন গবেষণা করে বের করেছেন কর্মমুখী শিক্ষার নানা দিক। তিনি নিজে মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতনের ছেলেমেয়েদের মাশরুম চাষের সাথে জড়িয়ে আয় করারও একটা পথ বের করে দেবার চেষ্টা করছেন। যাতে করে ওদের অভিভাবকরা খুব সহজে হতাশ না হয়।

যাতে তারা বুঝতে পারেন শিক্ষার মাধ্যমেই এবং শিক্ষারত অবস্থায়ও আয় করে নিজের তথা পরিবারের দ্বায়িত্ব নেয়া যায়। যে কারণে তারা আরো বেশী মাত্রায় উৎসাহিত হবেন পড়ালেখার বিষয়ে। আজমান আন্দালিবরা কেবল স্বপ্ন দেখলে হবে না। তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই। আজমান আন্দালিবদের পৃষ্টপোষকতা এবং সর্বোপরি পুরো জাতিকে শিক্ষিত করার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে যেতে হবে সরকার তথা পুরো জাতিকে।

মেঘনাপার ধীবর বিদ্যানিকেতন হোক মেঘনার চরের মানুষের স্বপ্নের তীর্থস্থান। এই কামনা আমাদের। যে কোন মতামতের জন্য আজমান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে--০১৭২৭২৬২১৯৫।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.